টাঙ্গাইল পৌরসভার অনিয়ম
করোনাকালে কেনা স্বাস্থ্য সামগ্রী কোথায়!
রেজাউল করিম
প্রকাশ: ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮:১৫
টাঙ্গাইল আদালত পাড়ার রিক্তিয়া আক্তার। টাঙ্গাইল টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। কয়েক বছর ধরেই রক্তস্বল্পতা ও শ্বাসকষ্টে ভুগছেন। ঠান্ডায় তার শ্বাস নিতে কষ্ট হলে অক্সিজেন নিতে হয়। আবার নিয়মিত রক্তও নিতে হয়। কলেজেই কয়েক দিন পরপর অসুস্থ হয়ে পড়েন। অনেক সময় জরুরি মুহূর্তে হাসপাতালে অক্সিজেন সিলিন্ডার পাওয়া যেত না। তাই রিক্তিয়ার বাবা অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনে নিয়েছেন। প্রয়োজন মতো বাড়িতে বসেই দিতে পারেন অক্সিজেন। রিক্তিয়ার পরিবার জানে না তাদের পৌরসভায় অক্সিজেন সিলিন্ডারের সেবা বিনামূল্যে পাওয়া যায়। পৌরসভার কয়জন নাগরিক জানেন এই সেবার বিষয়ে?
করোনার সময় দেশের স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে সেবা পেতে হিমশিম খেতে হয়েছিল সবার। ওই সংকট মুহূর্তে অনেক সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও স্বেচ্ছাসেবক প্রতিষ্ঠান প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় এগিয়ে এসেছিল। ওই সময় অক্সিজেন সিলিন্ডার পাওয়া দুষ্কর ছিল।
টাঙ্গাইল পৌর কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্যসামগ্রী কেনার আওতায় অক্সিজেন সিলিন্ডার কেনা শুরু করে। এরপর প্রতি অর্থবছরেই স্বাস্থ্যসামগ্রী কেনে পৌরসভার স্বাস্থ্য শাখা। পৌরসভার সমাজ উন্নয়ন কর্মকর্তার অধীনে স্বাস্থ্যসামগ্রী কেনা হচ্ছে।
বাংলাদেশের খবরের অনুসন্ধানে জানা গেছে, ক্রয় সংক্রান্ত নথিপত্রে অক্সিজেন সিলিন্ডার কেনার বিলও উঠানো হয়েছে। তবে পৌরসভায় সেসব অক্সিজেন সিলিন্ডারের দেখা মেলেনি। এমনকি পৌর নাগরিকরাও এসব সেবার কথা জানেন না। ফলে পৌরবাসীর জন্য কেনা ৩ লাখ ৭ হাজার টাকার অক্সিজেন সিলিন্ডার কোনো কাজেই আসেনি।
করোনার সময় পৌরবাসীর জরুরি সেবা দেওয়ার জন্য এসআর এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ১৭টি অক্সিজেন সিলিন্ডার কেনা হয়েছিল। বাজার মূল্যের চেয়ে প্রায় দুই গুণ বেশি দামে এসব সিলিন্ডার কেনা হয়। কিন্তু এই মুহূর্তে পৌর কর্তৃপক্ষ একটি ছাড়া বাকি ১৬টি সিলিন্ডারের হদিস জানে না। তথ্য দিতে পারেননি দায়িত্বে থাকা সমাজ উন্নয়ন কর্মকর্তা সুভাশীষ চন্দ্র দাস।
সরেজমিনে টাঙ্গাইল পৌরসভার স্বাস্থ্য শাখায় গিয়ে দেখা গেছে, একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার ছাড়া বাকিগুলো নেই। পৌরসভার স্বাস্থ্য শাখার সুপারভাইজার নাজমুল হাসান তন্ময়, সাবিনা সমাপ্তিসহ কয়েকজন মাঠকর্মীর সাথে অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে কথা হয়েছে। তারা জানান, ইপিআই কক্ষে একটি সিলিন্ডার পড়ে আছে বহুদিন ধরে। সেটার কোনো ব্যবহার হয়নি। কয়টা সিলিন্ডার কেনা হয়েছে বা কি কাজে ব্যবহার হবে সেই সম্পর্কে কোনো ধারণা স্বাস্থ্যকর্মীদের দেওয়া হয়নি।
সমাজ উন্নয়ন কর্মকর্তা সুভাশীষ চন্দ্র দাসের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে পৌরসভার কেউ বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
তবে নাম-পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক পৌরসভার দুইজন কর্মকর্তা বলেন, ‘সাবেক পৌরসভার মেয়র এসএম সিরাজুল হক আলমগীরের নির্দেশনায় ওষুধ বা স্বাস্থ্যসামগ্রী কেনার জন্য সমাজ উন্নয়ন কর্মকর্তা সুভাশীষ চন্দ্র দাসকে স্বাস্থ্য শাখার দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর থেকে সুভাশীষ সরাসরি কেনাকাটার বিষয়ে এককভাবে মেয়রের সাথে কথা বলে মালামাল ক্রয় দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ করেছেন। শুধু অক্সিজেন সিলিন্ডারের টাকা আত্মসাৎ করেননি, এর সাথে অনেক ধরনের স্বাস্থ্যসামগ্রী বাড়তি দামে কিনে সেই টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।’
টাঙ্গাইল পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, সমাজ উন্নয়ন কর্মকর্তা সুভাশীষ চন্দ্র দাস প্রথমে বস্তি উন্নয়ন কর্মকর্তা হিসেবে পৌরসভায় যোগদান করেন। পরে পৌরসভার সাবেক মেয়র এসএম সিরাজুল হক আলমগীরের আস্থাভাজন হয়ে উঠেন তিনি। এরপর তাকে ওই পদ থেকে সমাজ উন্নয়ন কর্মকর্তা হিসেবে পদায়ন করা হয়। এরসাথে স্বাস্থ্য শাখার দায়িত্ব দেন মেয়র। তখন থেকেই স্বাস্থ্য শাখার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে করোনাকালীন স্বাস্থ্য সামগ্রী কেনাকাটায় অনিয়ম শুরু করেন তিনি।
তথ্য মতে, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এসআর এন্টারপ্রাইজের লাইসেন্স ব্যবহার করে অক্সিজেন সিলিন্ডার ক্রয় করেন সমাজ উন্নয়ন কর্মকর্তা সুভাশীষ চন্দ্র দাস। এর বিনিময়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নামমাত্র টাকা দিতে হয় লাইসেন্স ব্যবহারের জন্য। ওই প্রতিষ্ঠানের বিল-ভাউচার দেখিয়ে ২০২১-২০২২ অর্থবছরে তিন ধাপে ১৭টি অক্সিজেন সিলিন্ডার কেনা হয়। যার প্রত্যেকটির দাম ধরা হয়েছিল ১৮ হাজার টাকা। এতে ১৭টি সিলিন্ডারের জন্য বিল উঠানো হয় ৩ লাখ ৭ হাজার টাকা। প্রিমিয়াম ব্যাংকের মাধ্যমে কেনাকাটার চেক উত্তোলন করা হয়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, করোনার সময় টাঙ্গাইল পৌরবাসীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ২০২১-২০২২ অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকে ১৭টি অক্সিজেন সিলিন্ডার কেনা হয়। বেসরকারি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এসআর এন্টারপ্রাইজকে এর দায়িত্ব দেওয়া হয়। ওই প্রতিষ্ঠান ২০২১ সালের আগস্ট ও নভেম্বর এবং ২০২২ সালের মার্চ ও আগস্ট মাসে মোট ১৭টি অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ করে।
সিলিন্ডারের দাম যাচাইয়ের জন্য শহরের মানসম্মত একটি মেডিকেল সার্ভিসেস প্রতিষ্ঠান যোগাযোগ করা হয়। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, ভালো মানের একটি অক্সিজেন সিলিন্ডারের দাম সর্বোচ্চ ৬ হাজার ৮০০ টাকা। এর সাথে বাড়তি সিলিন্ডার ক্যাপ ও ট্রলি যুক্ত করলে দাম পড়বে ৮ হাজার ৮০০ টাকা। কিন্তু, পৌরসভার কেনা প্রতিটি সিলিন্ডার ৯ হাজার ২০০ টাকার বেশি দামে কেনা হয়েছে।
স্বাস্থ্য সামগ্রী বিলের সাথে ওয়ানটাইম মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সাবান, থার্মাল স্ক্যানার, মশক নিধন ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, ফগার মেশিনের ডেসিস, স্প্রে মেশিন কেনা হয়েছে বাজার মূল্যের বেশি দামে। এসব পণ্যের বাজার দরও যাচাই করা হয়েছে।
সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২০২৩ সালের ২১ আগস্ট এক লাখ ৯৮ হাজার টাকা ও ২০২৪ সালের ২৭ জুন ৩ লাখ ২৪ হাজার ৯০০ টাকা কোনো স্মারক না দেখিয়ে ডেঙ্গু নিধনের প্রকল্পের নামে ভুয়া বিল-ভাউচারে টাকা উঠানো হয়। সর্বশেষ ওই অর্থ বছরের ১৬ জুন তৃতীয় কিস্তির ৩ লাখ ১৪ হাজার ও একই মাসে চতুর্থ কিস্তির ৩ লাখ ৬২ হাজার টাকা প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা সহায়তা বিল উঠানো হয়।
টাঙ্গাইল পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় করোনার সময় অনেক ছোট-বড় সংগঠন গড়ে উঠেছিল। তারা রোগীদের জন্য ব্যক্তিগত টাকায় কেনা অক্সিজেন সিলিন্ডার বিনামূল্যে সরবরাহ করেছেন। পৌরসভার বাজিতপুর এলাকার রাসেল, হৃদয় ও মিলনসহ কয়েকজন বন্ধু দুইটা অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনে করোনার সময় রোগীদের সেবা দিয়েছেন। এছাড়া বড় পরিসরে ‘শ্বাস’ নামের একটি সেচ্ছাসেবী সংগঠন করোনার সময় থেকে এখন পর্যন্ত দুরারোগ্য রোগীদের অক্সিজেন সিলিন্ডারসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে পৌরসভায় স্বাস্থ্যসামগ্রী সরবরাহকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এসআর এন্টারপ্রাইজ প্রতিষ্ঠানের দেওয়া ঠিকানা টাঙ্গাইল সদর উপজেলার এনায়েতপুরে গিয়ে তাদের কোনো অফিস বা কার্যালয় পাওয়া যায়নি। পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এসআর এন্টারপ্রাইজ স্থানীয় কাউন্সিলর রুবেলের কার্যালয় ব্যবহার করত। ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কোনো হদিস পাওয়া যায়নি।
পৌরসভার স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কে এই প্রতিবেদক টাঙ্গাইল পৌরসভার এনায়েতপুর, বৈল্ল্যা, সাবালিয়া, কাইয়ামারা, বাজিতপুর, আদি টাঙ্গাইল, আকুর-টাকুরপাড়া, বিশ্বাস বেতকা, আশিকপুর, আদালতপাড়া, থানাপাড়া, কলেজপাড়া এলাকায় গিয়ে সেখানকার মানুষজনের সাথে কথা বলেছেন। তারা কেউ এ ধরনের সেবার কথা জানেন না।
তারা জানান, পৌরসভা থেকে করোনার সময় জনপ্রতিনিধিরা শুধু সার্জিক্যাল মাক্স বিতরণ করেছেন। এর বাইরে কোনো সেবা তারা পাননি। এছাড়া ইপিআই কার্যক্রমের মধ্যে শিশুদের টিকাদান ছাড়া কিছুই জানেন না তারা।
টাঙ্গাইল পৌরসভার আদালতপাড়ার রিক্তিয়া আক্তার বলেন, আমি যে রোগে আক্রান্ত সেটার চিকিৎসা অনেক ব্যয়বহুল। তারপরও পরিবার থেকে চিকিৎসা করাচ্ছে। বিশেষ মুহূর্তে অক্সিজেনের প্রয়োজন পড়ে কিন্তু তাৎক্ষণিকভাবে অনেক সময় হাসপাতালে সেটা পাওয়া যায় না। যার কারণে অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনে বাড়িতেই রাখা হয়েছে। পৌরসভায় যদি এই ধরনের সেবা থাকতো তাহলে অনেকটা সুবিধা হতো, ব্যয় কম হতো। নাগরিকদের জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডার কেনা হয়েছে বিনামূল্যে সেবা দেওয়ার জন্য অথচ কেউ জানে না।
বিশ্বাস বেতকার পাওয়ার হাউজ এলাকার ওবায়দুল্লার মেয়ে ও ঘাটাইল জিবিজি কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী আনিকা রহমান বলেন, শ্বাসকষ্ট রোগের জন্য মাঝেমধ্যেই অক্সিজেন বা নেবুলাইজার নিতে হয়। একদিন রাত ২টার দিকে তীব্র শ্বাসকষ্টের কারণে হাসপাতালে নিয়েছিল পরিবার থেকে। সে সময় হাসপাতালেও অক্সিজেন পাইনি। কী একটা রাত কাটিয়েছি বলার ভাষা নেই। পৌরসভায় এমন সুযোগ-সুবিধা থাকার পরেও আমরা সেটা জানি না। হয়ত তারা সেই টাকায় অক্সিজেন না কিনে আত্মসাৎ করেছেন।
টাঙ্গাইল পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সরকারি হাসপাতালগুলোতে স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া যায় জানি। তবে পৌরসভায় যে নাগরিকদের জন্য বিভিন্ন স্বাস্থ্যসামগ্রী দেওয়া হয় তা তারা জানি না।
প্রতিবেদকের প্রশ্নে হতবাক হয়েছেন অনেকেই। জরুরি সেবার জন্য যে অক্সিজেন সিলিন্ডার কেনা হয়েছে পৌরবাসীর জন্য সেটা জানেন না তারা। তবে করোনার সময় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে সাবান ও মাক্স পেয়েছিলেন স্থানীয়রা।
পৌরসভার সাবালিয়া এলাকার দরিদ্র দিপালী রাণী অন্যের বাসায় কাজ করে সংসার চালান। অসুস্থ হলেই দৌড়াতে হয় হাসপাতালে। তিনিও পৌরসভা থেকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার পাওয়ার বিষয়টি জানেন না।
এনায়েতপুর এলাকার মুদি দোকানি ফরহাদ আলী বলেন, পৌরসভায় এসব সেবা রয়েছে সেটা আমিসহ এলাকার কেউ জানেন না। কোনোদিন এই সেবা কেউ পেয়েছেন বলে জানা নেই। একই কথা জানালেন অটোরিকশা চালক মনির হোসেনও।
সেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘শ্বাস’ এর সমন্বয়কারী সাম্য রহমান বলেন, ‘শ্বাসকষ্ট বা জরুরি রোগীদের জন্য পৌরসভায় অক্সিজেন সিলিন্ডার সেবা রয়েছে সেটা জানা ছিল না। এই প্রথম জানতে পারলাম। করোনাকালীন অনেক মানুষজনের অক্সিজেনের প্রয়োজন ছিল খুবই। করোনার সময়ে সংগঠন থেকে পৌরসভার বহু মানুষকে সেবা দিয়েছি বিনামূল্যে। এখনও এই সেবা চলমান রয়েছে। এখনও অনেক মানুষের প্রয়োজন পড়ে। আমরাই যেহেতু এই সেবার বিষয়টি জানি না সেক্ষেত্রে অবশ্যই এটা দুর্নীতি হয়েছে। এতে তারা স্বাস্থ্যসেবার নামে টাকা আত্মসাৎ করছেন।’
এদিকে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এসআর এন্টারপ্রাইজের প্রোপ্রাইটর সেলিম হোসেন আত্মগোপনে রয়েছেন। অপরিচিত কারোর ফোনও রিসিভ করছেন না তিনি। এ বিষয়ে তার বক্তব্য জানতে একাধিকবার মোবাইলে যোগাযোগ করলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে মোবাইলে এসএমএস দিয়েও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
টাঙ্গাইল পৌরসভার মশক নিধন কর্মী কুরান আলী বলেন, ‘পৌরসভায় কখনো কোনো অক্সিজেন সিলিন্ডার দেখিনি। কেনা হয়ে থাকলে সেটার বিষয়টি সুভাশীষ স্যারই বলতে পারবেন।’
পৌরসভার যান্ত্রিক শাখার বৈদ্যুতিক হেলপার রোকন আলী বলেন, ‘পৌরসভায় ২৫ বছর ধরে কাজ করছি। এই সময়ে কোনো অক্সিজেন সিলিন্ডার নেই। এটা হাসপাতাল ছাড়া থাকে না। স্বাস্থ্য শাখায় শুধু টিকাদান ছাড়া কোনো স্বাস্থ্যসেবা জিনিসপত্র পাওয়া যায় না। এছাড়া করোনার সময় সার্জিক্যাল মাস্ক, মশার স্প্রে, সাবান কিনেছিল। তা ছাড়া স্বাস্থ্যসেবার কোনো জিনিস নেই।’
এ বিষয়ে অভিযুক্ত সমাজ উন্নয়ন কর্মকর্তা সুভাশীষ চন্দ্র দাস বলেন, ‘বিভিন্ন সময়ে অক্সিজেন সিলিন্ডার কেনার টাকা উত্তোলন করা হয়েছিল ঠিকই। তবে একটি সিলিন্ডার ব্যতীত কোনো সিলিন্ডার নেই পৌরসভায়। সিলিন্ডারের টাকায় ওষুধ কেনা হয়েছে।’
অক্সিজেন সিলিন্ডারের টাকায় ওষুধ কেনা যায় কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এটা করা যায় না। করার নিয়মও নেই। সাবেক পৌরসভার মেয়রের নির্দেশনায় এমনটি হয়েছিল।’
উত্তোলন করা বিলে টাঙ্গাইল পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা শাহওনেয়াজ পারভীনের স্বাক্ষর ও সিল থাকলেও তিনি এসব বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
তবে তিনি বলেন, ‘কেনাকাটার ফাইলে মেয়রের স্বাক্ষর থাকলে সেখানে আমাকেও স্বাক্ষর দিতে হয়। ওই টাকায় কি কেনা হয়েছিল বা কী কী কেনা হবে এসব বিষয়ে জানি না। সুভাশীষ সরাসরি মেয়রের সাথে কথা বলে ফাইল রেডি করে পাঠাতেন। সেখানে মেয়র ও হিসাবরক্ষকের স্বাক্ষর থাকতো। ফলে সেটাতে অনেক সময় বাধ্য হয়ে স্বাক্ষর দিতে হয়েছে।’
টাঙ্গাইল পৌরসভার প্রশাসক ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের জেলার উপ-পরিচালক (ডিডিএলজি) শিহাব রায়হান বলেন, ‘৫ আগস্টের পর সরকার আমাকে পৌরসভায় প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছে। পূর্বের কোনো অনিয়ম বা দুর্নীতি হয়ে থাকলে সেটা আমার জানা নেই। আর স্বাস্থ্যসেবার বিষয়ে আমি জেনে বলতে পারবো। যদি সমাজ উন্নয়ন কর্মকর্তা এমন অনিয়মের সাথে জড়িত থাকেন তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এমএইচএস/ওএফ