শেখ হাসিনা ইসলামের নাম মুছে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল : জামায়াত সেক্রেটারি

ফেনী প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯:১২
-678bb81f18a1d.jpg)
পুরনো ছবি
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, জুলাই-আগস্টের সকল হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড ছিলেন ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা। এর আগে আমাদের প্রিয় ৫ জন নেতাকে অন্যায়ভাবে ফাঁসি দিয়েছিল। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা তার পিতার মীমাংসা করা বিষয়গুলোকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেশে বিভেদ সৃষ্টি ও ইসলামের নাম মুছে দেওয়ার চেষ্টায় মেতেছিল।
শনিবার (১৮ জানুয়ারি) দুপুরে ফেনী জেলা জামায়াতে ইসলামীর ১ হাজার ৭০০টি ইউনিটের সভাপতি সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, আল্লাহর আরশ কেঁপে উঠলেও খুনি হাসিনার হৃদয় একটুও কাঁপেনি। বিগত ১৭ বছর ধরে দেশব্যাপী হামলা-মামলা, গুম-খুন, ক্রসফায়ারসহ স্বৈরাচারী হাসিনার নির্দেশে আওয়ামী ক্যাডার বাহিনীর নির্যাতনে মানুষের কষ্টের শেষ ছিল না। এখনও যারা ওই ফ্যাসিবাদের পথ অনুসরণ করতে চাইবে, তাদেরকেও পতিত স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা ও দলের পরিণতি স্মরণ রাখতে হবে।
এ সময় জামায়াত নেতা অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার আরও বলেন, শেখ হাসিনা বিনা ভোটে ক্ষমতায় থাকার জন্য, দেশ থেকে ইসলামের নাম মুছে দেওয়ার জন্য আমাদের সকল আন্দোলন সংগ্রামকে তছনছ করে দিয়েছিল। সারাদেশে সকল অফিস বন্ধ করে দিয়েছিল। আমাদের লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মীকে গুম-খুন ও কারাগারে আটক করেছিল।
সবশেষে আমাদের দলটিও নিষিদ্ধ করে দিয়েছিল। কিন্তু ৪-৫ দিনের মাঝে মহান রব গত ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে জামায়াতে ইসলামীসহ দেশবাসীকে কত বড় নেয়ামত দান করেছেন। সেই স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে গণভবন থেকে বের করে তার সরকারের লুটপাটকারী এমপি-মন্ত্রী ও দলীয় নেতাদের দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছিলেন। এখন তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এর দ্বারা এটাই প্রমাণ করে ফ্যাসিবাদের পথে গিয়ে কেউ টিকে থাকতে পারে না।
এ নেয়ামতের শুকরিয়া হিসেবে মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের ওপর যে দায়িত্ব দিয়েছেন, সে দায়িত্ব পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পালন করতে হবে। ঘরে ঘরে গিয়ে প্রতিটি মানুষের কাছে কোরআনের দাওয়াত পৌঁছে দিতে হবে। না হলে, আমাদের সকলকে আল্লাহর নিকট জবাবদিহি করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশকে ইসলামের আলোকে একটি কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়। এর মাধ্যমে আমরা দেশের প্রতিটি মানুষের কাছে কোরআনের সুশাসন পৌঁছে দিতে চাই। এ কল্যাণ রাষ্ট্র কায়েমে আমরা কোনো বাধা মানবো না।
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে দুটি ষড়যন্ত্র হয়েছিল। একটি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে। আর অপরটি জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে। শেখ হাসিনা তার পিতার মীমাংসা করা বিষয়গুলোকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেশে বিভেদ সৃষ্টি ও ইসলামের নাম মুছে দেওয়ার চেষ্টায় মেতেছিল।
আওয়ামী লীগ জামায়াতকে নিয়ে যে ভাষায় কথা বলেছিল, এখনও কেউ কেউ হাসিনার মতো কথা বলার চেষ্টা করছে। যারা জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করে ফায়দা লুটতে চাইছে, তাদের উদ্দেশ্যে বলবো, ধর্ম ব্যবসায়ীরা আমরা নই, বরং আমরা ধর্ম পালন করি। শুধু নিজেরা নয়, সারা বছর নামাজ, রোজাসহ ধর্মের ভিত্তিতে দেশের সকল মানুষকে সঙ্গে নিয়ে জীবন গড়তে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।
ফেনীর ঐতিহ্যবাহী আল জামিয়াতুল ফালাহিয়া কামিল মাদ্রাসা মাঠে অনুষ্ঠিত উক্ত সভাপতি সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন দলটির কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ.টি.এম মাসুম, কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা ও অঞ্চল টিম সদস্য অধ্যাপক লিয়াকত আলী ভূঁইয়া ও ফেনী জেলার সাবেক আমির এ.কে.এম শামসুদ্দিন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ.টি.এম মাসুম বলেন, স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ এদেশে জীবন্ত মানুষকে পিটিয়ে হত্যার পর লাশের উপর নৃত্য করেছিল। এর মধ্য দিয়ে তারা আইয়ামে জাহেলিয়াতকেও হার মানিয়েছিল।
১৯৪৬ সালে মাত্র ৭৫ জন মিলে জামায়াতে ইসলামীর দল হিসেবে গঠন করেছিলেন। এখন কোটি কোটি মানুষ জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গী হয়ে আল্লাহর জমিনে আল্লাহর আইন বাস্তবায়নে দিন-রাত কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। আগামী দিনগুলোতেও জামায়াতের প্রতিটি ইউনিটের সকল সদস্যকে কোরআন ও নবীজির জীবনী থেকে শিক্ষা নিয়ে দেশের প্রত্যেক মানুষের দোরগোড়ায় এ দাওয়াত পৌঁছে দিতে হবে।
ফেনী জেলা জামায়াতে ইসলামী আমির মাওলানা মুফতি আবদুল হান্নানের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি মাওলানা আবদুর রহিমের সঞ্চালনায় উক্ত সভাপতি সম্মেলনে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি ডা. ফখরুদ্দিন মানিক, কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য অ্যাডভোকেট এস.এম কামাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ফেনী জেলা নায়েবে আমির অধ্যাপক আবু ইউসুফ, মাওলানা মাহমুদুল হক।
এর আগে জেলার ৬টি উপজেলা, ৫টি পৌরসভা ও ৪৫টি ইউনিয়নের সব ইউনিটের ৫ হাজার ৪ শত সভাপতি-সেক্রেটারির উপস্থিতিতে উক্ত সভাপতি সম্মেলনে পবিত্র আল কোরআন থেকে দারস পেশ করেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা ও অঞ্চল টিম সদস্য মাওলানা আলাউদ্দিন।
এম. এমরান পাটোয়ারী/বিএইচ/এমএইচএস