বাগেরহাটে ট্রান্সফরমার চুরির হিড়িক, আতঙ্কে গ্রাহকরা
বাগেরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮:২৪
ছবি : বাংলাদেশের খবর
বাগেরহাটে বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। গত সাড়ে তিন মাসে ২৪টি ট্রান্সফরমার চুরি যাওয়ায় কয়েক হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় পড়েছেন। চুরি হওয়া ট্রান্সফরমারগুলোর আর্থিক মূল্য প্রায় ২০ লক্ষাধিক টাকা। প্রতিটি ঘটনায় পল্লী বিদ্যুতের পক্ষ থেকে থানায় এজাহার দেওয়া হলেও কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।
সবশেষ ঘটনা ঘটেছে ১৭ জানুয়ারি ফকিরহাট উপজেলার পাগলা-শ্যামনগর এলাকার তৈয়ব আলীর বটতলার একটি বৈদ্যুতিক খুঁটির ট্রান্সফরমার চুরি হয়ে যায়। এর আগে ১২ জানুয়ারি সদর উপজেলার ফতেপুর গ্রামে ও পার্শ্ববর্তী বিষ্ণুপুর গ্রামে ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা ঘটে। বিষ্ণুপুরে চুরি করতে না পেরে চোরেরা ট্রান্সফরমারটি খুঁটির নিচে রেখে পালিয়ে যায়।
এছাড়া সদর উপজেলার সৈয়দপুর, দড়িতালুক, মেগনিতলা, চাপাতলা, বাগমারা, বাদোখালীসহ বিভিন্ন এলাকাতেও ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা ঘটেছে। চুরি ঠেকাতে অনেক এলাকায় বৈদ্যুতিক খুঁটির সাথে লোহার শিকলদিয়ে ট্রান্সফরমার বেঁধে রেখেছেন স্থানীয়রা।
বাগেরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির নিয়ম অনুযায়ী, চুরি হওয়া এলাকার গ্রাহকদের নতুন ট্রান্সফরমার বসানোর জন্য অর্ধেক খরচ বহন করতে হয়। দ্বিতীয়বার চুরির ঘটনায় পুরো খরচই গ্রাহকদের বহন করতে হয়। যা দরিদ্র গ্রাহকদের জন্য খুবই কষ্টের। তাই যেকোনো মূল্যে চোর সিন্ডিকেটকে শনাক্ত করতে পুলিশের সহযোগিতা চেয়েছেন গ্রাহকরা।
ফতেপুর এলাকার বাসিন্দা মিনা নাজমুস সাকিব বলেন, আমাদের ট্রান্সফরমারটি চুরি হওয়ার তিনদিন পরেও বিদ্যুৎ পাইনি। কারণ ২২ হাজার টাকা জোগাড় করা আমাদের জন্য খুবই কষ্টকর।
বিষ্ণুপুর এলাকার সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, চুরি হলে কয়েকদিন বিদ্যুৎবিহীন থাকতে হয়। তারপর টাকা দিয়ে নতুন ট্রান্সফরমার বসাতে হয়। এর চেয়ে বড় ভোগান্তি আর কিছু নেই।
বাদোখালী এলাকার কৃষক মনিরুজ্জামান জানান, আমরা চুরি ঠেকাতে ট্রান্সফরমার লোহার শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছি। তারপরও চুরির শঙ্কা রয়ে গেছে। বৈদ্যুতিক খুঁটির ওপর ট্রান্সফরমার পাহারা দেওয়া সম্ভব নয়।
বাগেরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক (জিএম) সুশান্ত রায় বলেন, চুরির ঘটনার খবর পাওয়ার পর আমরা থানায় এজাহার করেছি। তবে এখনও চোর ধরা পড়েনি। গ্রাহক ও সাধারণ মানুষের সচেতনতা চুরি ঠেকাতে জরুরি। তিনি আরও বলেন, চোরেরা ট্রান্সফরমারের ভেতরের তামার তার নিয়ে বাক্স ও তেল ফেলে রেখে চলে যায়। এগুলো ভাঙারির দোকানে বিক্রি হয়। ভাঙারির দোকানগুলোর ওপর নজরদারি বাড়ালে চোর ধরা সম্ভব।
বাগেরহাটের পুলিশ সুপার তৌহিদুল আরিফ জানান, ট্রান্সফরমার চুরির বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে। চোরদের ধরতে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে। খুব শিগগিরই চোর সিন্ডিকেটকে শনাক্ত করা সম্ভব হবে।
বাগেরহাটের ৯টি উপজেলায় পল্লী বিদ্যুতের ৫ লক্ষাধিক গ্রাহক রয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৬৯ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎ সেবার আওতায় রয়েছেন।
শেখ আবু তালেব/এমবি