বরগুনা ও পিরোজপুর জেলার ৫ উপজেলার ৩২ জন হাজির কাছ থেকে ৩৮ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বরগুনার ‘দারুস-সুন্নাহ হজ কাফেলা’ এজেন্সির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ জাকারিয়ার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী তারিকুল ইসলাম বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) পাথরঘাটা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শান্তনু মন্ডলের আদালতে মামলা দায়ের করেন।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সহকারী বেঞ্চ সহকারী মোহাম্মদ মুবিন। এর আগে তারিকুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী পাথরঘাটার সাংবাদিকদেরও বিষয়টি জানান।
এম এ জাকারিয়া বাগেরহাট জেলার মোরেলগঞ্জ উপজেলার ওলামাগঞ্জ এলাকার মাওলানা রুহুল আমিনের ছেলে। বরগুনা পৌর শহরের আল-মিজান শপিং কমপ্লেক্সে অ্যান্ড মসজিদ মার্কেটের দারুস সুন্নাহ হজ ও ওমরাহ এজেন্সি অফিসের পরিচালক তিনি।
ভুক্তভোগীরা জানান, বরগুনা থেকে দারুস সুন্নাহ হজ ও ওমরাহ এজেন্সির পরিচালক মাওলানা জাকারিয়ার মাধ্যমে আগস্ট মাসে ওমরাহ পালনের উদ্দেশ্যে সৌদি আরবের মক্কায় যান ৩২ জন। সেখানে গিয়ে হাজিদের হাতখরচার প্রায় ২৮ লাখ টাকা ও বিমানের ফিরতি টিকিট না দিয়ে পালিয়ে যান জাকারিয়া। এমনকি ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকায় ১৪ দিনের প্যাকেজ বাংলাদেশ থেকে ওমরাহ পালন করতে যান ৩২ জন হাজি। এর আগে সেখানে গিয়ে খরচের জন্য টাকা ভাঙিয়ে সৌদি মুদ্রা রিয়াল দেওয়ার কথা বলে নগদ টাকা নেয় জাকারিয়া।
ভুক্তভোগী পাথরঘাটার তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘সৌদি আরব গিয়ে প্রয়োজনীয় খরচা ও স্ত্রীর জন্য গয়না কিনতে ইসলামী ব্যাংক পাথরঘাটা এজেন্ট শাখা থেকে সাড়ে ৫ লাখ টাকা বরগুনা ইসলামী ব্যাংকের জাকারিয়ার একাউন্টে পাঠাই। কথা থাকে এ টাকার পরিবর্তে সৌদি আরবের মক্কায় গিয়ে সৌদি মুদ্রা রিয়াল দেবেন জাকারিয়া। কিন্তু মক্কায় গিয়ে রিয়াল না দিয়ে জাকারিয়া জানান মদিনায় মালামালের দাম কম। সেখানে গিয়ে রিয়াল দিয়ে দেবেন। পরে মদিনায় গিয়ে রিয়াল চাইলে বলেন ব্যাংকের ঝামেলার কারণে টাকা পাস হচ্ছে না। দেশে গিয়ে টাকা দিয়ে দেবো।’
তিনি আরও বলেন, ‘এরপর বাংলাদেশে এসে কয়েক দফা তাগাদা দেই। পরে বরগুনার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের কাছে বিষয়টি জানালে তাদের কাছে গত বছরের ৯ ডিসেম্বর টাকা পরিশোধ করার কথা বলে। কথামতো নির্দিষ্ট সময়ে পরিশোধ না করে গত ৪ ডিসেম্বর পুনরায় টাকা দেওয়ার কথা তিনি বলেন। ওই নির্ধারিত তারিখেও টাকা পরিশোধ না করে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন জাকারিয়া। এর আগে ওমরাহ থেকে দেশের আসার সময় বিমানের ফিরতি টিকিট নিশ্চিত না করে বিমানবন্দরে হাজিদের রেখে সটকে পড়েন জাকারিয়া। তখন ৩২ জন হাজি নিজ খরচে টিকিট কেটে দেশে ফেরেন।’
একই অভিযোগ করেন বরগুনা সদর উপজেলার বাসিন্দা মাহবুবুর রহমান খোকা। তিনি জানান, সৌদি মুদ্রা রিয়ল দেওয়ার কথা বলে তার কাছ থেকে নগদ ৮ লাখ টাকা নেন জাকারিয়া। একইভাবে সৌদি আরবে অবস্থানকালে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে দেশে ফিরে টাকা দেওয়ার কথা বলেন।
এ ছাড়াও পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার এছাহাক আলী, আবদুল খালেক, রহমত আলী, মোস্তাফিজুর রহমান, তাসলিমা বেগম, আলেয়া বেগম, শাহনাজ পারভীন ও নাসিমা বেগমের কাছ থেকে ৪ লাখ টাকা, বরগুনার বামনা উপজেলার বাসিন্দা সোবাহান মাস্টার, কবির, নজরুল, আজহার উদ্দিন মাস্টার, হালিমা বেগম, ফিরোজা বেগম ও নুরজাহান বেগমের কাছ থেকে ৬ লাখ ৮৯ হাজার টাকা নিয়েছে। এ ছাড়াও বরগুনা সদর ও বেতাগীর সাত জনের কাছ থেকে ৪ লাখ টাকা নেন আলহাজ্ব এম এম জাকারিয়া।
এ ছাড়াও ওই ৩২ যাত্রীর ফিরতি টিকেটের বিমান ভাড়া ৯ লাখ ৬৪ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।
পাথরঘাটা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বেঞ্চ সহকারী মোহাম্মদ মুবিন জানান, বৃহস্পতিবার পাথরঘাটা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তারিকুল ইসলাম বাদী হয়ে মোহাম্মদ জাকারিয়াসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। বিষয়টি আদালত আমলে নিয়ে আসামি পাঁচজনের বিরুদ্ধে সমন জারি করেন।
বাদী পক্ষের আইনজীবী মিজানুর রহমান মনজু বলেন, ‘আসামিরা ধর্মীয় বিশ্বাস কাজে লাগিয়ে মানুষদের হয়রানি করছে। একাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে প্রায় ৩৮ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এর মধ্যে তারিকুল ইসলাম বাদী হয়ে পাথরঘাটা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন। আমারা বাদীর ন্যায্য পাওনা আদায়ে আইনি লড়াই চালিয়ে যাব। যাতে আর কেউ ধর্মীয় বিশ্বাস কাজে লাগিয়ে মানুষদের হয়রানি না করতে পারে।’
খান নাঈম/এমজে