বিয়ের ৩ দিনের মাথায় কারাগারে, ফিরলেন ১৬ বছর পর
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:৩২
পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন ঠাকুরগাঁওয়ের বাসিন্দা, সাবেক বিডিআর সদস্য মোতাহার হোসেন মানিক (৩৬)। দীর্ঘ ১৬ বছর পর নিজবাড়িতে মায়ের কোলে ফিরলেন তিনি। তাকে দেখতে ভিড় জমান আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশীসহ বন্ধু-বান্ধবরা।
এ সময় আবেগে আপ্লুত হন উপস্থিত সবাই। বাড়ির পাশে বাস থেকে নামলে গ্রামবাসী ফুলের মালা দিয়ে মোতাহারকে বরণ করে নেন। এরপর তাকে মিষ্টিমুখ করানো হয়।
মোতাহার হোসেন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আউলিয়াপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক সদস্য ও কচুবাড়ী জোতপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মৃত আবুল হোসেনের ছেলে। বাড়ি ফিরে বাবাকে না পেয়ে মোতাহার কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিন বছর আগে তার বাবা মারা যান।
বিডিআর সদস্য মোতাহারের মা মুক্তা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘বুকের ধন ফিরে পেয়েছি। আর যেন কোনো মাকে এভাবে কষ্ট ভোগ করতে না হয়।’
বিডিআর ট্রেনিং শেষে বাড়ি ফিরলে তাকে বিয়ে দেন পাশের গ্রামের ববি আক্তারের সাথে। তিনদিন সংসার শেষে কর্মস্থলে ফিরে যান তিনি। ১৬ বছর ধরে অপেক্ষায় থাকা স্ত্রীর কাছে ফিরলেন অবশেষে। স্বামীকে ফিরে পেয়ে কান্না আর থামছিল না তার। ববি বলেন, ‘বিয়ের তিনদিনের মাথায় স্বামী কারাগারে চলে যান। তখন থেকে স্বামীর অপেক্ষায় ছিলাম। দিন গড়িয়ে বছর হয়েছে, বছর গড়িয়ে দশক হয়েছে, তবু তার মুক্তি মেলেনি। ১৬ বছর পর সেই দিন এলো।’
পিলখানা হত্যাকাণ্ডের মামলায় কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া মোতাহার হোসেন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘সম্পূর্ণ বিনা বিচারে আমি ১৬ বছর কারাগারে ছিলাম। যদি সঠিক বিচার হতো, তাহলে আমার কারাভোগ করতে হতো না।’
তিনি বলেন, ‘১৬ বছর পর মায়ের কোলে ফেরা অন্যরকম এক অনুভূতি। এটা বলে বোঝানো যাবে না। এ জন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানাই। মাত্র ছয় মাস চাকরির বয়সে বিনা অপরাধে ১৬ বছর জেলখানায় কেটে গেছে। কী থেকে কী হয়েছে, এটা সবাই জানে।’
মোতাহার হোসেন বলেন, ‘ছয় মাস চাকরি আর ১৬ বছরের জেল। এই অল্প সময়ে কী অপরাধ করতে পারি বলেন? বাড়ি ফিরেছি, তবে একটাই চিন্তা, ১০ তারিখ কোর্ট আছে। প্রহসনের কোর্ট; মামলার বাদী বলেছেন, আমাদের ওপর প্রহসনের মামলা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। সরকার ইচ্ছা করলেই এটি ডিস্ট্রয়, বাতিল বা শেষ করতে পারে। জানি না আর কতদিন হয়রানি হতে হবে।’ এই বলে দীর্ঘশ্বাস ফেলেন তিনি।
সাবেক এই বিডিআর সদস্য বলেন, ‘আমাদের অনেক অসহায় ভাই এখনো ভেতরে আছেন। তাদের কোনো অপরাধ নেই। মিথ্যা মামলায় তাদের ফাঁসানো হয়েছে। এই সরকারের উচিত তাদের ছেড়ে দেওয়া।’
তিনি আরও বলেন, ‘৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিজম দূর হওয়ায় আমি মায়ের কোলে ফিরে আসতে পেরেছি।’
আবু সালেহ/এমজে