মার্কেট দখল : ভাড়ার টাকা ‘শ্রমিক দল নেতা ও ওসির পকেটে’
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
প্রকাশ: ৩০ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:২১
কুমারখালীতে এক ব্যক্তির প্রায় ‘৬ কোটি টাকা মূল্যের মার্কেট দখল করেছেন উপজেলা শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হান্নান। ২২টি দোকানের এই মার্কেটের সবগুলোই নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন তিনি। একটিতে করেছেন উপজেলা শ্রমিক দলের কার্যালয়ও।’
‘এদিকে মার্কেটের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে আব্দুল হান্নানের নির্দেশে প্রতিমাসে জোরপূর্বক ভাড়া উত্তোলন করছেন উপজেলা জাসদ নেতা কামাল বিশ্বাস। আর সেই টাকার ভাগ যাচ্ছে কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোলাইমান শেখের পকেটে’— এমন অভিযোগ তুলেছেন ভুক্তভোগী মোমতাজ আলী শেখ।
তিনি বলেন, ‘দুর্গাপুর বিশ্বাসপাড়ার আলাউদ্দিন বিশ্বাসের ছেলে জাসদ নেতা কামাল বিশ্বাস ও সদকী ইউনিয়নের সোহরাব উদ্দিনের ছেলে শ্রমিক দলনেতা আব্দুল হান্নান আমার মার্কেট দখল করেছেন। মার্কেটে নির্মিত ২২টি সেমিপাকা দোকানঘর রয়েছে। দোকানগুলো ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন পূর্বে আমার থেকে ভাড়া নিয়েছে এবং তারা আমাকে নিয়মিত ভাড়া প্রদান করে আসছেন।’
‘কিন্তু ৫ আগস্টের পর হান্নান ও কামাল বিশ্বাস দোকানগুলো দখল করে জোরপূর্বক ভাড়া আদায় করছেন। আদায়কৃত টাকার ভাগ ওসিকেও দিচ্ছেন, যে কারণে ওসির কাছে লিখিত অভিযোগের পাশাপাশি আদালতের সমস্ত রায়সহ কাগজ প্রদান করে ধরনা দিলেও কাজ হচ্ছে না, ওসি দেখেও কিছু দেখছেন না।’
মোমতাজ জানান, তিনি কুমারখালী থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন, তবে কোনো প্রতিকার পাননি। এরপর তিনি কুমারখালী নির্বাহী কর্মকর্তা, কুষ্টিয়া পুলিশ সুপার এবং জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। সকল জায়গা থেকে আশ্বাস পেলেও এখনো তার মার্কেট ফেরত পাননি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দখল করা দুইটি দোকানের একটিতে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ছবি টানিয়ে রাখা হয়েছে এবং অপরটি ভাড়া দেওয়া হয়েছে। বাকি ২০টি দোকানে মোমতাজের ভাড়াটিয়া থাকলেও জোরপূর্বক ভাড়া উত্তোলন করছেন হান্নান ও কামাল বিশ্বাস।
মাকের্টের ভাড়াটিয়া রুহুল আজম জানান, ২০০৭ সালে দোকানটি মোমতাজের কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে তাকেই নিয়মিত ভাড়া পরিশোধ করে আসছিলাম। কিছুদিন আগে থেকে কামাল বিশ্বাস মার্কেটের সকল ব্যবসায়ীদের কাছে ভাড়া দাবি করেন। প্রথমে ভাড়া অস্বীকৃতি জানালেও পরে ব্যবসায়ীদের ওপর চাপ সৃষ্টি করেন। পরে আমরা কামাল বিশ্বাসকে ভাড়া দিই।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত কামাল বিশ্বাসের মুঠোফোনে ফোন করলে তার স্ত্রী ফোনটি রিসিভ করেন। এসময় কামাল বিশ্বাসের সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি বলেন, ‘উনি (কামাল) ঘুমাচ্ছেন, আমাকেই বলেন কী দরকার।’
কুমারখালী পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তা কুমারখালী থানার এসআই মারজান জানান, ‘মোমতাজ শেখের সকল কাগজত্র সঠিক। আদালতের আদেশও তার পক্ষে এবং মার্কেটের সকল দোকানদারই স্বীকার করেন, এই মার্কেটের প্রকৃত মালিক মোমতাজ আলী শেখ। আমি একাধিবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দোকানের ভাড়া তুলতে নিষেধ করেছি অভিযুক্তদের । কিন্তু তারা কোনো কথাই শুনছেন না।’
‘আমি সেখানে গেলে কামাল বিশ্বাস আমার সাথে উচ্চবাচ্য করে এবং খারাপ আচরণ করে। আমি কামাল তার কাছে জমির কাগজ দেখতে চাইলে তিনি বলেন, আপনি এখানে থাকেন আমি কাগজ দেখাব। পরে আমি কাগজ নিয়ে থানায় আসতে বললে তিনি থানায় কাগজ দেখাতে পারেননি।’
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোলাইমান শেখ বলেন, ‘মমতাজ আলী শেখ রায়ের ফটোকপি দিয়ে গেছেন, কোর্ট থেকে অফিসিয়ালি কাগজ আসলে আমি ব্যবস্থা নেব।’
অভিযুক্ত কামাল বিশ্বাস তার পক্ষের কোন কাগজ দেখাতে পেরেছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘জমি-জমার বা সিভিল কাজে আমার কোনো এখতিয়ার নাই।’
আপনি মার্কেটের ভাড়ার টাকার ভাগ নিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে— এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এটা সঠিক নয়।’
উল্লেখ্য, ১৯৮৩ সালে হানিফ মিয়ার ৪৩.৫০ শতক জমির মধ্যে ৩৩ শতক জমি এওয়াজ দলিলে উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের মাঝগ্রামের মৃত আফসার আলী শেখের ছেলে মোমতাজ আলী শেখের নিকট হস্তান্তর করেন। এরপর সেখানে মোমতাজ আলী ২২টি সেমিপাকা দোকান ঘর নির্মাণ করেন। দোকানগুলো থেকে তিনি প্রতিমাসে নিয়মিত ভাড়া উত্তোলন করতেন। কিন্তু ৫ আগস্টের পর মার্কেট দখল হয়ে যায়।
আকরামুজ্জামান আরিফ/এটিআর