Logo

সারাদেশ

৭ মাস ধরে বেতন-ভাতা পান না ফেনীর দেড়শ স্বাস্থ্যকর্মী

Icon

ফেনী প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৫:৫৬

৭ মাস ধরে বেতন-ভাতা পান না ফেনীর দেড়শ স্বাস্থ্যকর্মী

সারাদেশের মতো দীর্ঘ সাত মাস বেতন-ভাতা ছাড়াই ঋণী হয়ে দিন পার করছেন ফেনীতে কর্মরত ১৪৭ জন কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি)। ফলে গ্রামীণ পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে প্রতি ওয়ার্ডে গড়ে ওঠা কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরত সিএইচসিপিদের জীবন দিন দিন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। তারা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। প্রকল্প থেকে ট্রাস্টের আওতায় নেওয়াসহ নানা জটিলতায় সিএইচসিপিদের বেতন বন্ধ রয়েছে। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন মহলের চিঠি চালাচালিতেই সীমাবদ্ধ রয়েছে সমস্যার সমাধান। ফলে স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে দুশ্চিন্তা যেন পিছু ছাড়ছে না। অন্যদিকে মরার উপরে খারার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতি। এমন বাস্তবতার কাহিনি ওঠে এসেছে  ফেনীর ছয়টি উপজেলায় কর্মরত সিএইচসিপিদের মুখ দিয়ে। হয়রানির ভয়ে কেউ মুখ খোলে সমস্যার কথা বলতেও সাহস পাচ্ছে না। 

স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানায়, গ্রামীণ জনপদে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের জন্য প্রকল্পের আওতায় ২০০৯ সালে ইউনিয়ন পর্যায়ে কয়েকটি করে কমিউনিটি ক্লিনিক গড়ে তোলা হয়। ফেনী সদর উপজেলায় ৪২টিসহ জেলায় মোট ১৫৩টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। এ ক্লিনিকে ১৪৭জন কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) কর্মরত আছেন।

কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে কর্মরত সিএইচসিপিরা সপ্তাহে ছয়দিন মহিলাদের গর্ভপূর্ব,গর্ভকালীন, গর্ভত্তোর সেবা, শিশুদের পুষ্টিহীনতা, ডায়েরিয়াসহ প্রাথমিক চিকিৎসা, ভিটামিন-এ ক্যাপসুল, মহিলা ও কিশোরীদের রক্ত স্বল্পতা, কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্যসেবা ও পরামর্শ, ইপিআই শিডিউল অনুযায়ী বিভিন্ন টিকা প্রদান, তথ্য সংগ্রহসহ নবজাতকের অত্যাবশকীয় সেবা প্রদান করা হয় নিয়মিত।

প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকে ২৯ আইটেমের ঔষধ বিনামূল্যে নিয়মিত প্রদান করা হয়। স্বাস্থ্যসেবায় এ কমিউনিটি ক্লিনিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও ২০১১ সাল থেকে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) চাকরিতে যোগদানের পর দীর্ঘ ১৩ বছরে তাদের চাকরি রাজস্ব বা স্থায়ীকরণ হয়নি। 

সরেজমিনে, গত ৪ ফেব্রুয়ারি সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের বিরলী ৯নং ওয়ার্ডের কমিউনিটি ক্লিনিক, কালীদহ ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের কমিউনিটি ক্লিনিক, ধর্মপুর ইউনিয়নের কমিউনিটি ক্লিনিকে এবং দাগনভূঞা উপজেলার জায়লস্কর ইউনিয়নের কয়েকটি কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত আগত রোগিদের বেশ ভিড় দেখা যায়।

জ্বর-সর্দি, কাশিতে আক্রান্ত হাসান (১০), শরীর দুর্বলতা-গ্যাস্ট্রিক নিয়ে রেজিয়া (৬০) ও ডায়রিয়া রোগ নিয়ে আসা রাহেলা খাতুন (৬৫) জানান, আমরা নিজ গ্রামের কমিউনিটি ক্লিনিকে পাঁচ টাকা ফি দিয়ে স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছি।

এতে একদিকে আমাদের যেমন আর্থিক ব্যয় সাশ্রয় হয়েছে। অপরদিকে দুর্ভোগ কমেছে, সময়ও বাঁচছে। আগে প্রাথমিক চিকিৎসার সব ওষুধ মিলতো। এখন পাওয়া যায় না। এখন ক্লিনিকে আসলে প্রায় ওষুধ সংকট শোনা যায়। তবে ক্লিনিকে দায়িত্বরতরা বলেছেন আগে ২৯ প্রকার ওষুধ সরবরাহ ছিল। বর্তমানে তা ২২ প্রকারে নেমে এসেছে। আগে অ্যান্টিবায়োটিক সরবরাহ ছিল। এখন কোনো অ্যান্টিবায়োটিক সরবরাহ করা হয় না।

চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ফেনী সদর উপজেলার ধর্মপুর ইউনিয়নের ধর্মপুর কমিউনিটি ক্লিনিক-১ (আশ্রয়ণ প্রকল্প) ওই ক্লিনিকে ১০৭৪ জন রোগী সেবা নিয়েছেন বলে জানান কর্মরত সিএইচসিপি মাকসুদ। অপরদিকে পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের বিরলী কমিউনিটি ক্লিনিকে মঙ্গলবার সরজমিনে গিয়ে রোগীদের ভিড় লক্ষ্য করা যায়, গর্ভবতী একজন ও শিশু দুইজন রোগীসহ সাধারণ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত প্রায় ৩৫জন রোগী সেবা নিয়েছেন বলে জানান কর্মরত সিএইচসিপি রুমা আক্তার।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে  বেশ কয়েকজন সিএইচসিপি জানান, আমাদেরকে নিয়োগের পর বিভিন্ন রোগসহ চিকিৎসায় ওষুধ প্রয়োগ বিষয়ে তিন মাসের প্রাথমিক প্রশিক্ষণ বা ধারণা দেয়া হয়। সেই প্রশিক্ষণে ওপর ভিত্তি করে আমরা শুক্রবার ও ছুটির দিন বাদে সকাল নয়টা হতে বিকাল তিনটা পর্যন্ত চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকি। কতজন রোগী চিকিৎসা সেবা নিয়েছে তা আমাদেরকে রিপোর্ট প্রেরণ করতে হয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট।

তারা আরও জানান, প্রথম দিকে আমাদেরকে ২৭ প্রকার ঔষধ সরবরাহ করা হলেও বর্তমানে ২৯ প্রকার ঔষধ সরবরাহ করা হচ্ছে। আগে অ্যান্টিবায়োটিক সরবরাহ দেওয়া হলেও এখন তা সরবরাহ করা হয় না। আমাদের চাকরি জাতীয়করণ করা হবে এমনটা শুনেছি। এখন জাতীয়করণ তো দূরের কথা আমরা বিগত দীর্ঘ সাত মাস বেতন পাচ্ছি না। এতে আমাদেরকে ধার দেনা করে পরিবার পরিজন নিয়ে দুর্বিষহ দিন পার করতে হচ্ছে। আমরা  রোগীদের সুস্থতায় সেবা দিলেও বেতন না পেয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছি। মূল চালিকাশক্তি ঠিক না থাকলে এভাবে চলতে পারে না। এমন দুর্বিষহ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ করতে সিএইচসিপিরা অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্ট সকলের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করি।

রাবেয়া আক্তার নামে সেবা নিতে আসা এক রোগী জানান, বেতন ভাতা বন্ধ থাকায় সিএইচসিপিরা তাদের কাজের মনোবল হারাচ্ছেন।

নুরুল আলম ভূঁইয়া (জসিম) নামে একজন সচেতন নাগরিক বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরত সিএইচসিপিদের মাধ্যমে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে স্বাস্থ্য সেবা পান অবহেলিত মানুষজন। দীর্ঘ সাত মাস বেতন ভাতা বন্ধ থাকায় তাঁরা নিজেরাই রয়েছে অবহেলিত। প্রান্তিক মানুষের হাতের নাগাড়ে এই স্বাস্থ্যসেবা টিকিয়ে রাখতে সিএইচসিপিদের বেতন ভাতা চালুসহ চাকরি স্থায়ীকরণ অত্যন্ত জরুরি।

ফেনীর সিভিল সার্জন ডা. শিহাব উদ্দিন বাংলাদেশের খবরকে জানান, ফেনীতে সিএইচসিপিদের দীর্ঘ সাত মাস বেতন ভাতা বন্ধ রয়েছে। তবে এই বিষয়টি নিয়ে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রেখেছি। আশা করি সহসা বেতন চালু হবে।

এম. এমরান পাটোয়ারী/এমএইচএস

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর