লোকজ উৎসবে প্রাণের স্পন্দন

সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৫:০২
-67a5cc3d846ee.jpg)
ছবি : বাংলাদেশের খবর
বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের আয়োজিত মাসব্যাপী মেলা ও লোকজ উৎসব ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে। শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) ছুটির দিনে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দর্শনার্থীদের আগমনে উৎসব আরও জমে উঠেছে।
গত ১৮ জানুয়ারি মাসব্যাপী এ লোকজ উৎসবের উদ্বোধন করেন সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। মেলায় ৬৪ জন কারুশিল্পী ছাড়াও প্রায় ১০০টি স্টল স্থান পেয়েছে। ১৯৯১ সাল থেকে লোক ও কারুশিল্পের সংগ্রহ, সংরক্ষণ, প্রদর্শন, বিপণন ও পুনরুজ্জীবনের লক্ষ্যে এ উৎসবের আয়োজন করা হচ্ছে। এবারের আয়োজন শেষ হবে আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি।
মেলায় পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা ইসমাইল হোসেন জানান, নতুন প্রজন্মকে সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে পরিবার নিয়ে লোকজ মেলায় এসেছি। তাদের বিলুপ্ত প্রায় একতারা, বাঁশি, বায়োস্কোপ, কাঠের পুতুল, নকশিকাঁথাসহ আদি ও অকৃত্রিম শিল্পের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে এবং লোকগান শুনতে মেলায় এসেছি।
কুমিল্লা থেকে পরিবার নিয়ে আসা হালিম মিয়া বলেন, শহরের কর্মব্যস্ততায় আমরা গ্রামবাংলার সংস্কৃতি ভুলতে বসেছি। তাই ছুটির দিনে পরিবার নিয়ে মেলায় এসেছি। এখানে এলে আমরা আমাদের হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যকে খুঁজে পাই।
এবারের মেলায় রয়েছে বিভিন্ন অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী কারুশিল্প। সোনারগাঁয়ের চিত্রিত হাতি, ঘোড়া, পুতুল ও কাঠের কারুশিল্প, ঝিনাইদহ ও মাগুরার শোলা শিল্প, রাজশাহীর শখের হাড়ি, রংপুরের শতরঞ্জি, সোনারগাঁয়ের নকশিকাঁথা, মুন্সীগঞ্জের শীতল পাটি, মানিকগঞ্জের তামা-কাঁসা ও পিতলের কারুশিল্প, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কারুপণ্য, কিশোরগঞ্জের টেপা পুতুল, সিলেটের মনিপুরী তাঁতশিল্প, কুমিল্লার বিখ্যাত খাদি শিল্পসহ নানা ধরনের লোকজ পণ্য মেলায় স্থান পেয়েছে।
মেলায় লোকসংস্কৃতির অন্যতম উপাদান বাউলগান, পালাগান, কবিগান, ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালি, জারি-সারি, হাছন রাজার গান, লালন সংগীত, শরিয়তি-মারফতি গান, মাইজভান্ডারি গান, মুর্শিদী গান, গাঁয়ে হলুদের গান, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, লোকজ ছড়া পাঠ ও পুঁথি পাঠের আসর অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
মেলায় রয়েছে গ্রামীণ খেলার মাঠ, যেখানে কানামাছি, বৌচি, দাড়িয়াবান্ধা, লাঠি খেলা ইত্যাদি প্রদর্শিত হচ্ছে। তরুণ প্রজন্ম বাংলার হারিয়ে যাওয়া খেলাধুলার সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে।
এছাড়া লোকজীবন প্রদর্শনীতে পালকিতে বরযাত্রা, জামাইয়ের পিঠা খাওয়া, বিয়ের কনে দেখা, গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আবহমান বাংলার ঐতিহ্যকে জীবন্ত করে তোলা হয়েছে। স্থানীয় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা এতে অংশ নিচ্ছে।
মেলায় আগত কারুশিল্পীরা জানান, ছুটির দিনে দর্শনার্থীদের উপস্থিতি বেশি থাকায় বিক্রিও ভালো হচ্ছে। আগের তুলনায় হস্তশিল্পের চাহিদা বেড়েছে।
বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক একেএম আজাদ সরকার জানান, হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে নতুন প্রজন্মের কাছে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্যই মাসব্যাপী এ মেলার আয়োজন। আমরা মেলায় আগত দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশসহ পুরো ফাউন্ডেশনকে সিসিটিভির আওতায় রেখেছি। একদল স্পেশাল ফোর্স সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এবারের উৎসব বেশ প্রাণবন্ত হচ্ছে। দর্শনার্থীদের ব্যাপক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে কারুশিল্প চত্বরে তারুণ্যের উৎসব নামে আলাদা করে স্টল দেওয়া হয়েছে।
সজীব হোসেন/এমবি