ডিমলায় ইউক্যালিপটাস গাছের আগ্রাসন, নীরব বন বিভাগ

ডিমলা (নীলফামারী) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৫:২১

ছবি : বাংলাদেশের খবর
নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায় বন বিভাগের নিজস্ব ফরেস্টে বিপুল পরিমাণ ক্ষতিকর ইউক্যালিপটাস গাছের বিস্তার ঘটেছে।
পরিবেশবিদদের মতে, এটি পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর এবং এর নেতিবাচক প্রভাব দীর্ঘমেয়াদে আরও বড় সংকট তৈরি করতে পারে। অথচ সরকার ২০০৮ সালে বনায়নের জন্য ইউক্যালিপটাস গাছ লাগানো নিষিদ্ধ করলেও ডিমলা ফরেস্টে এ নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই কয়েক বছর আগে হাজার হাজার গাছ রোপণ করেছে বন বিভাগ।
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, ডিমলা ফরেস্ট এলাকায় অন্যান্য বনজ ও ঔষধি গাছের পরিবর্তে হাজার হাজার ইউক্যালিপটাস রোপণ করা হয়েছে। শুধু বনভূমি নয়, উপজেলাজুড়ে বিভিন্ন সড়কের পাশে এবং আবাদি জমিতেও এ গাছের বিস্তৃতি ঘটেছে। এটি মাটির পানি শোষণ করে উর্বরতা কমিয়ে দেয়। যার ফলে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
পরিবেশবিদদের মতে, ইউক্যালিপটাস গাছ প্রচুর পরিমাণে পানি শোষণ করে নেয় এবং প্রস্বেদন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তা বাতাসে ফেরত দেয়। একটি পূর্ণবয়স্ক ইউক্যালিপটাস গাছ আশপাশের ১০ ফুট এলাকার পানি শুষে নেয়। ভূগর্ভস্থ ৫০ ফুট গভীরের পানিও ব্যবহার করে। ফলে পানির স্তর নেমে যায় এবং আবাদি জমির উর্বরতা কমে আসে।
স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, ইউক্যালিপটাসের বিষাক্ত পাতা পড়ে মাটির গুণাগুণ নষ্ট হচ্ছে। এতে ফসল উৎপাদন কমে গেছে। এছাড়া এ গাছের কারণে পাখির সংখ্যা কমে যাচ্ছে। জীববৈচিত্র্যে বিরূপ প্রভাব পড়ছে।
ডিমলা উপজেলায় বেশিরভাগ নার্সারি মালিক দ্রুত বৃদ্ধি ও কাঠের চাহিদার কারণে ইউক্যালিপটাসের চারা ব্যাপকভাবে উৎপাদন করছেন। কম খরচে বেশি চারা উৎপাদন করা সম্ভব হওয়ায় এ গাছের বাণিজ্যিক উৎপাদন অব্যাহত রয়েছে।
উপজেলার গয়াবাড়ী ইউনিয়নের বাসিন্দা মিজানুর বলেন, এ গাছ সব জায়গাতেই লাগানো যায় এবং খুব অল্প সময়ের মধ্যেই বেড়ে ওঠে, মোটা হলে ভালো দাম পাওয়া যায়। বিশেষ করে ঘরের কাজে এ গাছের কাঠ বেশি ব্যবহার করা যায় এজন্যই গাছটি লাগানো হয়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মীর হাসান আল বান্না বলেন, ইউক্যালিপটাস মাটি থেকে প্রচুর পানি শোষণ করে এবং এর ঝরা পাতা মাটির উর্বরতা নষ্ট করে। আবাদি জমির আশপাশে থাকলে ফসলের ক্ষতি হয়। তবে এ গাছ নিয়ে বিভিন্ন মতামত রয়েছে। তাই আরও গবেষণা প্রয়োজন।
নীলফামারী জেলা সামাজিক বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রেজাউল করিম বাংলাদেশের খবরকে বলেন, গাছগুলো যখন লাগানো হয়, তখন নিষেধাজ্ঞা ছিল না। তাই সেসময় ইউক্যালিপটাস রোপণ করা হয়েছে। বর্তমানে নতুন করে এ গাছ লাগানো হচ্ছে না। তবে ইতিমধ্যে গড়ে ওঠা বাগান নিয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
রাশেদ খান/এমবি