৬২ কিলোমিটার রেলপথের ১২ হাজার রেলক্লিপ উধাও

নীলফামারী প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৬:১০

নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর-চিলাহাটি রেলপথের রেললাইনের পাত আটকে রাখার জন্য ব্যবহৃত ১২ হাজার ইলাস্টিক রেল ক্লিপ (ইআরসি) উধাও হয়ে গেছে। রেল সূত্রে জানা গেছে, একই অবস্থা দেখা যাচ্ছে স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় বসানো লুপ লাইনসহ সৈয়দপুর-চিলাহাটি রেলপথে। স্থানীয় রেলকর্মীরা মনে করছেন, বাস্তবে সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।
সৈয়দপুর রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী (পথ) সুলতান মৃধা বলেন, কিছু ক্লিপ পুরনো হয়ে ভেঙে গেছে, তবে বাকিগুলো দুর্বৃত্তরা চুরি করে নিয়ে গেছে।
তবে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, রেললাইনে সংস্কার করা হলেও অনেক জায়গায় সঠিকভাবে ক্লিপ লাগানো হয়নি। এ অবস্থায়, এসব রেলপথে যাত্রী ও মালবাহী ট্রেন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে বলে জানিয়েছেন চালকেরা। কাঠ, লোহা বা সিমেন্টের ক্লিপের মাধ্যমে রেললাইনের পাত আটকানো হয়। প্রতিটি ক্লিপের দুপাশে দুটি এবং রেললাইনের সংযোগস্থলে চারটি করে ক্লিপ থাকে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশনের উত্তরে ইসলামবাগ, ঘোড়াঘাট, গোলাহাটসহ প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে রেললাইনে শতাধিক ইআরসি ক্লিপ নেই। এসব এলাকায় প্রায় প্রতি কয়েকটি স্থানে ক্লিপ উধাও হয়ে গেছে।
সূত্র জানায়, সৈয়দপুর রেলওয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন, যা থেকে ঢাকা, খুলনা এবং রাজশাহী রুটে ছয়টি আন্তঃনগর এবং একটি মেইল ট্রেন চলাচল করে। এছাড়া ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, খানসামা, রংপুরের তারাগঞ্জের যাত্রীরা সৈয়দপুর থেকে যাতায়াত করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলওয়ের এক কর্মকর্তা জানান, সৈয়দপুর-চিলাহাটি রেলপথে মোট ৫৯ কিলোমিটার এবং ৪টি লুপ লাইনসহ ৩ কিলোমিটার রেলপথ রয়েছে। এই রেলপথগুলো সৈয়দপুর প্রকৌশল বিভাগের অধীন। ২০১২ সালে সৈয়দপুর-চিলাহাটি রেলপথটি সংস্কার করে নতুন লাইন বসানো হয়। লুপ লাইনগুলো সম্প্রতি সংস্কার করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী, প্রতি কিলোমিটার রেলপথে ১ হাজার ৪০০ ক্লিপ থাকে এবং প্রতিটি ক্লিপের সঙ্গে রেললাইনের পাত আটকাতে চারটি করে ক্লিপ লাগানো হয়। প্রতিটি ক্লিপের সঙ্গে লাইনার ও রাবার প্যাডও থাকে।
অতএব, সৈয়দপুর-চিলাহাটি রেলপথে ৩ লাখ ৩০ হাজার ৪০০ ক্লিপ থাকার কথা। এর মধ্যে ১২ হাজার ক্লিপ নেই। প্রতিটি ইআরসির মূল্য ২৬০ টাকা হিসাবে, চুরি হওয়া ক্লিপগুলোর মূল্য প্রায় ৩১ লাখ ২০ হাজার টাকা।
শুরু থেকেই ক্লিপ বসানো হয়নি দাবি করে সৈয়দপুর ইসলামবাগ বড় মসজিদ এলাকার ইলিয়াস হোসেন বলেন, "নতুন রেললাইন বসানোর পর থেকেই এমন পরিস্থিতি দেখছি। শ্লিপারের সঙ্গে রেললাইনের পাত আটকে রাখার জন্য যে ক্লিপ ব্যবহার করা হয়, তা অনেক জায়গায় লাগানো হয়নি। এ অবস্থাতেই এই পথে ঝুঁকি নিয়ে ট্রেন চলাচল করছে।"
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ট্রেনচালক জানান, ‘ক্লিপ না থাকায় রেললাইন নড়বড়ে হয়ে পড়ে, যেকোনো সময় ট্রেন লাইনচ্যুত হতে পারে।’
সৈয়দপুর রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী সুলতান মৃধা বলেন, ‘কিছু ক্লিপ লাগানোর পরই দুর্বৃত্তরা চুরি করে নিয়ে যায়, আবার দীর্ঘদিন ধরে ট্রেন চলাচলের কারণে বেশ কিছু ক্লিপ ভেঙে গেছে। হিসাব করে দেখা গেছে, সৈয়দপুর-চিলাহাটি রেলপথের লুপ লাইনসহ প্রায় ১২ হাজার ইআরসি ক্লিপ নেই। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। যেসব জায়গায় ক্লিপ নেই, সেখানে দ্রুত ক্লিপ লাগানোর কাজ চলমান রয়েছে।’
সৈয়দপুর রেলওয়ে থানার ওসি মাহমুদ-উন নবী বলেন, ‘আমি এখানে নতুন। ক্লিপ চুরির বিষয়ে কোনো অভিযোগ এ পর্যন্ত পাইনি, তবে বিষয়টি নজরে এসেছে। আমরা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’
রেলওয়ে পাকশী বিভাগীয় প্রকৌশলী-২ (পথ) বীরবল মন্ডল বলেন, ‘রেললাইনের ক্লিপ না থাকার কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ফিটিংসসহ রেলপথের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট পুলিশ সুপারকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে, বর্তমানে রেলপথের যে ফিটিংস রয়েছে, তাতে ট্রেন চলাচলের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ নয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘ক্লিপ চুরি হওয়ার পর সাধারণ মানুষকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’
তৈয়ব আলী সরকার/এমএইচএস