রাজধানীর মিরপুরে এক বাসা থেকে দুই সন্তানসহ মায়ের মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনায় আবসাদগ্রস্ত জেসমিনের আত্মহত্যার বিষয়টিকেই তুলে ধরছেন স্বজনরা। তারা জানান, মাসখানেক আগেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন জেসমিন আক্তার। এদিকে আত্মহত্যার বিষয়টিকে সামনে রেখে তদন্ত শুরু করলেও হত্যার বিষয়টি উড়িয়ে দিচ্ছে না পুলিশ।
জেসমিনের খালাতো বোন রেহেনা পারভিন গতকাল শুক্রবার বাংলাদেশের খবরকে জানান, এক মাস আগেও চিরকুট লিখে সন্তানদের ঘুমের ওষুধ খাইয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন জেসমিন। চিরকুটটিতে লেখা ছিল, ‘আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়’। এ ছাড়া জেসমিন প্রায়ই বলতেন, ‘আমার মরে যেতে ইচ্ছে করছে’। তিনি বলেন, ‘জেসমিন মাইগ্রেনের রোগী ও মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন। নিজের জীবন নিয়ে উদ্বিগ্ন ও মৃত্যুর পর সন্তানদের কে দেখবে এটা নিয়ে ছিলেন দুশ্চিন্তাগ্রস্ত।’ প্রতিবেশী সালমা খাতুনও জেসমিনের অবসাদগ্রস্ততা এবং নিয়মিত চিকিৎসা নেওয়ার কথা জানান।
রেহেনা বলেন, ‘ঘটনার দিন দুপুর ২টার দিকে বাসায় ফেরেন জেসমিন। তখন বাসায় জেসমিনের ভাই শাহীনুর এবং স্বামী হাসিবুলের ভাগ্নে ও ভাগ্নে-বউ একটি কক্ষে ছিলেন। আরেক কক্ষে জেসমিনের খালাতো বোন যূথী থাকেন। বিকাল ৪টার দিকে শাহীনুর বের হন। তখন জেসমিনের কক্ষ বন্ধ ও সেখান থেকে টেলিভিশন চলার শব্দ শুনতে পাওয়া যায়। বিকাল ৫টার দিকে বাসায় ফেরেন হাসিবুল। কিন্তু জেসমিনের কক্ষের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ থাকায় তিনি ঢুকতে পারেননি। পরে হাসিবুল মাগরিবের নামাজ পড়তে মসজিদে গেলে শাহীনুর বাসায় ফেরেন। তিনি দরজায় টোকা দিয়ে কোনো শব্দ না পেয়ে হাসিবুলকে ফোন দেন। হাসিবুল দরজা ভেঙে বিছানায় দুই শিশুকন্যা ও মেঝেতে জেসমিনের রক্তাক্ত মরদেহ দেখতে পান। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় পুলিশ এসে মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়।’
তবে মরদেহ দেখার পর দেহের কাটা অংশ নিয়ে রহস্য ঘুরপাক খাচ্ছে রেহেনার মধ্যে। তিনি বলেন, ‘জেসমিনের দুই হাতের রগ, গলা কাটা ও বুক থেকে পেট পর্যন্ত কাটা ছিল। বড় মেয়ের পেটে ও গলায় কাটা এবং ছোটে মেয়ের পেট কাটা দেখা যায়। দুই সন্তানকে হত্যার পর যদি জেসমিন আত্মহত্যা করে থাকেন, তাহলে দুই হাতের রগ কাটার পর কীভাবে নিজ গলায় ছুরি চালান— এ নিয়ে রহস্য রয়েছে।’
এ বিষয়ে দারুস সালাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেলিমুজ্জামান বলেন, ‘দুই সন্তানকে হত্যা করে মা গলায় ছুরি চালিয়ে আত্মহত্যা করেছেন— এমন ধারণাকে সামনে রেখে তদন্ত শুরু হয়েছে। অবশ্য এটি তার অসুুখের কারণে নাকি অন্য কারণে, নাকি তিনজনকেই হত্যা করা হয়েছে— এমন বিষয়ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
গত ৩০ এপ্রিল সন্ধ্যায় মিরপুরের সরকারি বাঙলা কলেজের কাছে পাইকপাড়ার সরকারি কোয়ার্টারের ১৩৪ নম্বর ভবনের চারতলার ফ্ল্যাট থেকে জেসমিন ও তার দুই মেয়ের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। জেসমিন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরে কর্মরত ছিলেন। তার স্বামী হাসিবুল ইসলাম সংসদ সচিবালয়ের সহকারী লেজিসলেটিভ ড্রাফটসম্যান। নিহত দুই মেয়ে হাসিবা তাহসিন হিমি (৮) ও আদিবা তাহসিন হানি (৪)।