এক দশকে স্বামীর অবৈধ সম্পদ অর্জনের দায়ে করা মামলায় স্ত্রীদের সাজা পাওয়ার ঘটনা বেড়েছে। এক্ষেত্রে সাজা পাওয়ার হারের দিক থেকে এগিয়ে রয়েছেন রাজনীতিকদের স্ত্রীরা। রোববার ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এমন তথ্য উঠে এসেছে।
বলা হয়েছে, ২০০৭ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় আদালতের রায়ে স্বামীর অবৈধ সম্পদ স্ত্রীর নামে রাখায় সবচেয়ে বেশি সাজার শিকার হয়েছেন রাজনীতিকদের স্ত্রীরা। শতকরা হিসাবে তা ৫৫ শতাংশ। এর পরের অবস্থানে রয়েছেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর স্ত্রীরা, ২১ শতাংশ। মোট সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে ১০ শতাংশ ব্যবসায়ীদের স্ত্রী। বর্তমানে স্বামীর অবৈধ সম্পদ অর্জনের দায়ে দুদকের চলা অনুসন্ধানের বেশিরভাগই সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর স্ত্রী। ‘দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত আয় ও সম্পদের পারিবারিক দায় : নারীর ভূমিকা, ঝুঁকি ও করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এসব তথ্য উঠে আসে।
সভায় দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘স্বামীর অপরাধের জন্য স্ত্রীদের এভাবে সাজা পাওয়া কাম্য নয়। বহু লোক সমাজে আছেন, যারা বউয়ের ভয়ে দুর্নীতি করেন না। নারীরা সচেতন হলে সমাজে দুর্নীতি অনেকাংশে কমে যাবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘দুই বছর কাজ করতে গিয়ে দেখেছি, একটি মাত্র ক্ষেত্রে নারী জানেন তিনি কাজটি (দুর্নীতি) করেছেন। আর কোনো নারীকে বলতে শুনিনি— আমি জানতাম।’
তিনি বলেন, ‘১১৮টি মামলায় নারীরা ভিকটিম হয়ে যাচ্ছেন। আমরা কীভাবে জানব— তিনি জানতেন না? এমনও হয়েছে, স্বামী স্বাক্ষর করেছেন স্ত্রীর নামে। সেগুলো আমরা এক্সপার্ট দিয়ে বের করেছি। কিন্তু যেগুলো বের করতে পারব না, সেগুলোর কী হবে?’ এক্ষেত্রে নারীদের সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘দুর্নীতির মামলাগুলোতে অবৈধ আয়ের মাধ্যমে সম্পদ অর্জনের বোঝা পুরুষের পাশাপাশি অনেক ক্ষেত্রে যৌক্তিক কারণে, অনেক ক্ষেত্রে অযৌক্তিক কারণে নারীর ওপরে পড়ে।’ মতবিনিময় সভায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, মানবাধিকারকর্মী খুশী কবির ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা অ্যাকশন এইডের আবাসিক প্রতিনিধি ফারাহ কবির বক্তব্য দেন।