রাঙামাটির নানিয়ারচরে উপজেলা চেয়ারম্যান শক্তিমান চাকমা ও গণতান্ত্রিক ইউপিডিএফের নেতাকর্মীসহ ৫ হত্যাকাণ্ডের পর হামলায় জড়িতদের গ্রেফতার করতে বিভিন্ন স্থানে যৌথ বাহিনী সাঁড়াশি অভিযান চালাচ্ছে। নানিয়ারচরে পর পর দুটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পাহাড়জুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। একমাত্র সড়কপথ রাঙামাটি-মহালছড়ি-খাগড়াছড়ি সড়কে ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। সেনা ও পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে।
বিভিন্ন স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ ও সেনাবাহিনী টহল দিচ্ছে। দোকানপাট খোলা থাকলেও মানুষ প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছে না। একমাত্র সড়কপথ রাঙামাটি-মহালছড়ি-খাগড়াছড়ি সড়কে ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
অপরদিকে, উপজেলা চেয়ারম্যান ও জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা) সহসভাপতি শক্তিমান চাকমাকে গুলি করে হত্যা এবং শুক্রবার দুপুরে তার শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য নানিয়ারচর যাওয়ার পথে গণতান্ত্রিক ইউপিডিএফের প্রধান তপন জ্যোতি চাকমা বর্মাসহ ৫ জনকে হত্যার ঘটনায় রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি।
নানিয়ারচর থানার ওসি আবদুল লতিফ জানিয়েছেন, নানিয়ারচরের সার্বিক পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। এর পাশাপাশি নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ ও সেনাবাহিনী টহল দিচ্ছে। যৌথবাহিনী হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের ধরতে অভিযান চালাচ্ছে।
এদিকে খাগড়াছড়িতে মাইক্রোবাসচালক মো. সজীব হাওলাদারের হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও অপহূত তিনজনকে উদ্ধারের দাবিতে রোববার হরতাল পালন করেছে পার্বত্য অধিকার ফোরাম ও বৃহত্তর পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদ। একই দাবিতে আজ সোমবার ও আগামীকাল মঙ্গলবার ডাকা হরতাল স্থগিত করা হয়েছে। এদিকে অপহূত ওই তিন বাঙালিকে উদ্ধার, বাঙালি গাড়িচালক সজীবের খুনিদের গ্রেফতার এবং জেএসএস, ইউপিডিএফসহ পাহাড়ের সব সশস্ত্র সংগঠন নিষিদ্ধের দাবিতে রাঙামাটিতে আজ সোমবার থেকে ৪৮ ঘণ্টা হরতাল ডেকেছে পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদ ও পার্বত্য নাগরিক পরিষদ। অন্যদিকে নানিয়ারচর উপজেলা চেয়ারম্যান শক্তিমান চাকমাকে হত্যার বিচার দাবিতে রাঙামাটিতে মানববন্ধন করেছেন আইনজীবীরা।
৩ এপ্রিল বৃহস্পতিবার রাঙামাটির নানিয়ারচরে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত জেলা আইনজীবী সমিতির সিনিয়র সদস্য জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা) সহসভাপতি ও নানিয়ারচর উপজেলা চেয়ারম্যান শক্তিমান চাকমা। তার শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে শুক্রবার সকালে উপজেলার বেতছড়ি এলাকায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত পাঁচজনের মধ্যে মাইক্রোবাসচালক মো. সজীবও ছিলেন। এর আগে ১৬ এপ্রিল খাগড়াছড়ির মাটিরাঙা উপজেলার তিন বাসিন্দা কাঠ ব্যবসায়ী মো. সালাউদ্দীন, মহরম আলী ও গাড়িচালক মো. বাহার মিয়া মহালছড়ির মাইসছড়ি থেকে অপহূত হন। পরিবারের দাবি, মুক্তিপণ দেওয়ার পরও তাদের ছাড়ছে না অপহরণকারীরা।
হরতালে খাগড়াছড়িতে নেমে আসে স্থবিরতা। দূরপাল্লা ও অভ্যন্তরীণ সড়কে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ ছিল। খোলেনি দোকানপাট। এইচএসসি পরীক্ষার্থী ও কর্মজীবী লোকজনকে হেঁটে গন্তব্যে যেতে হয়েছে। ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা যাত্রীবাহী বাস শহরে প্রবেশ করানো হয় পুলিশ পাহারায়। হরতাল সমর্থকরা সকালে সদর উপজেলা পরিষদের সামনের সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন। এ ছাড়া শহরের কলেজগেট, চেঙ্গি স্কোয়ার, জিয়া স্কোয়ার, নারকেলবাগান, টার্মিনালসহ বেশ কয়েকটি সড়কে টায়ার ও আগুন জ্বালিয়ে পিকেটিং করতে দেখা যায় তাদের। খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার আলী আহমদ খান বলেন, হরতালে জেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ছিল। কোথাও কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
বিকালে পার্বত্য অধিকার ফোরাম ও বৃহত্তর পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. পারভেজ আলম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সোম ও মঙ্গলবারের হরতাল স্থগিতের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। বাঙালি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি মাঈন উদ্দিন বলেন, অপহূতদের উদ্ধার ও হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতারে প্রশাসনের আশ্বাস পাওয়ায় হরতাল স্থগিত করা হয়েছে।