‘জিনের বাদশাহ’ পরিচয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও ক্যাবল অপারেটরদের নিজস্ব চ্যানেলে বিজ্ঞাপন দিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করতেন তারা। কখনো ‘দয়াল বাবা’, ‘সাধু সাধক’ বলেও পরিচয় দিত। মানুষের দৈনন্দিন সমস্যার সমাধানের নামেও হাতিয়ে নিত কোটি টাকা। সংঘবদ্ধ এমন এক প্রতারক চক্রের মূল হোতা কথিত ‘জিনের বাদশাহ’ জুবায়ের আহমেদ সুমনকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি’র সিরিয়াস ক্রাইম বিভাগ।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে মালিবাগে সিআইডি’র সদর দফতরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। গত বুধবার রাজধানীর ফার্মগেটে ইন্দ্রপুরী ইন্টারন্যাশনাল হোটেল থেকে চক্রের মূল হোতা কথিত ‘জিনের বাদশাহ’ জুবায়েরকে গ্রেফতার করে সিআইডি।
সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির ‘সিরিয়াস ক্রাইম’ বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএস) সৈয়দা জান্নাত আরা বলেন, একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র বিভিন্ন সময়ে জিনের বাদশাহ, দয়াল বাবা সেজে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান দেবে বলে বিজ্ঞাপন তৈরি করে। তিনি বলেন, প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়ে ৪২ লাখ ২৫ হাজার টাকা হারিয়েছেন সোহেল মোল্লা। তাকে লটারি পাইয়ে দেবে বলে ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন মানি ট্রান্সফার, ব্যাংক ও বিভিন্ন মাধ্যমে টাকাগুলো হাতিয়ে নেয় চক্রটি। গত ২২ জুলাই ভোলার বোরহান উদ্দিন থানায় এ অভিযোগে একটি মামলা করেন সোহেল। এরপর মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডি।
গ্রেফতারের পর কথিত জিনের বাদশাহ জুবায়ের আহমেদ সুমন জিজ্ঞাসাবাদে সিআইডিকে জানান, মাসিক ২০ হাজার টাকা দিয়ে তৈয়েবুর রহমানের মাধ্যমে সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন, বর্তমান দিনকাল ও চিত্রবাংলা পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রচার করতেন তারা।
সিআইডি আরো জানায়, প্রতারক জুবায়ের আহমেদ সুমনের নামে গত ২০১১ সালে ৫ ডিসেম্বর বোরহান উদ্দিন থানায় আরো একটি মামলা হয়েছিল। সেই মামলায় তার পাঁচ বছরের সাজা হয়। তিনি ওই মামলার সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে বোরহান উদ্দিন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।
জুবায়ের আহমেদ সুমনের আরো তিন সহযোগী জাফর ইকবাল ওরফে কাজল, সাগর ও ছামিরকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি। এর মধ্যে জাফর ইকবাল ও সাগর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। তাদের জবানবন্দিতে সুমনের নাম উঠে আসে।
সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির ডিআইজি মো. শাহ আলম বলেন, প্রতিদিন অনেক প্রতারণার ঘটনা ঘটে। ঢাকার শিক্ষিত এক গৃহবধূ প্রতারণার শিকার হয়ে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ টাকা হারিয়েছেন। আমরা এই কথিত জিনদের দুই ভাগে ভাগ করেছি। তাদের মধ্যে একটি হচ্ছে ‘টিভি জিন’, আরেকটি হচ্ছে ‘মোবাইল জিন’।