রাজস্ব নিরীক্ষার ক্ষমতা বাদ
দুর্নীতির সুযোগ আরও বাড়বে : টিআইবি

বাংলাদেশের প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ১০:০৩

সরকারি হিসাব নিরীক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৫-এ মহা হিসাব নিরীক্ষক বা সিএজির রাজস্ব নিরূপণ ও আদায়ের নিরীক্ষা করার ক্ষমতা বাদ দেওয়া হয়েছে। এই পদক্ষেপকে দুর্নীতি ও অনিয়মের ক্ষেত্রে একটি খোলামেলা সুযোগ হিসেবে দেখছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটি বলছে, এই অধ্যাদেশের কিছু ধারা সিএজির সাংবিধানিক স্বাধীনতার প্রতি আঘাত এবং রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতার অভাব তৈরি করবে।
টিআইবি বলছে, অধ্যাদেশটির ৭ ধারায় সিএজিকে রাজস্ব নিরূপণ ও আদায় নিরীক্ষার সুযোগ না দেওয়া দেশের সরকারি রাজস্ব ব্যবস্থার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি সংকুচিত করবে।
সংস্থাটি এক বিবৃতিতে জানায়, ‘রাজস্ব নিরূপণ ও আদায়ে অনিয়ম এবং দুর্নীতি বাংলাদেশের জন্য এক পুরোনো সমস্যা, যা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়েও কেন উপেক্ষা করা হচ্ছে তা আমাদের কাছে অজানা।’ তারা এই অধ্যাদেশে সিএজির ক্ষমতা খর্ব করার পেছনে সরকার ও সংশ্লিষ্ট স্বার্থান্বেষী মহলের প্রভাব থাকার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘সরকারি রাজস্ব নিরূপণ ও আদায়ের নিরীক্ষা সিএজির একমাত্র কাজ ছিল। এটি যদি এখন নিয়ন্ত্রণমুক্ত না থাকে, তাহলে রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় দুর্নীতি আরও ব্যাপক হতে পারে।’
তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী সিএজির রাজস্ব নিরীক্ষণের ক্ষমতা নিশ্চিত করা হয়েছে, অথচ অধ্যাদেশে সে সুযোগ না রাখা সরকারি একাডেমিক দুর্বলতা এবং জাতীয় স্বার্থের প্রতি অবহেলা হিসেবে দেখছে টিআইবি।
অধ্যাদেশের ১৭ ধারায় বলা হয়েছে, সিএজিকে আঞ্চলিক, আন্তর্জাতিক বা বিদেশি সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করার আগে সরকারের অনুমতি নিতে হবে। ১৮ ধারায় সিএজির জন্য বিধি প্রণয়নের ক্ষেত্রে সরকারের অনুমোদন নেওয়ার বাধ্যবাধকতা রাখা হয়েছে। টিআইবি এসব বিধানকে সিএজির সাংবিধানিক মর্যাদার প্রতি অবজ্ঞা হিসেবেই দেখছে।
টিআইবি আরও বলেছে, ‘এ ধরনের বিধান সিএজির স্বাধীনতা সীমাবদ্ধ করবে এবং সরকারের আর্থিক খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে বাধাগ্রস্ত হবে।’ তাদের মতে, সরকারি প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হলে সরকারের সামগ্রিক কার্যক্রমে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না।
এর আগে, ‘পাবলিক অডিট বিল-২০২৪ এর খসড়া নিয়ে টিআইবি উদ্বেগ প্রকাশ করে। তারা খসড়ায় পাঁচটি সুপারিশ প্রদান করেছিল, তবে সেগুলো বিবেচনা করা হয়নি। টিআইবি এসব সুপারিশ অর্থ ও আইন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাদের কাছে পাঠিয়েছিল। তারা আশা করেছিল, বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো সাড়া মেলেনি।
টিআইবি বলছে, রাজস্ব নিরূপণ ও আদায় সংক্রান্ত বিষয়ে সিএজির ক্ষমতা খর্ব করা সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় দুর্নীতি এবং অনিয়মের সুযোগ বাড়াবে। সেক্ষেত্রে এটি সরকারের নিজস্ব অর্থনৈতিক খাতের ওপর প্রভাব ফেলবে, এমনকি আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কেও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘আমরা এখনও আশাবাদী যে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাগণ এসব বিষয় গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় নেবেন এবং সিএজির সাংবিধানিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।’
- এএইচএস/এটিআর