আমমোক্তারনামা দলিল বানাতে ব্যর্থ হাসিনার আলোচিত পিয়ন
নিউইয়র্ক প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১:০৩
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে আমমোক্তারনামা দলিল বানাতে ব্যর্থ হয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আলোচিত সেই ৪০০ কোটি টাকার মালিক পিয়ন জাহাঙ্গীর আলম।
বুধবার (৪ ডিসেম্বর) আমমোক্তারনামা দলিল (পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি) সংক্রান্ত কাজ করাতে বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেলের কার্যালয়ে গিয়ে ফিরে যান তিনি। তার কাজ হয়নি।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কনসাল জেনারেল মো. নাজমুল হুদা।
কনসাল জেনারেল মো. নাজমুল হুদা বলেন, বুধবার (৪ ডিসেম্বর) শেখ হাসিনার আলোচিত সেই ৪০০ কোটি টাকার মালিক পিয়ন জাহাঙ্গীর আলম আমমোক্তারনামা দলিল (পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি) সংক্রান্ত কাজ করাতে কনস্যুলেট কার্যালয়ে এসেছিলেন। তাকে চিনতে পারেন অনেকেই। ফলে তার সেই আমমোক্তারনামা দলিল সংক্রান্ত কাজটি করা হয়নি।
ডেপুটি কনসাল জেনারেল এসএম নাজমুল হাসান বলেন, শেখ হাসিনার আলোচিত সাবেক পিয়ন জাহাঙ্গীর আলম নিউইয়র্ক কনস্যুলেট কার্যালয়ে আসার খবর শুনে সবাই সতর্ক হয়ে যান। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা কেউই তার সেই কাজটি করেননি।
এ ব্যাপারে শেখ হাসিনার আলোচিত সেই ৪০০ কোটি টাকার মালিক পিয়ন জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলেও সম্ভব হয়নি।
পিয়ন জাহাঙ্গীর আলম আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেই চলতি বছরের ১৪ জুলাই রাতে দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে পালিয়ে যান। পরদিন ১৫ জুলাই বিকালে গণমাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন জাহাঙ্গীরের বড় ভাই মো. মীর হোসেন। তিনি নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার খিলপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন।
এর আগে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তার বাসার সাবেক এক পিয়নের অর্থ-সম্পদের বিষয়টি সামনে আনেন। তিনি বলেন, ‘আমার বাসায় কাজ করেছে, পিয়ন ছিল সে, এখন ৪০০ কোটি টাকার মালিক। হেলিকপ্টার ছাড়া চলে না। বাস্তব কথা। কী করে বানালো এত টাকা? জানতে পেরেছি, পরেই ব্যবস্থা নিয়েছি।’
শেখ হাসিনা ওই পিয়নের পরিচয় নিয়ে ইঙ্গিত না দিলেও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একাধিক সূত্র জানায়, সেই পিয়নের নাম জাহাঙ্গীর আলম। তাকে নিয়ে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বিশেষ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল। তার বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থেকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহায়তা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল।
জাহাঙ্গীর প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মচারী হিসেবে ২০০৯ থেকে ২০১৮ সালের দুই মেয়াদের পুরোটা সময় এবং প্রধানমন্ত্রীর টানা তৃতীয় মেয়াদেরও কিছু সময় ছিলেন। শেখ হাসিনা বিরোধী দলে থাকার সময়ও জাহাঙ্গীর তার বাসভবন সুধা সদনে ব্যক্তিগত স্টাফ হিসেবে কাজ করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জাহাঙ্গীর আলম শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত কর্মচারী হলেও নিজের পরিচয় দিতেন প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত বিশেষ সহকারী। এই পরিচয় ব্যবহার করে নিয়মিত সচিবালয়ে তদবির বাণিজ্য করতেন। একইসঙ্গে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের কাছে নানা তদবির করে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন।
একই পরিচয় ব্যবহার করে তিনি নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতির পদও বাগিয়ে নিয়েছিলেন। নোয়াখালী-১ সংসদীয় আসনে নিজের একটি রাজনৈতিক বলয় তৈরি করেছেন।
জেলার একটি গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, জাহাঙ্গীর বুঝতে পেরেছেন যেকোনো সময় তাকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে। এ জন্য যেভাবেই হোক যেকোনো উপায়ে দেশ ছাড়ার পরিকল্পনা করেন তিনি।
এদিকে, জাহাঙ্গীর আলম, তার স্ত্রী কামরুন নাহার ও তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করার নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। সেইসঙ্গে তাদের হিসাব খোলার ফরমসহ যাবতীয় তথ্য পাঁচদিনের মধ্যে পাঠাতে বলা হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) সব ব্যাংকে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা পাঠিয়েছেন বলে জানা যায়।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠানে উল্লিখিত ব্যক্তিবর্গ ও তাদের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের নামে কোনও হিসাব থাকলে সেসব হিসাবের লেনদেন মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ২৩(১)(গ) ধারার আওতায় ৩০ দিনের জন্য স্থগিত রাখার নির্দেশনা দেওয়া হলো।
কৌশলী ইমা/এমজে