• শুক্রবার, ১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪২৮
‘রোজিওলা ইনফেন্টাম’কে মানুষ সাধারণত হাম বলে ভুল করে

হারপেস ভাইরাস-৬ নামে একটি ভাইরাসের সংক্রমণেএই রোজিওলা ইনফেন্টাম নামক অসুখ হয়

সংগৃহীত ছবি

ফিচার

‘রোজিওলা ইনফেন্টাম’কে মানুষ সাধারণত হাম বলে ভুল করে

  • প্রকাশিত ১১ অক্টোবর ২০১৮

ইনফেন্টাম নাম শুনেই বোঝা যায় এই অসুখ সাধারণত শিশুদের হয়ে থাকে। এটি একটি ভাইরাসজনিত রোগ। রোজিওলা ইনফেন্টাম (Roseola Infantum)। ইনফেন্ট (Infant) অর্থাৎ শিশু বা (Toddler) টডলার, যা তিন মাস থেকে ৩৬ মাস বয়সের শিশুকে বোঝায়। হিউম্যান হারপেস ভাইরাস-৬ (Human hurpesvirus 6) নামে একটি ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে এই রোজিওলা ইনফেন্টাম নামক অসুখ হয়। সাধারণত একটু বড় বাচ্চা বা প্রাপ্ত বয়স্কদের আক্রান্ত করতে পারে না। তিন মাস থেকে ছয় বছরের বাচ্চাদের এই ভাইরাসের আক্রমণের প্রভাব বেশি পরিলক্ষিত হয়। নতুন এই রোগ সংক্রমণ সম্পর্কে বাংলাদেশের খবরের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় মুখোমুখি হয়েছেন বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের নবজাতক, শিশু-কিশোর রোগ, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও শিশু বিভাগের অধ্যাপক (ডা.) এমএ জায়গীরদার। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলাদেশের খবরের বিশেষ প্রতিনিধি আসিফ উল আলম সোহান

Dr. M A jayegir

প্রফেসর (ডা.) এমএ জায়গীরদার

বাংলাদেশের খবর : রোজিওলা ইনফেন্টাম হওয়ার কারণ কী?

প্রফেসর (ডা.) এমএ জায়গীরদার : এটি একটি ভাইরাসজনিত রোগ। বাংলাদেশে এই ভাইরাসের প্রভাব ইতিপূর্বে তেমন দেখা না গেলেও বর্তমান জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের কারণে হিউম্যান হারপেস ভাইরাস-৬ এর কারণে অনেক শিশুই ইদানীং এই রোগে আক্রান্ত হয়ে আমাদের কাছে আসছে। এই অসুখটি হিউম্যান হারপেস-৬ নামক এক ভাইরাসের আক্রমণে হয়। মানুষ সাধারণত হাম বলে ভুল করে, কিন্তু এটি হাম নয়। হামের প্রতিষেধক টিকা আছে, কিন্তু রোজিওলা ইনফেন্টামের কোনো টিকা বা প্রতিষেধক এখন পর্যন্ত আবিষ্কার হয়নি।

বাংলাদেশের খবর : এই অসুখ কি সব বয়সেই হয়?

প্রফেসর (ডা.) এমএ জায়গীরদার : না, হিউম্যান হারপেস ভাইরাস-৬ সাধারণত বেবিদের আক্রমণ করে। সহজ করে বললে তিন মাস থেকে ৬-৭ বছরের শিশুরা এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়। ১৫ বছরের পর বা প্রাপ্তবয়স্কদের এই ভাইরাসের কারণে অসুস্থ হওয়ার ঘটনা তেমন কোথাও দেখা যায়নি।

বাংলাদেশের খবর : অনেকে প্রথমে এটাকে হাম বলে ধারণা করেন?

প্রফেসর (ডা.) এমএ জায়গীরদার : হ্যাঁ, লক্ষণ ও শরীরের উপসর্গ দেখে সাধারণ মানুষের এমন ভুল হওয়াটাই স্বাভাবিক। তবে এটা হাম নয়। শরীরে লাল ফুঁসকুড়ির মতো র্যাশ দেখা দেয় বলেই এটাকে হাম বলে ভুল করেন অনেকে। সতর্কতার বিষয় হচ্ছে, হামের প্রতিষেধক ভ্যাকসিন বের হয়েছে কিন্তু রোজিওলা ইনফেন্টামের কোনো ভ্যাকসিন নেই। তাই এ বিষয়ে সচেতন না হলে অনাহূত বিপদের আশঙ্কা থেকে যায়।

বাংলাদেশে খবর : এই অসুখটি যে আসলে হাম নয়, সাধারণ মানুষ তা কী করে বুঝবে?

প্রফেসর (ডা.) এমএ জায়গীরদার : সুন্দর প্রশ্ন করেছেন। যদিও হাম এবং রোজিওলা ইনফেন্টাম দুটোই ভাইরাসজনিত রোগ। এর মধ্যে হাম সম্পূর্ণ প্রতিরোধযোগ্য। কিন্তু রোজিওলা ইনফেন্টাম প্রতিরোধযোগ্য নয়। হাম ওঠার সঙ্গেই গায়ে জ্বর আসে। শরীরে ব্যথা ও লাল লাল ঘামাচির মতো ফুঁসকুড়ি দেখা দেয়। শিশু খেতে চায় না। রোজিওলা ইনফেন্টামে শিশুর শরীরে ভাইরাস প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে গা গরম হতে দেখা যাবে আবার কিছুক্ষণ পরেই শরীর স্বাভাবিক তাপমাত্রায় ফিরে আসে। এ কারণে অনেক সময় শিশুর বাবা-মা ব্যাপারটি বুঝে উঠতে পারেন না। এরপর ৪-৫ দিনের মধ্যেই আবার জ্বর আসবে এবং এই জ্বর ১০১ ডিগ্রি থেকে ১০৫ পর্যন্ত ওঠা-নামা করবে। ১০০ নিচে জ্বর নামানো কষ্টকর হবে। সঙ্গে থাকবে সর্দি, প্রচণ্ড কাশি, গলা ব্যথা, নাক দিয়ে পানি পড়তে থাকবে, কাশিটা অনেক সময় খুব বেড়ে যায়। ফলে শিশুর দম নিতে কষ্ট হয়। এ সময় বাবা-মায়ের আতঙ্কগ্রস্ত হওয়াটাও স্বাভাবিক। এ রকম চলতে থাকবে ৩ থেকে ৭ দিন। এরপর হঠাৎ করে শরীরে খুব ঘাম দিয়ে জ্বর একেবারে নেমে যাবে, সেই সঙ্গে শিশুর শরীরজুড়ে লাল তেজস্ক্রীয় ফুঁসকুড়ি দানা উঠবে। হাত দিয়ে চামড়া টান দিলে মিলিয়ে যাবে। খুব চুলকানি হবে। শিশু দুই হাত দিয়ে মুখ চুলকিয়ে ছিলে ফেলতে চাইবে। এই র্যাশ সাধারণত ৫-৭ দিনের মধ্যে আবার চলে যাবে। সাধারণত এ ধরনের লক্ষণগুলো দেখা দিলে বুঝতে হবে, এটা হাম নয় এটা ভাইরাসের কারণে রোজিওলা ইনফেন্টামে টার্ন করেছে। 

বাংলাদেশের খবর : এই রোগ হলে ভয়ের কিছু কি আছে? হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন আছে কি?

প্রফেসর (ডা.) এমএ জায়গীরদার : সাধারণত এই রোগে বাড়িতেই পর্যবেক্ষণের মধ্যে রেখে ঠিকমতো যত্ন নিলে শিশু ৭ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে যায়। জ্বরের জন্য নাপা বা এইচ জাতীয় ড্রপ বা সিরাপ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী শিশুর ওজন বুঝে দেওয়া যেতে পারে। কোনোভাবেই ছয় ঘণ্টার আগে আবার এসব সিরাপ দেওয়া ঠিক নয়, তবে জ্বর বেশি হলে মাথায় পানি ও শিশুর শরীর হালকা স্পঞ্জ বা মুছে দিতে পারেন। তবে যদি কোনোভাবেই জ্বর ১০১-এর নিচে না নামানো যায় অথবা শিশুর বুকের মধ্যে ঘড়ঘড় শব্দ হয়, তবে দেরি না করে অবশ্যই হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। জ্বর যদি ১০০-এর নিচে থাকে শিশুর নিঃশ্বাস নিতে কোনো অসুবিধা না দেখা দেয়, শিশু ঠিকমতো খায়, অন্য কোনো রকম অস্বাভাবিক কিছু পরিলক্ষিত না হয়; তবে ভয়ের কিছু নেই। শিশুকে স্বাভাবিক খাবারের পাশাপাশি তরল খাবার বেশি করে খেতে দিন। আর ১৫ বছর বয়সের আগে কখনই আপনাদের শিশুকে এস্পিরিন জাতীয় কোনো ওষুধ খাওয়াবেন না।

বাংলাদেশের খবর : জনসচেতনতায় রোজিওলা ইনফেন্টাম সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানানোর জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

প্রফেসর (ডা.) এমএ জায়গীরদার : ধন্যবাদ আপনাকেও। সবশেষে বলব, সচেতনভাবে সবাই লক্ষণগুলো বুঝুন। রোজিওলা ইনফেন্টামকে হাম মনে করে ভুল করবেন না।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads