শরৎ, তোমার অরুণ আলোর অঞ্জলি।

ছড়িয়ে গেল ছাপিয়ে মোহন অঙ্গুলি\

শরৎ, তোমার শিশির-ধোওয়া কুন্তলে

বনের-পথে-লুকিয়ে-পড়া অঞ্চলে

আজ প্রভাতের হূদয় ওঠে চঞ্চলি।

দুর্গাপূজাকে ঘিরে চারপাশে এরই মধ্যে সাজসাজ রব পড়েছে। মন্দিরে মন্দিরে মহাসমারোহে চলছে দেবীকে বরণের প্রস্তুতি। মাকে সবচেয়ে অপূর্ব রূপটি দিতে ব্যস্ত প্রতিমা শিল্পীরাও। পূজার এ দিন ক’টিতে নিজেকে সাজাতে পছন্দ করেন নারীরাও। আশ্বিনের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠ দিন থেকে দশম দিন পর্যন্ত পাঁচ দিন দুর্গোৎসবের ব্যাপ্তি। আর এই পক্ষটিকে বলা হয় দেবীপক্ষ। শারদ উৎসবের ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত ম্লপে ম্লপে পূজা-অর্চনা আর দেবী দর্শনের মধ্য দিয়েই কাটে। পূজার এ কয়টি দিন সেজেগুজে বন্ধু-বান্ধব আর পরিবারের সঙ্গে শুধুই ঘুরে বেড়ানোর দিন। পূজার সাজে নিজেকে আলাদা করতে তাই আগে থেকেই ঠিক করে রাখতে হবে কোন দিনের সাজ কেমন হবে। কেননা মনের মতো সাজার এমন উপলক্ষ আর হয় না। পূজার দিনগুলোতে কি করে নিজেকে সাজিয়ে  তুলবেন বিষয়ে বিস্তারিত জানাচ্ছেন- মনিরা তাবাস্সুম

দুর্গাষষ্ঠীর সাজ

শারদীয় দুর্গোৎসবে শুক্লপক্ষের ষষ্ঠ দিনটিকে বলা হয় দুর্গাষষ্ঠী। পূজোর আনুষ্ঠানিকা শুরু হয় এ দিন থেকেই। তাই ষষ্ঠীর দিনের সাজ হালকা হওয়াই ভালো। চোখে হালকা শ্যাডোসহ চিকন লাইনার আর পছন্দসই রঙের লিপস্টিকে আপনার ্লিগ্ধ রূপ ফুটে উঠবে। টিনএজাররাও লাইট এবং ন্যাচারাল সাজে সাজাতে পারেন নিজেদের। পোশাকেও থাকতে পারে ছিমছাম ভাব। তাঁতের শাড়ি কিংবা ব্লক বা এপ্লিকের শাড়ি এদিনের সাজের সঙ্গে মানিয়ে যাবে বেশ। শাড়ি পরতে না চাইলে সালোয়ার কামিজের পাশাপাশি জিন্স ফতুয়াও পরা যায় স্বাচ্ছন্দ্যে। আমাদের দেশীয় ফ্যাশন হাউজগুলোতে শাড়ির পাশাপাশি টিউনিক, লং কামিজ এবং বিভিন্ন ডিজাইনের সালোয়ার-কামিজের মধ্য থেকে এ দিনের জন্য বেছে নিতে পারেন যে কোন একটি। 

মহাসপ্তমীর সাজ

সপ্তমীর সাজে মেকআপটা একটু ভারী হতেই পারে। এদিন ম্লপে ম্লপে ঘোরার পাশাপাশি যাওয়া হয় আ্তীীয় পরিজনের বাড়িতেও। এদিনের সাজকে পরিপূর্ণ করতে ব্যবহার করতে পারেন একটু গাঢ় লিপস্টিক ও শ্যাডো, চোখের ধরন বুঝে আইলাইনার আর সেই সঙ্গে মাসকারা। পোশাকে এদিন শাড়ি পরলে বেছে নিতে পারেন কাতান, জর্জেট বা সিল্কের শাড়ি। ব্যস, এতেই সপ্তমীর সাজ পরিপূর্ণ।

মহাঅষ্টমীর সাজ

দেবীকে অঞ্জলি অর্পণের মধ্য দিয়ে অষ্টমীর সকাল শুরু হয়। মন্দিরে দেবীকে পুষ্পার্ঘ্য দেওয়ার  হয়। দিনে অঞ্জলি দেওয়ার সময় শাড়ির সঙ্গে খোঁপায় তাজা ফুল পরতে পারেন। অঞ্জলি অর্পনের সময় সাজে ফুলের ব্যবহার আপনাকে দিবে এক স্নিগ্ধতার আবেশ। তবে অষ্টমীর রাতের সাজে গর্জিয়াস লুকটাকেই পছন্দ করে সবাই। শাড়ি-গহনা-মেকআপ, সবক্ষেত্রেই থাকে গর্জিয়াস লুক। টিনএজ মেয়েরা গাউন আর ট্রেন্ডি চুলের সাজে সাজাতে পারে নিজেদের। শাড়িতে কাতান, বেনারশি, মসলিন বেছে নিয়ে সাজে আনতে পারেন আভিজাত্য ছোয়া।

মহানবমীর সাজ

নবমীতে হয় সান্ধ্যপূজা। সান্ধ্যপূজার জন্য মহিলারা বেছে নেন ভারি গহনা, রঙ-বৈচিত্র্যপূর্ণ পোশাক, ভারী মেকআপ, চুলের সাজ, তাজা ফুল এদিনের সাজের অন্যতম অনুষঙ্গ।

বিজয়া দশমীর সাজ

শারদীয়া পূজার প্রধানতম আকর্ষণ দশমী। এদিন দেবী বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় পূজার সব আনুষ্ঠানিকতা। বিবাহিতরা মেতে ওঠেন সিঁদুর খেলায়। দশমীর সাজ মানেই লাল পেড়ে সাদা শাড়ি, সেই সঙ্গে মিলিয়ে মেকআপ আর ভারী গহনা। পূজার জন্য শাড়ি কিনবেন, অথচ তাতে একটি লালপেড়ে সাদা রঙের শাড়ি থাকবে, না তাই কি হয়!  লাল-সাদা শাড়ি ছাড়া দুর্গাপূজার সাজ যেন ভাবাই যায় না। লাল হলো উৎসব আর সাদা হলো পবিত্রতা ও শান্তির প্রতীক। এই দুইয়ের মিশেলে ফুটে ওঠে পূজার চিরন্তন রূপ।

দশমীর দিন এক প্যাঁচের সাদা ও লালপাড়ের শাড়ি পূজায় মেয়েদের সবচেয়ে  পছন্দের সাজ। দশমীর দিনটিতে অধিকাংশ নারীরাই বেছে নেন এই শাড়িটি। যুগযুগ ধরে লালপেড়ে গরদের এই শাড়ির আবেদন চিরন্তন। চোখ ভরে টানা কাজল, লাল টিপ আর সোনার গহনায় সাজে ফুটে ওঠে অন্য এক আভিজাত্য। দিন দিন ফ্যাশনের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আজকাল শুধু গরদে নয়, অ্যান্ডি, তসর, মসলিন ধরনের কাপড়েও তৈরি হচ্ছে লাল সাদার চিরন্তন এ শাড়ি। । যদিও এখন সাদার জায়গায় স্থান করে নিয়েছে অফ হোয়াইট, হালকা গোল্ডেন জমিনের শাড়ি। কখনো একরঙ্গা লালপাড় কখনো লালপাড়ে ফুটে উঠেছে ফুলেল নকশা। কোনো কোনো শাড়িতে আবার সাদা জমিনে ব্যবহার করা হয়েছে পদ্ম ফুল, ত্রিশূল, দেব-দেবীর অবয়ব, ওম লেখাসহ পূজার বিভিন্ন মোটিফ। সেখান থেকে বেছে নিতে পারেন নিজের পছন্দের শাড়িটি।

পূজার সাজের সঙ্গে চুলে তাজা ফুল থাকবে না তা ভাবাই যায় না। খোলা চুলে কানের পাশে গুঁজে দিতে পারেন যে কোনো তাজা ফুল। আর খোঁপায়ও তাজা ফুলের মালা জড়িয়ে নিতে পারেন। বিজয়া দশমীর সাজ এতেই পূর্ণ হবে।

মডেল : রোমানা আমীন
পোষাক : রোমানা জামদানি হাউজ
সাজ : কুইন্স বিউটি পার্লার
গহনা : ড্রিম টাচ