৭৬ বছরের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে জামালপুরের বুড়িমার মিষ্টি
মাল্টিমিডিয়া করেসপন্ডেন্ট
প্রকাশ: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৬:৪৮
কোনো শুভ দিনক্ষণ বা সুখবর এলেই মিষ্টি মুখ করার ধুম লেগে যায় জামালপুরের মানুষের। তবে সব দোকানের মিষ্টি মানুষের মুখে আটকায় না। মিষ্টি মুখ করার কথা এলেই আসে জামালপুরের ঐতিহ্যবাহী 'বুড়িমার মিষ্টি'। গুণে-মানে ও স্বাদে জামালপুরের মানুষের কাছে প্রিয় হয়ে উঠেছে এ দোকানের মিষ্টি।
অমলাবালা সাহা নামে এক নারীর হাত ধরে ৭৬ বছরেরও বেশি সময় আগে এই মিষ্টি ব্যবসার শুরু হয়েছিল। তাকে সবাই বুড়িমা বলতেন, সেভাবেই এই দোকান পরিচিত হয় বুড়িমার মিষ্টির দোকান হিসেবে। মিষ্টির দোকানটি এই জেলার ঐতিহ্য বহন করে যাচ্ছে।
মিষ্টিপ্রিয় মানুষের কাছে এই দোকানের কাঁচাগোল্লা, রসগোল্লা, প্যারাসহ বিভিন্ন মিষ্টির অনেক সুনাম রয়েছে। এ দোকানের দইও বেশ পছন্দ করেন মানুষ। বুড়িমার মিষ্টির কদর শুধু জামালপুরেই নয়, পাশের জেলা, বিভাগ বা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা লোকজনও এখান থেকে দই-মিষ্টি নিয়ে যান।
জামালপুর জেলা শহরের রানীগঞ্জ বাজার এলাকায় জেলা শিল্পকলা একাডেমির সামনে ‘মা মিষ্টান্ন ভান্ডার’ দোকানটির অবস্থান। তবে সবাই দোকানটিকে বুড়িমার মিষ্টির দোকান হিসেবেই চিনেন।
বর্তমানে এই দোকানে পাওয়া যাচ্ছে রাজভোগ, চমচম, সাদা চমচম, স্পন্স, ক্ষিরমোহন, ছানার পায়েস, মোণ্ডা, কাঁচাগোল্লা, কালো জাম, মালাই চপ, হাসি-খুশি, ছানার পোলাও, প্যারা, সন্দেশ। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের দই-চিড়াসহ ঘি পাওয়া যায়।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বুড়িমার এই মিষ্টির দোকানের শুরু ৭৬ বছরেরও আগে। অমলাবালা সাহার বাড়ি মানিকগঞ্জের বালিয়াটি। বিয়ের পর স্বামীর সঙ্গে জামালপুরে এসেছিলেন তিনি। স্বামী শম্ভুনাথ সাহার ছোট আকারের কাপড়ের ব্যবসা দিয়ে সংসার ঠিকমতো চলত না। পরে অমলাবালা দই-মিষ্টি বানানো শেখেন। প্রথমে ছোট পরিসরে দই-চিড়া ও মিষ্টির দোকান দেন। লোকজন তার বানানো দই-মিষ্টি বেশ পছন্দ করতে থাকেন। এরপর লোকমুখে দোকানের প্রচার-প্রসার বাড়তে থাকে। অমলাবালা সাহা ২০০৪ সালে মারা যান। তার বড় ছেলে নারায়ণ চন্দ্র সাহার ছেলে সুমন কুমার সাহা এখন ব্যবসা দেখভাল করেন।
সদূর বরিশাল থেকে চাকরির সুবাদে আসা সুজন মিত্র জানান, স্থানীয় লোকজনের মুখে শুনেছেন বুড়ির দোকানের দই-মিষ্টির কথা। পরে এসে দেখেন একটি বৃদ্ধ মহিলার ছবি দেওয়া নাম ‘মা মিষ্টান্ন ভান্ডার’। এখানকার মিষ্টি অনেক সুস্বাদু, আর দইটাও অনেক ভালো। বেশ কয়েকবার এসেছি।
বর্তমানে মা মিষ্টান্ন ভান্ডারের (বুড়িমার দোকান) মালিক সুমন কুমার সাহা বলেন, পদ্ম পাতায় দই-চিড়া বিক্রি করতেন বুড়িমা। তার এক বান্ধবী তাকে দই ও মিষ্টি বানানো শিখিয়ে ছিলেন। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগান তিনি। তার এ কাজে কিশোর বয়সেই সহযোগিতা করতেন বড় ছেলে নারায়ণ চন্দ্র সাহা। বুড়িমার স্বামী শম্ভুনাথ সাহা মারা যাওয়ার পর ছেলেকে নিয়ে রাতদিন পরিশ্রম করে দই-চিড়া ব্যবসাটি চালিয়ে যান। তার তৈরি সুস্বাদু দই-চিড়ার সুনাম জেলা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। ব্যবসা ভালো হওয়ায় দই-চিড়ার সাথে মিষ্টি বানানো শুরু করেন তিনি। জেলা জুড়ে সুনাম ছড়িয়ে পড়লে গড়ে তোলেন ‘মা মিষ্টান্ন ভান্ডার’, যা বুড়িমার মিষ্টির দোকান নামে বহুল পরিচিতি লাভ করে।
অমলাবালার নাতি আরও বলেন, আমার ঠাকুরমা যেভাবে বিভিন্ন বাজার থেকে দুধ সংগ্রহ করে মিষ্টি তৈরি করতেন, আমি তাঁরই ধারাবাহিকতায় মিষ্টি তৈরি করে যাচ্ছি। তাঁর তৈরি মিষ্টির গুণগত মান ও স্বাদ ধরে রেখেই দোকান পরিচালনা করছি। এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে।
এমএইচএস