প্রতীকী ছবি
মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা সম্রাট বাবর। পিতার দিক থেকে তিনি ছিলেন তৈমুর লং এবং মাতার দিক থেকে চেঙ্গিস খানের বংশধর। বাবর যেই তৈমুরি বংশের ছিলেন, তারা মূলত বারলাস গোত্রের অন্তর্গত। যারা কথা বলতেন তুর্কি ভাষায়।
বাবারের মতো সম্রাট হুমায়ুনও মাতৃভাষা হিসেবে তুর্কি ব্যবহার করতেন। তবে শের শাহের কাছে পরাজিত হয়ে তিনি সাময়িকভাবে তার রাজত্ব হারান। তারপর পারস্যের সাফাভিদ সম্রাটের সভায় আশ্রয় নেন।
কিন্তু ১৫৫৫ সালে তিনি যখন ফের ভারতবর্ষে ফিরে আসেন, তখন সঙ্গে করে নিয়ে আসেন হাজারো সভাসদ, শিল্পী, কবি এবং সৈন্য। যারা ফার্সি ভাষায় কথা বলতেন। পাশাপাশি পারস্যের সংস্কৃতি দ্বারা প্রভাবিত ছিল। বলা হয়ে থাকে- ঠিক এই সময় থেকেই মুঘল রাজসভায় তুর্কি ভাষার ব্যবহার ক্রমান্বয়ে কমতে শুরু করে এবং তার স্থান দখল করতে থাকে ফার্সি ভাষা।
আর আকবরই প্রথম মুঘল সম্রাট, যিনি ফার্সি ভাষাকে মুঘল সাম্রাজ্যের আনুষ্ঠানিক এবং দাপ্তরিক ভাষায় রূপ দেন। আকবরের সময়কাল থেকেই ফার্সি ভাষা চাগাতাই তুর্কির জায়গা দখল করে এবং আকবরও রাজসভায় সবসময় এই ভাষায় কথা বলতেন।
ইতিহাসের পাতা ঘেঁটে জানা যায়, আকবর-পুত্র সম্রাট জাহাঙ্গীরও সম্ভবত খানিকটা তুর্কি বলতে পারতেন। কারণ ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির লেফটেনেন্ট জেনারেল উইলিয়াম হকিন্সের তুর্কি ভাষার দক্ষতায় তার মুগ্ধ হওয়ার বর্ণনা পাওয়া যায়। তিনি সম্ভবত শেষ মুঘল সম্রাট, যার তুর্কি ভাষায় খানিকটা দক্ষতা ছিল। এরপর শাহজাহান থেকে শুরু করে শেষ মুঘল সম্রাট পর্যন্ত কারোরই তুর্কি ভাষায় কথা বলার বর্ণনা পাওয়া যায়নি।
আওরঙ্গজেবের শাসনামলের শেষ দিকে দিল্লি অঞ্চলের মানুষেরা উর্দু ভাষায় কথা বলা শুরু করেন, তখন উর্দুকে বলা হতো জবান-এ-উর্দু। উর্দু শব্দটি তুর্কি ওর্দু শব্দ থেকে এসেছে, যার মানে সৈন্য। ধারণা করা হয়- মুঘলদের সৈন্য শিবির থেকে উর্দু ভাষার প্রচলন। তবে ধীরে ধীরে এটি রাজসভার সভাসদ এবং মুঘল সম্রাটদেরও ভাষা হয়ে ওঠে।
বিএইচ/