Logo
Logo

ফিচার

পানিরও আছে কান!

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৪:২০

আপনি জানেন কি, পানিরও ‘কান’ আছে? হ্যাঁ, ঠিকই শুনছেন। পানিও শুনতে পায় আপনার-আমার মতো। জাপানের গবেষক ড. মাসারু এমোতো তার এক বিশেষ পরীক্ষার মাধ্যমে এমন তত্ত্বই সামনে এনেছিলেন। তাঁর পরীক্ষা নিয়ে বিশ্বজুড়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। ড. মাসারু বলেছিলেন, পানি কেবল রাসায়নিক উপাদান নয়, বরং মানুষের অনুভূতি, শব্দ, সুর বা চিন্তা– এসবের প্রভাবেও তার গঠন বদলে যেতে পারে।

মাসারুর সবচেয়ে আলোচিত পরীক্ষাগুলোর মধ্যে ছিল পানির কণার ছবি তোলা। তিনি দাবি করেন, যখন ভালোবাসা, ধন্যবাদ বা শান্তির মতো ইতিবাচক অনুভূতি পানির সামনে প্রকাশ করা হয় তখন তার কণা হয়ে উঠে সুন্দর এবং সিমেট্রিকাল। আর যখন পানির ওপর নেতিবাচক প্রভাব আসে, যেমন- ঘৃণা বা ক্রোধ, তখন কণাগুলো হয়ে পড়ে বিকৃত এবং অগোছালো। 

তবে এই পরীক্ষাগুলোর বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নিয়ে সমালোচনা আছে। অনেক বিজ্ঞানী তাঁর পরীক্ষার পদ্ধতিকে বিতর্কিত মনে করেন এবং বলেন, এটি পুরোপুরি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত নয়।

মাসারুর পরীক্ষা পদ্ধতি
ড. মাসারুর তার পরীক্ষায় মূলত পানির ওপরে নানা ধরনের প্রভাব প্রয়োগ করেছেন। তিনি পানিকে বরফে পরিণত করে তার ছোট ছোট কণার ছবি তুলেছেন। তিনি দাবি করেছেন, যখন পানির সামনে কোনো ইতিবাচক কথা হয়, যেমন ‘ভালোবাসা, ‘ধন্যবাদ’, বা ‘শান্তি, তখন পানির কণাগুলো হয়ে ওঠে অত্যন্ত সুন্দর এবং সিমেট্রিকাল। আর যখন পানি কোনো নেতিবাচক অনুভূতি বা শব্দের প্রভাবে থাকে, যেমন ‘ঘৃণা’ বা ‘ক্রোধ’, তখন তার কণাগুলো হয়ে পড়ে অগোছালো, বিকৃত এবং বিশৃঙ্খল।

তিনি এই পরীক্ষা চালের উপরও করেন, যেখানে ইতিবাচক শব্দের প্রভাবে চালের গন্ধ ভালো হয়, নেতিবাচক শব্দে খারাপ।

শব্দের প্রভাব
মাসারু একটি মজার বিষয় পরীক্ষা করেছিলেন, পানির ওপর সংগীতের প্রভাব। তিনি দাবি করেছেন, বিশেষভাবে ক্লাসিক্যাল সংগীত, যেমন মোজার্টের সংগীত পানির কণাকে আরও সুন্দর এবং শৃঙ্খলাবদ্ধ করে। এমনকি ভারী মেটাল বা বিশৃঙ্খল সুরের প্রভাবে পানির কণাগুলো বিকৃত হয়ে যায়। 

এই পরীক্ষা থেকে মাসারুর দাবি ছিল, শুধু শব্দ নয়, সংগীতের সুরও পানির গঠন পরিবর্তন করতে সক্ষম। বিশেষ করে শাস্ত্রীয় সংগীতের সুফল পানির কণার সৌন্দর্যতেও স্পষ্ট হতে দেখা গেছে।

চিন্তা ও ইচ্ছার প্রভাব
মাসারু বিশ্বাস করতেন, মানুষের চিন্তা বা ইচ্ছাও পানির গঠনে বিশেষ প্রভাব ফেলে। তিনি কিছু মানুষকে পানির প্রতি ভালোবাসা বা ইতিবাচক চিন্তা পাঠাতে বলেছিলেন। তারা মনোযোগ দিয়ে তা পাঠানোয় মাসারু দাবি করেন যে, এর ফলে পানির কণাগুলো পরিবর্তিত হয়ে আরও সুন্দর এবং পরিষ্কার হয়ে উঠেছিল।

মাসারু মনে করতেন, মানবচিন্তা বা ইচ্ছারও এক গভীর প্রভাব থাকতে পারে প্রাকৃতিক উপাদানগুলোর ওপর। সেই চিন্তা বা অনুভূতি যদি ইতিবাচক হয়, তাহলে তা পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানের গঠনকে সুন্দর করতে সহায়তা করে।

সমালোচনা ও বিতর্ক
তবে, মাসারুর এই গবেষণা পদ্ধতি এবং তার ফলাফল নিয়ে বিশ্বব্যাপী কিছু সমালোচনাও ছিল। অনেক বিজ্ঞানী তার পরীক্ষার পদ্ধতিকে একেবারেই দুর্বল এবং বৈজ্ঞানিকভাবে অগ্রহণযোগ্য বলে মন্তব্য করেছেন। তাদের মতে, মাসারুর পরীক্ষা পরিচালনা যথাযথভাবে হয়নি এবং এর ফলাফল প্রমাণিত হয়নি।

বিজ্ঞানী মহলে মাসারুর কাজ নিয়ে প্রশ্ন ছিল, বিশেষত যখন অন্যান্য গবেষকরা তার ফলাফল পুনরায় প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন, তখন তারা সফল হতে পারেননি। তাই বেশিরভাগ বিজ্ঞানী মনে করেন, মাসারুর পরীক্ষাগুলি যথেষ্ট নির্ভরযোগ্য নয় এবং এগুলোর বৈজ্ঞানিক ভিত্তি দুর্বল।

মাসারুর বই ও প্রভাব
ড. মাসারু তার গবেষণা নিয়ে বেশ কিছু বই লিখেছিলেন, যার মধ্যে ‘দ্য হিডেন মেসেজ ইন ওয়াটার’ (১৯৯৯) এবং ‘দ্য ট্রু পাওয়ার অব ওয়াটার’ (২০০৪) বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এই বইগুলো শুধুমাত্র বৈজ্ঞানিক নয়, বরং আধ্যাত্মিক এবং বিকল্প স্বাস্থ্যবিষয়ক ধারণার সাথে সংযুক্ত হয়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তার এই কাজগুলো অনেকের কাছে একটি আধ্যাত্মিক আলোচনা বলেও বিবেচিত হয়েছে। 

যদিও বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায়ের মধ্যে তার কাজ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে, তবুও ড. মাসারু এমোতোর বইগুলো অনেকের কাছেই এক নতুন ধরনের দর্শন এবং জীবনযাত্রার অনুপ্রেরণা। 

টিএ/এমএইচএস

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর