প্রতীকী ছবি
বিয়ে এবং বিচ্ছেদ—দুটো শব্দই মানবজীবনের একটি বিশেষ অংশ। বিয়ের মাধ্যমে দুটি হৃদয় একে অপরের সঙ্গে বাঁধা পড়ে। তবে বিচ্ছেদ ঘটে তখনই, যখন সেই সম্পর্ক আর টেকে না। কিন্তু বিচ্ছেদের কিছু ঘটনা পর্দার আড়ালে থাকে, যা সত্যিই অবিশ্বাস্য হয়। এমনই এক অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটেছে অস্ট্রিয়ায়, যেখানে এক দম্পতি ৪০ বছরের দাম্পত্যজীবনে ১২ বার বিচ্ছেদ করেছেন এবং প্রতিবারই আর্থিক সুবিধা লাভের উদ্দেশে এই পথ বেছে নিয়েছেন।
এই দম্পতির গল্পের শুরুটা যেমন প্রেমের ছিল, ঠিক তেমনি শেষও ছিল এক গভীর কৌশলের কারণে। ৪০ বছর আগে তারা প্রথম বিয়ে করেন এবং তারপর তাদের সম্পর্কের রঙ পাল্টাতে থাকে। প্রায় একসাথে থাকলেও তারা বারবার বিচ্ছেদ করেন। কিন্তু তাদের বিচ্ছেদের আসল উদ্দেশ্য ছিল—সরকার থেকে আর্থিক সাহায্য আদায়।
অস্ট্রিয়ার সরকার প্রতিবছর বিচ্ছেদকৃত নারীদের ২৮,৩০০ ডলার (প্রায় ২৪ লাখ টাকা) সাহায্য প্রদান করে। তবে এর একটি নিয়ম রয়েছে, কেবল যে নারী স্বামীকে বৈধভাবে ডিভোর্স দিয়েছেন, তারাই এই ভাতা পাবেন। তাদের নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে এই সুযোগের সদব্যবহার করেছেন এই দম্পতি। গত ৪৩ বছরে ১২ বার বিবাহবিচ্ছেদ করেছেন তারা।
১৩ বার বিবাহিত এই নারী তার প্রথম স্বামীর মৃত্যুর পর ১৯৮১ সালে বিধবা পেনশন পেতে শুরু করেছিলেন। এক বছর পর, তিনি তার থেকে কয়েক বছরের ছোট একজন পুরুষকে পুনরায় বিয়ে করেছিলেন। তিনি লরিচালক ছিলেন। চাকরি নিয়ে মতপার্থক্যের কারণে ১৯৮৮ সালে ছয় বছর পর তাদের বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে। সেখান থেকে দু’জনে বারবার বিয়ে ও ডিভোর্সের চক্র চলতে থাকে।
তাদের উদ্দেশ্য ছিল স্পষ্ট—প্রতিবার বিয়ের পর বিচ্ছেদ করে সরকারি ভাতা লাভ করা। এটি এমন এক কৌশল ছিল, যা তাদের জীবনের একটি ব্যবসায়িক উদ্যোগে পরিণত হয়েছিল। প্রতি তিন বছর পর পর তারা বিয়ে এবং বিচ্ছেদ করতেন, যাতে নারী আর্থিক সাহায্য লাভ করতে পারেন।
অদ্ভুত এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসে ২০২২ সালের মে মাসে। ১২তম বিচ্ছেদের পর, নারী পেনশন বীমা ইনস্টিটিউটে গিয়ে বিষয়টি জানালে তদন্ত শুরু হয়। সেই তদন্তে জানা যায় যে, তারা আনুষ্ঠানিকভাবে বিচ্ছেদ হলেও একসাথে বসবাস করতেন, একসাথে রান্না করতেন এবং একই বিছানায় ঘুমাতেন। প্রতিবেশী এবং আত্মীয়দের দাবি ছিল, তাদের সম্পর্কের কোনো পরিবর্তন ছিল না, শুধু কাগজে ছিল বিচ্ছেদ।
এই ঘটনার পর কর্তৃপক্ষ ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। তাদের মতে, এর ফলে যারা আসলেই বিচ্ছেদ গ্রহণ করেছেন, তাদের জন্য সরকারি সুবিধা লাভ কঠিন হয়ে পড়তে পারে। তবে এমন ঘটনা ২০২২ সালে আয়ারল্যান্ডেও ঘটেছিল বলে জানা যায়।
সূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া
এটিআর/