মহামায়া লেক
জলপ্রপাতের কলকল ধ্বনিতে প্রকৃতির গান
সাফায়েত মেহেদী
প্রকাশ: ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৫:১৯
স্বচ্ছ জলাধারের চারপাশ সবুজ চাদরে মোড়ানো। দেখে মনে হবে সুন্দরের কোনো বিস্ময়কর রাজধানী— এমনই এক দর্শনীয় স্থান চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের মহামায়া লেক। লেকটির সৌন্দর্য উপভোগ করতে ভ্রমণপিপাসুরা প্রতিদিন এখানে ভিড় জমান। কাপ্তাই লেকের পর দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃত্রিম হ্রদ এটি। ১১ বর্গকিলোমিটার আয়তনবিশিষ্ট লেকটি মিরসরাই উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের ঠাকুরদিঘি বাজার থেকে দুই কিলোমিটার পূর্বে পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত।
২০০৭-২০০৮ সালে মহামায়া প্রকল্পটির কাজ শুরু করা হয় এবং ২০০৯ সালে এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়। ২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হ্রদটিতে জমির পরিমাণ ৩৩৬০ হেক্টর। ২০১০ সালের ডিসেম্বর মাসে এটি উদ্বোধন করা হয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পাহাড়ের পাদদেশে আঁকাবাঁকা লেকটি যেন সুন্দরের সমূহ গুণ নিয়ে রূপ সাজিয়েছে। ছোট-বড় কয়েকটি পাহাড়ের মাঝখানে অবস্থিত এ লেকের অন্যতম আকর্ষণ পাহাড়ি ঝরনা। এর পাশাপাশি লেকের ভেতরে রয়েছে পানির পরিমাপ মাপার জন্য একটি রেগুলেট বা ব্রিজ, যেখানে দাঁড়িয়ে পর্যটকরা লেকের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারে।
বন্ধুবান্ধব ও পরিবার-পরিজন নিয়ে পানির কলকল ধ্বনিতে মুখর মহামায়া লেকে নৌভ্রমণ ভীষণ আনন্দদায়ক। লেকের চারপাশে পাহাড়ের বুকচিরে ভেসে চলা যেকোনো পর্যটককেই মুগ্ধ করবে। তাই নীলাভ জলরাশিতে ডিঙি নৌকা কিংবা ইঞ্জিনচালিত বোট নিয়ে হারিয়ে যেতে পারেন অপরূপ সৌন্দর্যে।
গোধূলীলগ্নে সূর্য যখন অন্তিম নীলিমায় ডুবে যায়, তখন লেকের পরিবেশ আরও মোহনীয় হয়ে ওঠে। এখানে এসে আপনি রান্না করেও খেতে পারেন। অনেকে লেকের কোলে অবস্থিত বিস্তীর্ণ ভূমিতে ফুটবল কিংবা ক্রিকেট খেলায় মেতে ওঠে। শিশুদের জন্য রয়েছে পর্যপ্ত খেলার জায়গাও।
মহামায়া লেক প্রায় সারা বছরই পর্যটকদরে পদচারণায় মুখর থাকে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষাসফর, পুর্নমিলনী ও ঈদট্যুর সারা বছর চলে এখানে। এর ফলে সববয়সী মানুষের বিচরণ দেখা যায় এ স্পটে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে থাকা মো. হানিফ বলেন, ‘প্রতিদিন বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মহামায়া লেকে অধিক পরিমাণের পর্যটক ঘুরতে আসেন। তাদের কথা চিন্তা করে মহামায়াকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেলে সাজানো হয়েছে। সুবিশাল লেকে রয়েছে পর্যটকদের জন্য ইঞ্জিন চালিত বড় বোট, ছোট বোট, কায়াকিং বোট ও প্যাডেল বোট। এসব বোট দিয়ে যাওয়া যাবে লেকের গহীনে প্রাকৃতিক ঝরনায়। শীতমৌসুম এখানে দৈনিক ২-৪ টি পিকনিক হয়। পরিবার-পরিজন নিয়ে মহামায় এলে খাবারের জন্য ভালো মানের রেস্টুরেন্ট রয়েছে।’
যেভাবে যাবেন মহামায়া
দেশের যেকোনো স্থান থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ঠাকুরদীঘি এলাকায় নামতে হবে। নেমেই দেখবেন স্পটের নাম লেখা সাইনবোর্ড। সেখান থেকে সিএনজি নিয়ে স্পটের একদম গেট পর্যন্ত চলে যেতে পারেন, অথবা আপনি যদি হাঁটতে পছন্দ করেন তাহলে ১০ মিনিট হাঁটলেই পৌঁছে যাবেন স্পটের গেটে। তারপর টিকেট কেটে ভেতরে ঢুকতে হবে। টিকেটের মূল্য জনপ্রতি ১০ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে।
এটিআর/