ছবি : সংগৃহীত
অজানা আতঙ্কে কাঁপছে পূর্ব আফ্রিকার দেশ উগান্ডা। দেশটির শত শত নারী ও কিশোরীরা মূলত এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এ যেন নতুন এক রহস্যময় সংক্রমণের আবির্ভাব ঘটল। করোনা মহামারির পর থেকে নতুন রোগের আগমনের কথা ছড়িয়ে পড়লে তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয় বিশ্ববাসীর মনে।
যেমন অদ্ভুত এই রোগের নাম, তেমনই অদ্ভুত এর উপসর্গ। এই রোগের উৎপত্তিস্থল উগান্ডায়। তাদের স্থানীয় ভাষায় ডিঙ্গা ডিঙ্গা নামের অর্থ ‘নাচের মতো কাঁপুনি’। যারা এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের শরীরে দেখা দিচ্ছে ভয়াবহ কাঁপুনি। যা নিয়ন্ত্রণ করা অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে।
ডিঙ্গা ডিঙ্গার লক্ষণগুলো উদ্বেগজনক ও একই সাথে বেশ অস্বাভাবিকও। আক্রান্তদের জ্বর, কাঁপুনি, দুর্বলতা দেখা যাচ্ছে। হাঁটাচলা করতে সমস্যা হচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তিরা পঙ্গুও হয়ে যাচ্ছেন। তবে, এখন পর্যন্ত এই রোগে আক্রান্ত হয়ে কারও মৃত্যু হয়নি বলে জানা গেছে।
ইনফ্লুয়েঞ্জা, কোভিড-১৯, ম্যালেরিয়া বা হামের মতো শ্বাসযন্ত্রের প্যাথোজেনগুলো এই অসুস্থতার জন্য দায়ী কিনা তা জানতে উগান্ডার স্বাস্থ্য দফতর গবেষণা চালাচ্ছে। পরীক্ষার ফলাফল এখনও হাতে না আসার জন্য রোগের উৎস বা কারণ সম্পর্কে সঠিক তথ্য প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি।
উগান্ডার চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ২০২৩ সালে প্রথম বার ‘ডিঙ্গা ডিঙ্গা’ রোগের কথা প্রকাশ্যে আসে। যারা এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের জ্বর, মাথা যন্ত্রণা, সর্দি-কাশি, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, সারা শরীরে ব্যথার মতো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে বলে সংবাদ সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
সাধারণ অ্যান্টিবায়োটিক ও জ্বরের ওষুধ দিয়েই আক্রান্ত ব্যক্তিদের সুস্থ করে তোলার চেষ্টা করছেন স্থানীয় চিকিৎসকেরা। অনেকে ভেষজ পদ্ধতিতে চিকিৎসা করার চেষ্টা করছেন।
জেলা স্বাস্থ্য অধিকারী কিয়িতা ক্রিস্টোফার জানিয়েছেন, ‘কোনো ভেষজ ওষুধ দিয়ে এই রোগের চিকিৎসা সম্ভব এমন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি। তাই তিনি স্থানীয় অধিবাসীদের জেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এসে চিকিৎসা করানোর অনুরোধ করেছেন।’
তবে ঠিক কী কারণে এই রোগ ছড়িয়ে পড়েছে, তা স্পষ্ট নয়। আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে এলে এই রোগ ছড়াচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত করে জানাতে পারেনি স্বাস্থ্য অধিদফতর।
সংক্রমণ রোধে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা, আক্রান্তদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ এড়িয়ে চলা ও নতুন কোনো উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত জেলা স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষকে খবর দিতে অনুরোধ করেছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।
রোগীদের থেকে নমুনা সংগ্রহ করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আপাতত বুন্ডিবুগিও জেলার বাইরে সংক্রমণ ছড়ায়নি বলে নিশ্চিত করেছেন ক্রিস্টোফার।
হঠাৎ কোথা থেকে এই রোগ মাথাচাড়া দিয়ে উঠল সে সম্পর্কে অনুসন্ধান করতে গিয়ে একই উপসর্গ কয়েক শতাব্দী পুরানো একটি রোগের সন্ধান পাওয়া গেছে। রোগের ইতিহাস ঘেঁটে যে রোগটির সঙ্গে ডিঙ্গা ডিঙ্গার সাদৃশ্য পাওয়া গেছে তা হল ‘ড্যান্সিং প্লেগ’।
উল্লেখ্য, ১৫১৮ সালে ফ্রান্সে স্ট্রাসবর্গে এই রোগ ছড়িয়ে পড়েছিল। সেই রোগে আক্রান্তরা টানা কয়েকদিন ধরে সবসময় নেচে যেতেন। কোনো ভাবেই এই নাচ নিয়ন্ত্রণ করা যায় নি। একই সঙ্গে শ্বাসকষ্ট-সহ বিভিন্ন ধরনের শারীরিক জটিলতা দেখা দিয়েছিল সেই সময়ে। এমনকি একটানা নাচের ফলে ক্লান্তি মৃত্যু ও ঘটে অনেকের।
সেই ঐতিহাসিক ঘটনার সঙ্গে ডিঙ্গা ডিঙ্গার কোনও সরাসরি যোগসূত্র নেই। আপাতত সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে এবং সাধারণত রোগীরা এক সপ্তাহের মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠছেন বলে উগান্ডার স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে জানানো হয়েছে।
আফ্রিকার পশ্চিম উপকূলের দেশ কঙ্গোতে আরেকটি অজানা রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। সেখানকার পাঞ্জি অঞ্চলে অজানা সংক্রমণে ৩৯৪ জন আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা (WHO) হু-এর পক্ষ থেকে এই রোগ ছড়ানোর খবরে সিলমোহর দেওয়া হয়েছে। এই রোগে ৩০ জন মারা গেছেন।
কঙ্গোতে যে সংক্রমণ হয়েছে তার আক্রান্তদের লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে জ্বর, মাথাব্যথা, কাশি, সর্দি, এবং শরীরে ব্যথা। দুই প্রাদুর্ভাবের মধ্যে কোনও সম্পর্ক আছে কিনা তা খতিয়ে দেখছে উগান্ডার স্বাস্থ্য বিভাগ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
টিএ/এমআই