ছবি : সংগৃহীত
উত্তপ্ত মরুভূমিতে এক টুকরো আশার আলো ইসলাম। পারিবারিক, সামাজিক রাজনৈতিক, আন্তর্জাতিক—সামগ্রিক পরিসরে মানবজীবনের সমষ্টিক সমাধানে ইসলামের রয়েছে নান্দনিক আয়োজন। এ ধর্মের রীতি-নীতি ও মহানুভবতা মুগ্ধ করে গোটা সৃষ্টিজগতকে। যিনি একবার ইসলামের সুধা পান করেছেন, তার জন্যে চিরস্থায়ী সুখের ঠিকানা জান্নাত অবধারিত। যুগে যুগে মানুষ যখনই রোদে পুড়ে ছাই হয়েছে, ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় নিয়ে নিজেকে তৃপ্ত করেছে। চলুন জেনে নিই সর্বশ্রেষ্ঠ এ ধর্মের ছায়াতলে আশ্রয় নেওয়া দশজন আন্তর্জাতিক ফুটবলারের গল্প—
থিয়েরি ড্যানিয়েল অঁরি : ইসলামের মহানুভবতায় বিমুগ্ধ হয়ে ২০০৮ সালে কালেমা পড়ে মুসলিম হন তিনি। কাতারভিত্তিক চ্যানেলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে থিয়েরি অঁরি বলেন, মুসলিম পরিচয় আমাকে গর্বিত করে। আল্লাহর শুকুর আমি নিজেকে পবিত্র করেছি। আমার ইসলামগ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন ফ্রাঙ্ক রিবেরি এবং এরিক আবিদাল। তবে কিছু রিপোর্ট ড্যানিয়েল অঁরির ইসলামগ্রহণের আনুষ্ঠানিকতা নিয়ে অস্পষ্টতার ইঙ্গিত দেয়। অঁরি একজন ফরাসি পেশাদার ফুটবল কোচ। তিনি আর্সেনাল, মোনাকো, জুভেন্টাস এবং বার্সেলোনার হয়ে খেলেছেন। তাকে সর্বকালের সেরা স্ট্রাইকার এবং প্রিমিয়ার লিগের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ১৯৯৮ ফিফা বিশ্বকাপ, উয়েফা ইউরো ২০০০ এবং ২০০৩ ফিফা কনফেডারেশন কাপ জিতেছেন তিনি।
ক্লারেন্স সিডর্ফ : ২০২২ সালের মার্চ মাসে নিজের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে ঘোষণা দিয়ে ইসলামগ্রহণ করেন পেশাদার এই ডাচ ফুটবলার। তিনি ১৯৯৮ সালের ফিফা বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডসের প্রতিনিধিত্ব করে সেমিফাইনালে তুলেছেন দলকে। এছাড়া অ্যাজাক্স, রিয়াল মাদ্রিদ এবং এসি মিলানের সাথে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছেন। সিডর্ফ তার প্রজন্মের একজন সেরা মিডফিল্ডার হিসেবে পরিচিত। ইসলামগ্রহণ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশ্ব মুসলিম পরিবারে যোগ দিতে পেরে আমি আনন্দিত। ইসলামের গভীরতা আমাকে পুলকিত করে।
টমাস পার্টি : ঘানা জাতীয় দলের এই মিডফিল্ডার মরক্কোর সারা বেলার সঙ্গে বিয়ের পর ২০২২ সালের মার্চ মাসে ইসলামগ্রহণ করেন। ধর্মান্তরিত হওয়ার পর নিজের রাখেন মুহাম্মাদ ইয়াকুব। তিনি ২০১৮ ও ২০১৯ সালে টানা দুইবার ঘানার বর্ষসেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন। এসময় থাকে ঘানার সহঅধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করা হয়। ২২ সালের জুনে পোস্ট করা একটি ভিডিও ক্লিপে টমাস পার্টি বলেছেন, আমি ইসলামগ্রহণ করেছি। আমি জানি এখন আমার কিছু বন্ধু আমাকে ছেড়ে যাবে। তাতে কোনো সমস্যা নেই। আমি মুসলিমদের সঙ্গে বড়ো হয়েছি। ইতোমধ্যে আমি বিবাহিত। আমার নাম এখন ইয়াকুব।
ইমানুয়েল আদেবায়োর : তিনি একজন টেগোলিজ পেশাদার ফুটবলার। হজরত ইসা (আ.)- এর মসৃণ কৃতকর্মে অনুপ্রাণিত হয়ে ২০১৫ সালে শান্তি ও মানবতার ধর্ম পবিত্র ইসলামের ছায়াতলে আসেন তিনি। আদেবায়োর ২০০৬ সালে ফিফা বিশ্বকাপে জার্মানিতে টোগো জাতীয় দলের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন। ৩২ গোল করে টেগোর সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা তিনি। এছাড়া ইংলিশ ক্লাব আর্সেনাল, ম্যানচেস্টার সিটি এবং স্প্যানিশ দল রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে খেলেছেন আদেবায়োর।
ড্যানি ব্লাম : ২০১৪ সালে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হওয়ার মনোবাঞ্ছা প্রকাশ করেন জার্মানি এই ফুটবল তারকা। পরে ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে আনুষ্ঠানিকভাবে ইসলামগ্রহণ করেন। তিনি। ফুটবল ক্যারিয়ারে রুম এসভি স্যান্ডহাউসেন, ইন্ট্রাষ্ট ফ্রাঙ্কফুর্ট, এফসি নুরনবার্গ এবং জার্মানির বিভিন্ন ক্লাবের হয়ে খেলেছেন। ইসলামের ছায়াতলে আসার পর ব্লাম দিনে পাঁচওয়াক্ত নামাজ পড়েন এবং হালাল খাবার খান। ইসলামকে সার্বজনীন আশা ও শক্তির ধর্ম হিসেবে বর্ণনা করেন তিনি।
এরিক সিলভাইন আবিদাল : হায়েত কবিরকে বিয়ে করে ২০০৭ সালে ইসলামগ্রহণ করেন তিনি। মুসলিম হয়ে এরিক নিজের নাম রাখেন 'বিলাল আবিদাল'। ইসলামগ্রহণ সম্পর্কে এরিক বলেন, স্ত্রীর কারণে আমি ইসলামে আসিনি। তবে এটা সত্য, আমার স্ত্রী আমার জন্য বড়ো নেয়ামত। তার মাধ্যমে আমি ইসলামকে ছুঁয়েছি। পূর্ণ আত্মতৃপ্তিতে আমি মুসলিম হয়েছি। লিভার টিউমারে ফুটবল ক্যারিয়ার সমাপ্ত হওয়া আবিদাল একজন পেশাদার ফরাসি ফুটবলার ছিলেন। যিনি মূলত লিওন এবং বার্সেলোনার হয়ে খেলেছিলেন। নিজ দেশের হয়ে দুটি বিশ্বকাপে প্রতিনিধিত্বও করেন তিনি। ২০১৪ সালে মাত্র ৩৫ বছর বয়সে অবসরে যান এই তারকা খেলোয়াড়।
নিকোলাস আনেলকা : বাল্যবন্ধুদের প্রভাবে মাত্র ১৬ বছর বয়সে প্রকাশ্যে ইসলামগ্রহণ করেন ফরাসি এই তারকা ফুটবলার। আনেলকা তার বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে রিয়াল মাদ্রিদ, জুভেন্টাস, প্যারিস-সেন্ট জার্মেই, চেলসি, আর্সেনাল, ম্যানচেস্টার সিটি এবং লিভারপুলসহ কয়েকটি বড় বড় ইউরোপীয় ক্লাবের হয়ে খেলেছেন। ইসলামগ্রহণ সম্পর্কে তিনি বলেন, আমার অন্তরের প্রত্যয় ছিল যে, ইসলামই আমার ধর্ম। আমি রোজা রাখতাম, তখন আত্মাকে পবিত্র মনে হত। শান্তির ধর্মে ইসলামে এসে আমি নিজেকে পরিতৃপ্ত মনে করছি। প্রভুর নৈকট্য আমাকে আলোকিত করেছে।
ফ্রাঙ্ক হেনরি পিয়ের রিবেরি : আলজেরিয়ান বংশোদ্ভূত মুসলিম স্ত্রী ওয়াহিবার হাত ধরে ইসলামের ছায়াতলে আসেন ফ্রাঙ্ক হেনরি। তিনি প্রাথমিকভাবে জার্মান ক্লাব বায়ার্ন মিউনিখ এবং ২০০৬ ও ২০১০ বিশ্বকাপে ফরাসি জাতীয় দলের হয়ে কাজ করেছেন। রিবেরি তিনবার বর্ষসেরা ফরাসি ও জার্মান ফুটবলারের পুরস্কার লাভ করেন। ধর্মান্তরিত হয়ে তিনি বলেন, ধর্ম আমার আবেগ। এটি একদমই ব্যক্তিগত বিষয়। ইসলাম আমাকে সার্বজনীনভাবে শক্তিশালী করেছে। আমি প্রতিদিন পাঁচবার সালাত আদায় করি। এটি আমাকে মুক্তি দান করে। পবিত্রভাবে বাঁচতে সহায়তা করে।
ফ্রেডেরিক ওমার কানাউট : ইসলামের সুধায় অভিভূত হয়ে ১৯৯৯ সালে মুসলিম হওয়ার ঘোষণা দেন তিনি। ফরাসি বংশোদ্ভূত কানাউট বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় শীর্ষস্তরের ক্লাবের হয়ে খেলেছেন। বিশেষ করে লা লিগার দল সেভিলায় তার কীর্তিগাঁথা স্মরণীয়। ২০০৭ সালে আফ্রিকান ফুটবলার অফ দ্য ইয়ার নির্বাচিত হন এই তারকা ফুটবলার। ইসলামগ্রহণের পর কানাউট ক্লাব স্পন্সর ৮৮৮.কম- এর নামজড়িত একটি সেভিলা শার্ট পরতে অস্বীকার করেছিলেন। কারণ, ওয়েবসাইটটি জুয়া খেলার জন্য ব্যবহার করা হয়, যা ইসলামসম্মত ছিল না। ফলে প্রতি ম্যাচে তাকে একটি ব্র্যান্ড-মুক্ত জার্সি দিতে হয়েছিল।
এমেকা ইজিউগো : মহানবি হজরত মুহাম্মাদ (সা.)- এর নিখুঁত জীবনধারায় অনুপ্রাণিত হয়ে ২০১২ সালে ইসলামের ছায়ায় আশ্রয় নেন প্রাক্তন নাইজেরিয়ান এই ফুটবলার। ইসলামে আসার পর এমেকা বলেন, রাহমাতুল্লিল আলামিন (সা.)- এর অনুসারী হতে পেরে আমি ধন্য। ইসলাম আমাকে আরও সুশৃঙ্খল করে তোলেছে। ১৯৯৪ সালে ফিফা বিশ্বকাপে নাইজেরিয়া জাতীয় দলের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন এমেকা। ১৫ বছরের ফুটবল ক্যারিয়ারে পাঁচটি মহাদেশের ক্লাবের হয়ে পেশাদারভাবে খেলেছেন তিনি। রোমান ক্যাথলিক পরিবারে জন্মগ্রহণকারী এমেকা বাংলাদেশের মোহামেডান ফুটবল ক্লাবেরও কোচ ছিলেন।
সূত্র : ইসলাম অন ওয়েব
এটিআর