প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের বন্যা দীর্ঘ হলে যেকোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকার জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন।
রোববার বিকেলে ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের সমন্বয় সভায় ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী এই নির্দেশ দেন। দেশের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে জরুরি এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে গণভবন থেকে জাহাঙ্গীর কবির নানকের মোবাইল ফোনে ভিডিও কলে যুক্ত হন শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এবারের বন্যা সম্ভবত দীর্ঘ হতে পারে। ১৯৯৮ সালের বন্যা দীর্ঘস্থায়ী ৬৯ দিন ছিল অপর দিকে ১৯৮৮ সালের বন্যা ছিল দুই সপ্তাহ।’
তিনি বলেন, ‘এবারের বন্যা যদি ১৯৯৮ সালের মত দীর্ঘ হয়, তবে, আমাদের কি করণীয় সে ধরণের প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে।’
শেখ হাসিনা ১৯৯৮ সালে বন্যা মোকালার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, ওই সময় অনেকেই বলেছিল যে, ২ কোটি মানুষ না খেয়ে মারা যাবে। আমরা ব্যবস্থা নিয়েছিলাম। আল্লাহর রহমতে কোনো মানুষ না খেয়ে মারা যায়নি। তিনি অতীতে বন্যার সময় দুর্যোগ কবলিত এলাকায় কীভাবে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন সে বিষয়েও স্মৃতিচারণ করেন। এ সময় তিনি নিজ হাতে রুটি বানানোর কথা, খাবার বিতরণের কথা, খাবার পানি, স্যালাইন তৈরিসহ ওষুধ বিতরণের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের সবধরনের প্রস্তুতি ও ব্যবস্থা যথেষ্ট রয়েছে। তারপরও আমাদের সেভাবেই তৈরি থাকতে হবে।’
তিনি বলেন, যেসব এলাকায় বন্যা, সেসব এলাকার স্থানীয় সংগঠনগুলোকে সক্রিয় করে বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিতে হবে। এদিকে আবার করোনা ভাইরাস, এটা নিয়েও সতর্ক থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। আমাদের সকলকে কাজ করতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, বন্যায় যারা ঘরবাড়ি হারিয়েছে, তাদের ঘরবাড়ি করে দিচ্ছি। বন্যার্তদের আপাতত স্কুল-কলেজে থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হচ্ছে, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে সবধরনের সহায়তা করা হচ্ছে। করোনা ভাইরাসে কৃষকদের ধান কাটাও আমরা নেতাকর্মীদের সহায়তায় ভালোভাবে করতে পেরেছি। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীতে ১৫ আগস্ট যেভাবে করতে চেয়েছিলাম সেভাবে পারলাম না। তাই, আমরা একদিকে বৃক্ষরোপণ করব, আরেকদিকে বন্যা দুর্গতদের মাঝে ত্রাণ দেবো। দোয়া-মোনাজাত করা হবে। বন্যাদুর্গত মানুষের ঘরে ঘরে ত্রাণ পৌঁছানো, খাবার বিতরণ এবং তাদের পাশে দাঁড়িয়ে সাহায্য-সহযোগিতা করা- এটাই হবে আমাদের কাজ।
সবাইকে ঈদের আগাম শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এবার যেহেতু করোনা ভাইরাস। তারপরও কোরবানির ঈদ। অনেকেই কোরবানি দেবে। সবাই সবার মতো মানুষকে সাহায্য করতে হবে, মানুষের পাশে থাকতে হবে। স্বাস্থ্য সচেতন ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। এ ব্যাপারে সিটি করপোরেশন সবধরনের ব্যবস্থা নেবে। আমাদের সবাইকেও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, করোনায় আমরা সবচেয়ে বেশি আমাদের নেতাকর্মী হারালাম। কারণ, এই করোনায় সবাই কাজ করেছে। আসলে এই সময়ে অনেকেই আমাদের ছেড়ে চলে গেলো। আমার কাছে সব খবর আছে। আসলে এখন এমন একটা সময় যে, মারা গেলেও দেখতে যেতে পারছি না। তারপরও সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
তিনি বলেন, ‘এখন উত্তরবঙ্গের কিছু এলাকা বন্যা কবলিত। এরপর মধ্য এলাকায় নেমে আসবে। হয়তো জুলাইয়ের শেষে দিকে মধ্য এলাকা এবং আগস্টের শেষ দিক দক্ষিণাঞ্চল বন্যা কবলিত হবে। এটা আমাদের দেশের প্রাকৃতিক নিয়ম। মধ্য উপকলূীয় এলাকায় বন্যা তেমন হয়নি। কিন্তু পদ্মার ওপারের এলাকায় এবার বন্যাটা ব্যাপক হারে দেখা যেতে পারে এবং এই বন্যাটা স্থায়ী হতে পারে।
এ সময়ে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য এডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রহমান, তথ্যমন্ত্রী ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি ও আ ফ ম বাহা উদ্দিন নাছিস, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, এস এম কামাল হোসেন ও শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সুবর, উপ-দফতর সম্পাদক সায়েম খান, কার্যনির্বাহী সদস্য আনোয়ার হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।