ওস্তাদ ছাড়াই নিজেকে গড়ে তুলেছিলেন আব্বাসউদ্দীন
প্রকাশ: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৪:২৫

ভাওয়াইয়া গানের জনক পল্লীসংগীতের অমর কিংবদন্তি শিল্পী আব্বাসউদ্দীন আহমেদ। বাংলার সাংস্কৃতিক জগতে এক অবিস্মরণীয় অধ্যায় রচনা করেছিলেন তিনি। পল্লীগীতি থেকে শুরু করে আধুনিক, স্বদেশি ও ইসলামি গানের জগতে তাঁর অবদান অতুলনীয়। নিজের নামে গান রেকর্ড করে সুনাম অর্জন করা প্রথম বাঙালি মুসলিম গায়ক আব্বাসউদ্দীন।
আব্বাসউদ্দীন আহমেদ ১৯০১ সালের ২৭ অক্টোবর ভারতের কুচবিহার জেলার বলরামপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলা থেকেই তার গানের প্রতি আগ্রহ ছিল। কোনো ওস্তাদের কাছে না গিয়ে নিজে নিজে গান শিখেছিলেন তিনি। যদিও পরে কিছু সময়ের জন্য ওস্তাদ জমিরউদ্দীন খাঁর কাছে উচ্চাঙ্গ সংগীতের তালিম নিয়েছিলেন। তবে তাঁর জনপ্রিয়তার মূল কারণ ছিল ভাওয়াইয়া এবং পল্লীগানের প্রতি অবিচল প্রেম ও কণ্ঠের অসাধারণ দরদ।
তাঁর প্রথম রেকর্ড করা গান ছিল ‘কোন বিরহীর নয়ন জলে বাদল মরে গো’, যা বাজারে আসার সঙ্গে সঙ্গে সাড়া ফেলে দেয়। এরপর একে একে তিনি জারি, সারি, ভাটিয়ালি, মুর্শিদি, বিচ্ছেদি, দেহতত্ত্বসহ বিভিন্ন ধরনের গান গেয়ে মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নেন। কাজী নজরুল ইসলাম, জসীম উদ্দীনসহ অনেক বিখ্যাত কবি-সাহিত্যিকের লেখা গান তিনি কণ্ঠে তুলেছিলেন। কাজী নজরুল ইসলামের সঙ্গে তাঁর গভীর বন্ধুত্ব ছিল, যা তাদের সংগীতেও ছাপ রাখে।
আব্বাসউদ্দীন আহমেদ ছিলেন পাকিস্তান আন্দোলনের সময়ের একজন গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। তাঁর গানগুলো সেই সময়ের মুসলিম জনতাকে উদ্দীপ্ত করে এবং পাকিস্তান আন্দোলনের পক্ষে জনমত গঠনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর তিনি ঢাকায় চলে আসেন এবং সরকারের প্রচার দপ্তরে এডিশনাল সং অর্গানাইজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তাঁর রেকর্ড করা গানের সংখ্যা প্রায় সাতশো। তাঁর লেখা আত্মজীবনীমূলক বই ‘আমার শিল্পী জীবনের কথা’ সংগীত জগতের মূল্যবান এক দলিল হিসেবে বিবেচিত। তিনি তার দরদভরা কণ্ঠে যেভাবে পল্লীগানের সুর ফুটিয়ে তুলেছিলেন, তা আজও শ্রোতাদের মুগ্ধ করে। সংগীতে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি পেয়েছেন প্রাইড অব পারফরমেন্স (১৯৬০), শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৭৯) এবং স্বাধীনতা পুরস্কার (১৯৮১)।
১৯৫৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর এই মহান শিল্পী মারা যান। তাঁর সৃষ্টিকর্ম ও সুরেলা কণ্ঠের মাধ্যমে তিনি আজও বেঁচে আছেন মানুষের হৃদয়ে।
এমজে/এমএইচএস