শিবির ট্যাগ দিয়ে কমিটি থেকে বাদ দেওয়ার অভিযোগ ঢাবি শিক্ষার্থীর

ঢাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৬ মার্চ ২০২৫, ১০:৪০

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী মোস্তফা আহমদকে নবগঠিত সংগঠন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কমিটি থেকে শিবির ট্যাগ দিয়ে বাদ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
বুধবার (৫ মার্চ) এক সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ তুলে ধরেন ওই শিক্ষার্থী।
তিনি বলেন, নতুন ছাত্র সংগঠনের দল গঠনের সকল প্রক্রিয়ায় আমি ছিলাম। কিন্তু দল গঠনের পূর্ব মুহূর্তে আমার নাম বাদ দিয়ে দেওয়া হয়। ফ্যাসিবাদী আমলে ছাত্রলীগ যেমন শিবির ট্যাগ দিয়ে সকল কিছু করত তেমনি ছাত্র সংসদও আমাকে শিবির ট্যাগ দিয়েছে।
নতুন ছাত্র সংগঠন গঠিত হওয়ার পর আমি আমার নাম কমিটিতে দেখতে না পেরে সংগঠনটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আব্দুল কাদেরকে ফোন করে জানতে চাই কেন আমাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, যাদের ক্ষেত্রে শিবির সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে তাদেরকে কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক লিমন মাহমুদ হাসানকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, দল গঠনের জন্য সার্চ কমিটির প্রধান ছিলেন সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের হামজা মাহবুব। শিবির ট্যাগিংয়ের বিষয়টি সেই ভালো বলতে পারবে।
আমি জুলাই অভ্যুত্থানে সকল মিছিল মিটিংয়ে আমি স্বপ্রণোদিতভাবে অংশগ্রহণ করেছি। দল গঠনের সকল প্রক্রিয়াও আমি অংশগ্রহণ করেছি।
এ সময় তিনি বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের প্রতি ৫ টি প্রশ্ন রাখেন। এগুলো হচ্ছে-
১. তাহলে আমরা কি আবার সেই কালচারে ফিরে যাচ্ছি যেখানে কোনো শিক্ষার্থীকে তার পরিচয়ের আগে রাজনৈতিক ট্যাগিংয়ের মধ্য দিয়ে বা প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে রাজনীতিতে আসতে বাধা প্রদান এবং কোনঠাসা করা হচ্ছে? স্বাভাবিকভাবে আমাকে অন্যকোনো ব্যাখ্যা দিলে সেটা স্বাভাবিকভাবে মানা যেতো, কিন্তু সেখানে সংগঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি আমাকে জানায় যে শিবির সংশ্লিষ্টতা বা শিবির ট্যাগিংয়ের মাধ্যমে আমাকে বাদ দেয়া হয়েছে। এটা তো এক ধরনের ট্যাগিং।
২. নতুন ছাত্র সংগঠন কোন স্পিরিটকে ধারণ করে গঠিত হয়েছে? আমি বলতে চাই আমার ক্যাম্পাস জীবনে আমি কখনো শিবিরের কোনো কার্যক্রমে ছিলাম না। আমি জুলাই আন্দোলন করেছি, আমার ব্যক্তিগত জায়গা থেকে। তাই নতুন ছাত্রসংগঠন এর কাছে আমার প্রশ্ন আমাকে কেনো শিবির অভিযুক্ত করে বাদ দেওয়া হলো এবং তার প্রমাণ দেয়া হোক।
৩. যাকে-তাকে শিবির ট্যাগ দিয়ে ডিহিউমিনাইজ করা, মেরে ফেলা কিংবা জেলে দেওয়ার যে ভয়ংকর নিপীড়ন এতোদিন কুখ্যাত আওয়ামী-ছাত্রলীগ করে এসেছে, নতুন করে গড়ে উঠা ছাত্র সংগঠন ‘বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ’ও কি এমন পলিসিই গ্রহণ করেছে কিনা আমিসহ এ দেশের ছাত্রসমাজ জানতে চাই।
৪. আমাকে যেহেতু শিবির ট্যাগিং করে বাদ দেওয়া হয়েছে, আমি কখন, কোন কালে শিবির করেছি সেটার প্রমাণ চাই। নাহলে তাদের এ চরম মিথ্যাচার ও সম্মানহানির বিচার চাই।
৫. কেউ যদি শিবির হয়েও থাকে এবং তারা জুলাই আন্দোলনে ভূমিকা পালন করে থাকে, জুলাই অভ্যুত্থানের স্পিরিটেকে ধারণ করে ‘বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ’ এ যুক্ত হতে চায়, তাকে নেওয়া হবে কিনা জানতে চাই। নাকি কুখ্যাত ছাত্রলীগের অসংখ্য নেতাকর্মী এবং তাদের আস্থাভাজন, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রশক্তি, ছাত্র অধিকার ও অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত শিক্ষার্থীদের নেওয়া গেলেও শিবির সংশ্লিষ্টতার আলাপ আসলে কোনোরূপ বাচবিচার না করেই কোনো শিক্ষার্থীকে বাদ দিবে সেরকম কোনো পলিসি তারা গ্রহণ করেছে কিনা, তা আমিসহ বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ জানতে চাই।
তিনি আরও বলেন, কাকে কীভাবে উক্ত সংগঠনে নেওয়া হলো বা ভবিষ্যতে কীভাবে নেওয়া হবে, সে বিষয়ে তাদের নীতিমালাগুলো আমরা জানতে চাই যাতে ভবিষ্যতে সবাই এসব ব্যাপারে পরিষ্কার থাকতে পারে।
অভিযোগের বিষয়ে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের ঢাবি শাখার আহ্বায়ক আব্দুল কাদের বলেন, আমরা কমিটি দেয়ার আগে সার্চ কমিটি গঠন করেছিলাম। সার্চ কমিটি তার অনলাইন ও অফলাইন কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে তাকে শিবির সন্দেহ করে। যার কারণে তাকে কমিটিতে রাখা হয়নি।
জুলাই আন্দোলনে সব দলের অংশগ্রহণে থাকার পর এখন কেন শিবির ট্যাগ দেওয়া হচ্ছে- এমন প্রশ্নের জবাবে আব্দুল কাদের বলেন, এই দল একটি স্বতন্ত্র সংগঠন। এখানে আমরা কাকে রাখব না রাখব সেটা আমাদের বিষয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্ল্যাটফর্মে সব ছাত্রসংগঠনের প্রতিনিধিত্ব ছিল। যার কারণে সেখানে সব দলের লোকদের রাখা হয়েছে। কিন্তু এই সংগঠন স্বতন্ত্র হওয়ায় আমরা আমাদের মতো দেখে কমিটি দিয়েছি।
ওএফ