মব সন্ত্রাসের প্রতিবাদে মধ্যরাতে জাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ

জাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১২ মার্চ ২০২৫, ১২:৫৪

ছবি : বাংলাদেশের খবর
মব সন্ত্রাসের প্রতিবাদ ও ২০১৩ সালে শাহবাগের জুডিশিয়ারি কিলিংয়ের (বিচারিক হত্যাকাণ্ড) বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী।
বুধবার (১২ মার্চ) রাত আড়াইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন তারা। মিছিলটি কয়েকটি সড়ক প্রদক্ষিণ করে ছাত্রী হলগুলোর সামনে দিয়ে শহীদ মিনার এলাকা হয়ে আবার বটতলায় গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন তারা।
সমাবেশে গণঅভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলন, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, আধিপত্যবাদ বিরোধী মঞ্চ, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কয়েকজন নেতাকর্মী বক্তব্য দেন।
সমাবেশে বক্তারা মব সন্ত্রাসের প্রতিবাদ ও জুডিশিয়ারি কিলিংয়ের বিচারের দাবি উত্থাপন করেন। পাশাপাশি শাহবাগে লাকি আক্তারের প্রকাশ্য মিছিলের নিন্দা ও তাকে গ্রেপ্তারের দাবি জানান শিক্ষার্থীরা। এছাড়া হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে আন্দোলনকারীরা পুলিশের ওপর হামলা করেছে এমন অভিযোগ এনে এর তীব্র নিন্দা জানান তারা।
বিক্ষোভ মিছিলরত শিক্ষার্থীদের ‘ওয়ান টু থ্রি ফোর, শাহবাগী নো মোর’, ‘শাহবাগ সন্ত্রাস করে, ইন্টারিম কী করে’, ‘ল তে লাকি, তুই হাসিনা, তুই হাসিনা’, ‘কণ্ঠে আবার লাগা জোর, শাহবাগীর বিচার কর’, ‘শাহবাগী রাজাকার, এই মুহূর্তে বাংলা ছাড়’, ‘শাপলার শহীদদের, ভুলি নাই, ভুলবো না’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায়।
সমাবেশে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্যসচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০তম আবর্তনের শিক্ষার্থী জিয়া উদ্দিন আয়ান বলেন, ধর্ষণের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে দিল্লির প্রেসক্রিপশনে ষড়যন্ত্র চালানো হচ্ছে। আমরা সে ষড়যন্ত্র আর কায়েম হতে দেব না। দিল্লির প্রেসক্রিপশনে বাংলা আর চলবে না। ফ্যাসিবাদের উত্থান যে শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ থেকে শুরু হয়, তার সংগঠক লাকি আক্তার আজ রাজপথে স্লোগান দিয়ে বেড়াচ্ছে। আমরা নতুন করে শাপলা চত্বরের ঘটনা চাই না। আমরা তাকে দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানাই।
ইসলামী ছাত্রশিবির জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সম্পাদক মো. সাফায়েত মীর বলেন, শাহবাগের উত্থান ইসলাম বিদ্বেষের মাধ্যমে, ভারতীয় ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে। এর মাধ্যমে এ দেশের দেশপ্রেমিক সাকা চৌধুরী, কাদের মোল্লাকে জুডিশিয়াল কিলিংয়ের শিকার হয়ে ফাঁসির দড়িতে ঝুলানো হয়েছে। এ শাহবাগের হাতে শাপলা চত্বরে আমার ভাইয়ের রক্ত লেগে আছে। তারা এ জাহাঙ্গীরনগরে চব্বিশের আন্দোলনও বানচাল করার চেষ্টা করেছিল।
তিনি আরও বলেন, আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম, চব্বিশের মাধ্যমে তারা শুধরিয়ে যাবে। কিন্তু তারা শুধরায়নি। আমরা আর শাহবাগ কায়েম হতে দেবো না। রাজপথে আছি, রাজপথে থাকবো।
সরকার ও রাজনীতি ৪৯তম আবর্তনের শিক্ষার্থী ও আধিপত্যবাদ বিরোধী মঞ্চের আহ্বায়ক আনজুম শাহরিয়ার বলেন, ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে আমরা দেখতে পাই মব জাস্টিসের সূচনাকারী, জুডিশিয়াল কিলিংয়ের সূচনাকারী। সেই লাকি আক্তাররা আবার স্বৈরাচারের ডাক দিচ্ছে। ২০২৫ সালে এসে দেশে কেউ যদি আবার মব জাস্টিস কায়েম করতে চায়, জুডিশিয়াল কিলিং প্রতিষ্ঠা করতে চায়, ছাত্রজনতা কঠোর হাতে দমন করবে।
তিনি আরও বলেন, ইন্টারিম সরকার যখন খুনি হাসিনাসহ সকল অপরাধীর একটি বিচারিক প্রক্রিয়ার দিকে এগোচ্ছে, তখন একটি কুচক্রী মহল বিভিন্ন আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বিদেশি শক্তির মাধ্যমে দেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে চাচ্ছে। ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে আজকে যে মব সৃষ্টি করা হয়েছে, আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। শাহবাগে যে জুডিশিয়াল কিলিংয়ের সূচনা করা হয়েছিল, শাপলা চত্বরে যে হাজারো ইসলামপ্রিয় মানুষের ওপর গুলি চালানো হয়েছিল, ইন্টারিম সরকারের কাছে এর বিচার দাবি করছি।
আমানউল্লাহ খান/এমবি