Logo

ক্যাম্পাস

রমজানের মহিমা ছড়িয়ে ভ্রাতৃত্ব ও সংহতির বার্তায় গণইফতার

Icon

আমানউল্লাহ খান

প্রকাশ: ১২ মার্চ ২০২৫, ১৬:২০

রমজানের মহিমা ছড়িয়ে ভ্রাতৃত্ব ও সংহতির বার্তায় গণইফতার

ইসলামিক ক্যালেন্ডারে সবচেয়ে পবিত্র মাস হলো রমজান। এই মাসে, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বসবাসরত মুসলমানরা সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত থেকে আত্মশুদ্ধি অর্জনের চেষ্টা করেন। যা ফার্সি শব্দ রোজা নামে বাঙালির কাছে পরিচিত। সূর্যাস্তের পর মাগরিবের আজান শুনে, রোজাদাররা রোজা ভাঙেন। ইসলামে এই সময়টা ‘ইফতার’ হিসেবে বিবেচিত হয়। বাঙালি মুসলমানের কাছে ইফতার এক সম্প্রীতির নাম।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোও এর ব্যতিক্রম নয়। ইফতার আয়োজন নিয়ে ক্যাম্পাসগুলো এখন মুখর। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতেই শিক্ষার্থীদের আনাগোনায় প্রাণবন্ত হয়ে উঠে পুরো ক্যাম্পাস। সাধারণত অন্যান্য দিন ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে বসে পড়েন তাঁরা। উদ্দেশ্য একসঙ্গে ইফতার করা।

কিন্তু মঙ্গলবার (১১ মার্চ) দেখা গেলো এক ব্যতিক্রমী দৃশ্য। কাউকে আলাদা করে শরবত বানাতে দেখা যায়নি, দেখা যায়নি আলাদা করে ছোলা-মুড়ি মাখাতে। ছোট ছোট দলে শিক্ষার্থীরা আসছে। এসেই খোলা মাঠে বিছানো ত্রিপলে বসে যাচ্ছে। বসার সাথে সাথেই পাওয়া যাচ্ছে ইফতার। ইফতারের সময় কে কোন বিভাগ, কে কোন বর্ষ, সেসবের ভেদাভেদ থাকে না। একদল শিক্ষার্থী ইফতার বণ্টনে তদারকি করছে। সবার চাহিদা পূরণের চেষ্টা করছে। সে কি আপ্যায়ন!

বলছিলাম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে গণইফতার কর্মসূচি নিয়ে।  ৫০তম আবর্তনের শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ১০ম রমজানে এই গণইফতারের আয়োজন করা হয়। 

গণইফতার অনুষ্ঠানে কোরআন তিলাওয়াত, হামদ-নাত এবং ইসলামি বিভিন্ন পরিবেশনা উপস্থিত সবার মধ্যে এক আত্মিক প্রশান্তি ছড়িয়ে দেয়। ইফতারের আগে মোনাজাতে সবার ক্ষমা, রহমত, শান্তি কামনা করে দেশবাসী ও মুসলিম জাতির কল্যাণ কামনা করা হয়। তারপর মাগরিবের আজান শোনে সবাই একসঙ্গে ইফতার করার মুহূর্তটি ছিল এক অতি আবেগময় অভিজ্ঞতা। যা রোজাদারদের মাঝে এক অভূতপূর্ব সম্পর্ক এবং ধর্মীয় ঐক্য সৃষ্টি করেছিল।

গণইফতার মাহফিলে হাজারের অধিক শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ লক্ষ্য করা যায়। নারী শিক্ষার্থীদের জন্য ছিল আলাদা বসার সুব্যবস্থা। গণ-ইফতারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ও প্রক্টরকে শিক্ষার্থীদের সাথে একসাথে বসে ইফতার করতে দেখা যায়। সব মিলিয়ে রমজানের পবিত্রতা ও মর্যাদায় আয়োজনটি ছিল অত্যন্ত মর্মস্পর্শী এবং আবেগময়।  

ক্যাম্পাসকে আরেকটা পরিবার বলে মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের ৫২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. ইকরামুল হাসান নাঈম। নাঈমের ভাষ্য, ‘সারাদিন রোজা রাখার পর ক্যাম্পাসের বন্ধু, বড়-ছোট ভাইবোনদের সঙ্গে ইফতার করার অনুভূতি পারিবারিক প্রশান্তি এনে দেয়। পরিবারের সঙ্গে ইফতার এখানে মিস করি। কিন্তু আজকের আয়োজন আমাকে সবকিছু ভুলিয়ে দিয়েছে।’

কথা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীনতম ব্যাচের শিক্ষার্থী তৌহিদ রকির সাথে। তৌহিদ বলেন, ‘আমরা প্রতিদিনই নিজেদের মতো ইফতার করি। কিন্তু তাতে কোথায় যেন একটা শূন্যতা অনুভব করি। তবে আজকের এই ইফতার সবার সঙ্গে সবার দেখা হওয়ার মাধ্যমে আমার স্মৃতি রোমন্থন হচ্ছে। আমরা বিভাগ, ব্যাচ ভুলে গিয়ে এক পারিবারিক ছাতার নিচে যেন ইফতার করছি।’

গণইফতার আয়োজনকারী ব্যাচের শিক্ষার্থী জিয়া উদ্দিন আয়ানের সাথে কথা বললে তিনি জানান, ‘গত বছর শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইফতার আয়োজনে বাঁধার প্রেক্ষিতে প্রতিবাদ স্বরূপ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪৯ ব্যাচের আয়োজনে গণ-ইফতার আয়োজন করা হয়। তারই ধারাবাহিক ৫০ ব্যাচ এবার আয়োজন করেছে। রমজানের এই পবিত্র মাসে আমরা একসঙ্গে বসে ইফতার করার যে সৌভাগ্য অর্জন করেছি, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। এই গণইফতার আয়োজন শুধু যেন খাবার গ্রহণের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে, বরং এটি আমাদের হৃদয়ে পারস্পরিক ভালোবাসা ও সহানুভূতির বন্ধন আরও দৃঢ় করবে।’ 

সাধারণত প্রতিদিনই ক্যাম্পাসের বিভিন্ন বিভাগ ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো নিজের মতো ইফতার আয়োজন করে। সংগঠনগুলো শুধু নিজেরাই ইফতার করে, তা নয়, অনেক সংগঠন দুস্থ মানুষের জন্য ইফতারের ব্যবস্থা করে। কিন্তু এই গণইফতার আয়োজন বিরল। গণইফতার অনুষ্ঠানটি শিক্ষার্থীদের মধ্যে ঐক্য, সহযোগিতা এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধার মনোভাব সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে। এটি শুধু একটি ধর্মীয় সমাবেশই নয় বরং একটি সামাজিক অনুষ্ঠানও বটে। যেখানে সকল সম্প্রদায় এবং পেশার মানুষ মিলিত হয়ে একে অপরের সাথে ইফতার করেছেন। এই আয়োজন ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য ও সম্প্রতিকে আরও সাবলীল, সমৃদ্ধ করবে বলে আত্মবিশ্বাসী এখানকার শিক্ষার্থীরা। 

এমএইচএস

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর