সোনালী পেমেন্ট গেটওয়ে, সুবিধার চেয়ে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি বেশি

কুবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৯ মার্চ ২০২৫, ১২:২৬

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) শিক্ষার্থীদের অনলাইন ফি পরিশোধের জন্য ২০২৩ সালের অক্টোবরে সোনালী ব্যাংক পিএলসি-এর সঙ্গে একটি চুক্তি বাস্তবায়ন হয় । পরবর্তীতে গত বছরের অক্টোবরে এই সেবার কার্যক্রম শুরু হয়।
এর ফলে ‘সোনালী ই-সেবা’ প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ঘরে বসেই শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফি, সেমিস্টার ফি, হল ফি ও অন্যান্য ফি পরিশোধের সুযোগ সৃষ্টি হয়। তবে শুরুর সময় এটি স্বস্তির খবর মনে হলেও বাস্তবে এটি শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করছেন, ওয়েবসাইট প্রায়ই ডাউন থাকে, লেনদেন প্রক্রিয়ায় নানা জটিলতা দেখা দেয় এবং কিছু ফি অনলাইনে পরিশোধের সুযোগ নেই। যদিও শুরুতে সব ধরনের ফি অনলাইনে পরিশোধযোগ্য হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। সবচেয়ে বড় অভিযোগ হলো, প্রত্যাশার চেয়ে বেশি চার্জ কর্তন করা হচ্ছে, যা শিক্ষার্থীদের জন্য বাড়তি আর্থিক চাপ তৈরি করছে।
শিক্ষার্থীদের দাবি, অনলাইন পেমেন্ট সুবিধার বদলে হয়রানির আরেক নাম হয়ে উঠেছে। তারা এ সমস্যা দ্রুত সমাধানের দাবি জানিয়েছেন।
ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এমবিএ ভর্তির ফি জমার জন্য নতুন নিয়ম চালু করেছে, যেখানে জনতা ব্যাংকের পরিবর্তে সোনালী গেটওয়ের মাধ্যমে টাকা জমা দিতে হবে। বলা হচ্ছে, এতে বড় ফরম পূরণ করতে হবে না, শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমবে। কিন্তু বাস্তবে কি তা-ই হয়েছে? পপুলার পেমেন্ট মেথডগুলোতে ১১৫-১৩০ টাকা পর্যন্ত সার্ভিস চার্জ কাটা হচ্ছে, যা আমাদের জন্য বাড়তি আর্থিক চাপ।'
তিনি আরও বলেন, ‘পেমেন্ট করার পরও স্লিপ প্রিন্ট করে সেটি জনতা ব্যাংকে ফিজিক্যালি জমা দিতে হচ্ছে। শুধু তাই নয়, ডিপার্টমেন্ট, ক্লাব, হলের ফি এখনো আগের মতোই জনতা ব্যাংকের মাধ্যমে জমা দিতে হচ্ছে, যেখানে জমা রশিদ পূরণ করতে হয়। তাহলে ডিজিটালাইজেশনের নামে এত জটিলতা তৈরি করার মানে কী— কতৃপক্ষের নিকট প্রশ্ন মাহফুজের।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন যখন ঘোষণা দিলো, এবার থেকে সেমিস্টার ফি অনলাইনে দেওয়া যাবে, তখন অনেক শিক্ষার্থীই ভেবেছিলেন হয়তো এবার আর হলের সামনে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াতে হবে না। কিন্তু বাস্তবতা যেন ভিন্ন এক চিত্র তুলে ধরেছে।
ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী নাজমুল ইসলাম তার অভিজ্ঞতা শেয়ার করে বলেন, ‘সেমিস্টার ফি অনলাইনে দিতে হবে শুনে ভেবেছিলাম পুরো পদ্ধতিটা ডিজিটাল হয়েছে এবং আমরা হলে দৌঁড়াদৌঁড়ির হাত থেকে বেঁচে যাব। কিন্তু বাস্তবে যা হলো, তা হতাশাজনক।’
তিনি আরও জানান, ‘অনলাইনে বাড়তি সার্ভিস চার্জ পরিশোধ করে ফি জমা দিলেও শেষ পর্যন্ত সেই আগের মতোই হলে যেতে হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় কাজ সম্পন্ন করতে সময় নষ্ট হয়েছে। যদি অনলাইনে ফি পরিশোধ করেও আমাদের ফিজিক্যালি উপস্থিত হয়ে বিভিন্ন কাজ করতে হয়, তাহলে এই আধুনিকতার অর্থ কী?’
অর্থনীতি বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী তোফায়েল মাহমুদ নিবিড় বলেন, 'অনেক সময় সাইটে প্রবেশ করতেই সমস্যা হয়। তার ওপর এক্সট্রা ৭৫ টাকা সার্ভিস চার্জ কাটা হচ্ছে। তাতেও সমস্যার শেষ নয়—পেমেন্ট স্লিপ প্রিন্ট করে আবার আগের মতোই জমা দিতে হচ্ছে। এ ছাড়া, হল, ডিপার্টমেন্টসহ অন্যান্য লেনদেন এখনো ম্যানুয়ালি করতে হচ্ছে। তাহলে আসলে আমরা সুবিধা কী পেলাম?'
বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বিভাগ এখনো এই সেবার আওতাভুক্ত হতে পারে। এ প্রেক্ষিতে কোষাধ্যক্ষ বলেন, ‘এটা এখনো সব ডিপার্টমেন্টের জন্য কার্যকর হয়নি। তবে ধাপে ধাপে সবাই এই সুবিধার আওতায় আসবে এবং ই-সেবার ত্রুটিগুলোও সমাধান করা হবে।’
এ বিষয়ে অর্থ ও হিসাব দপ্তরের উপ-পরিচালক মো. নাছির উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের কাছে এখনো কেউ সরাসরি এসব সমস্যা নিয়ে যোগাযোগ করেনি। অনলাইনে পেমেন্ট করা টাকার স্লিপ কোথাও জমা দিতে হবে না, কারণ অনলাইনেই টাকা জমার প্রমাণ থেকে যায়।'
অনলাইন পেমেন্টে অতিরিক্ত চার্জ কাটা নিয়ে তিনি বলেন, ‘এটা সব জায়গাতেই এমন হয়ে থাকে, এতে আমাদের কোনো হাত নেই।’
মিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোলায়মান বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা অর্থ ও হিসাব দপ্তরে অভিযোগ জানিয়েছে কি না, তা আমি জানি না। আমাদের কাছেও কেউ এ বিষয়ে সরাসরি আসেনি। তবে আমরা যথাযথ সময়ে এই সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা করব এবং কীভাবে সমাধান করা যায় সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।'
ইমতিয়াজ রিফাত/এটিআর