-67dbde7706c36.jpg)
ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ-তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে, শোন আসমানী তাগিদ—কাজী নজরুল ইসলামের এই অমর গানটি যেন আমাদের শৈশবের ঈদের আনন্দের এক নিখুঁত প্রতিচিত্র। ঈদ মানেই আনন্দ, খুশি, উচ্ছ্বাস। নতুন জামা, সুগন্ধি-আতর, ঈদের নামাজ, আত্মীয়-স্বজনের মিলন, সুস্বাদু খাবারের আয়োজন—সব মিলিয়ে এক অন্যরকম আনন্দঘন দিন। তবে শৈশবের ঈদ? সে ছিল আরও অন্যরকম! ছিল অকৃত্রিম ভালোলাগা আর চিরসবুজ স্মৃতিতে ভরা এক আবেগময় অনুভূতি। সময়ের পরিক্রমায় সেই ঈদের আনন্দ কোথায় যেন হারিয়ে গেছে!
ঈদের আনন্দ শুরু হতো চাঁদ রাত থেকেই। খোলা ছাদে দৌড়ে গিয়ে ঈদের চাঁদ দেখার উত্তেজনা ছিল অসাধারণ! একসঙ্গে চাঁদ দেখে উল্লাস করা, বাজি ফোটানো, হাতে মেহেদি দেওয়া—এসব ছিল শৈশবের ঈদের অবিচ্ছেদ্য অংশ। অথচ এখন ডিজিটাল বিজ্ঞপ্তিতেই ঈদের চাঁদ দেখার খবর পাওয়া যায়, কিন্তু সেই উচ্ছ্বাস আর থাকে না।
ঈদের দিন সকালে নতুন জামা পরে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বারবার জামার ভাঁজ ঠিক করা ছিল অন্যরকম মজা! মা-বাবার পায়ে হাত রেখে সালাম করা, সালামির টাকার মিষ্টি ঘ্রাণ নেওয়া, বন্ধুদের সঙ্গে ঈদগাহে যাওয়া—এসব আজ শুধুই স্মৃতি।
ঈদের সকালে ঘরে ঘরে সুগন্ধ ছড়িয়ে পড়ত সেমাই, পোলাও, মাংস আর ফিরনির। বন্ধুদের বাড়ি বাড়ি ঘুরে তাদের মায়েদের রান্না খাওয়ার যে আনন্দ ছিল, তা আজ রেস্টুরেন্ট কালচারে ফিকে হয়ে গেছে। খাবারের আয়োজন এখনো হয়, কিন্তু সেই শৈশবের স্বাদ যেন আর পাওয়া যায় না।
ঈদের সবচেয়ে বড় আনন্দ ছিল বন্ধুদের সঙ্গে কাটানো সময়। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত একসঙ্গে দৌড়ঝাঁপ, খেলাধুলা, একে অপরের বাড়িতে যাওয়া, ঈদের মেলায় ঘোরা—এসব এখন যেন কেবল স্মৃতির পাতায় রয়ে গেছে। প্রযুক্তির পর্দায় আটকে থাকা ঈদ কি শৈশবের সেই উচ্ছ্বাস ফিরিয়ে দিতে পারে?
একসময় হাতে লেখা ঈদ কার্ড পাঠানো হতো আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুদের কাছে। তা হৃদয়ে ভালোবাসার উষ্ণতা ছড়িয়ে দিত। এখন এক ক্লিকে ডিজিটাল শুভেচ্ছা পাঠানো যায়, কিন্তু সেই আন্তরিকতা আর অনুভূতি হারিয়ে গেছে ভার্চুয়াল জগতে।
ঈদের সন্ধ্যার পরেই যেন একধরনের বিষাদ ঘিরে ধরত মনকে। সারাদিনের দৌড়ঝাঁপ, আনন্দ-উল্লাস শেষে মনে হতো, ‘ঈদ এত দ্রুত শেষ হয়ে গেল!’ নতুন জামা আলমারিতে তুলে রাখা হতো পরের দিন পরার জন্য। এখন ঈদের আনন্দ কেবল আনুষ্ঠানিকতায় সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে।
বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দায়িত্ব বেড়েছে, ব্যস্ততা এসেছে, কিন্তু ঈদের সেই শৈশবের আনন্দ আর ফিরে পাওয়া যায় না। এখন ঈদ কেবল একটি ছুটি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুভেচ্ছা বিনিময়ের দিন। শৈশবের ঈদ ছিল মন থেকে খুশি পাওয়ার দিন, আর এখন ঈদ যেন কৃত্রিমতার মোড়কে বন্দি হয়ে গেছে।
তবু আজও চোখ বন্ধ করলে মনে পড়ে—ঈদের চাঁদ, নতুন জামা, সালামি আর বন্ধুদের সঙ্গে কাটানো দিনগুলো। হয়তো শৈশবের মতো ঈদের সেই অনুভূতি আর কখনো ফিরবে না, তবে স্মৃতিগুলো হৃদয়ের এক কোণে চিরকাল উজ্জ্বল হয়ে থাকবে।
লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিট
ডিআর/বিএইচ