ঈদের আনন্দ ও ত্যাগ : নতুন প্রজন্মের ভাবনা

ক্যাম্পাস প্রতিনিধি, ডিআইইউ
প্রকাশ: ২৪ মার্চ ২০২৫, ২০:৫২

ঈদ শুধুমাত্র আনন্দের উৎসব নয়, এটি ভ্রাতৃত্ব, ভালোবাসা এবং ত্যাগের এক অমূল্য শিক্ষা। এই পবিত্র দিনটি মুসলিম উম্মাহকে একত্রিত করে। যদিও কিছু জায়গায় রক্তঝরা পরিস্থিতি ঈদের আনন্দে ছাপ ফেলে। ঈদ যখন একদিকে আনন্দের প্রকাশ, তখন অন্যদিকে কিছু মানুষ লড়াইয়ের মধ্যে তাদের ঈদ উদযাপন করছে। ঈদের প্রকৃত সৌন্দর্য তখনই ফুটে ওঠে, যখন এই আনন্দ সবার মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
বাংলাদেশের খবরের কাছে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন ঈদ নিয়ে তাদের ভাবনা।
ঈদের চাঁদ আকাশে
চাঁদ মুসলিম উম্মাহর ক্যালেন্ডারের পথপ্রদর্শক। চাঁদ দেখে রমজান শুরু হয়, চাঁদ দেখেই ঈদের ঘোষণা আসে। এক মাস রোজা রাখার পর সেই প্রতীক্ষিত সন্ধ্যায় আকাশে একফালি চাঁদ দেখা দিলে আনন্দের বাঁধ ভাঙে।
ঈদ শুধু ধনী-গরিবের নয়, এটি সবার উৎসব। দরিদ্র মানুষ সারাবছর সীমাবদ্ধতার মাঝে থেকেও এই দিনে একটু আনন্দের স্বপ্ন দেখে। তারা চায় পরিবার নিয়ে ঈদের খুশিতে শামিল হতে। এ কারণেই ইসলামে জাকাত ও ফিতরার বিধান, যাতে সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষ ঈদের আনন্দ অনুভব করতে পারে। অন্যদিকে, বিত্তশালীরা নিজেদের মতো কেনাকাটা ও প্রস্তুতি সারলেও প্রকৃত ঈদ তখনই পূর্ণতা পায়, যখন সবাই এক কাতারে মিলিত হয়।
ঈদের নামাজের মাঠে ধনী-গরিবের ব্যবধান মুছে যায়, হৃদয়ের বন্ধন দৃঢ় হয়। ঈদ আসে সম্প্রীতির বার্তা নিয়ে, সবার মুখে হাসি ফোটাতে। তাই ঈদের প্রকৃত সৌন্দর্য তখনই প্রকাশ পায়, যখন এই আনন্দ সবাই ভাগ করে নেয়।
তানজিল কাজী
শিক্ষার্থী, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
নতুন প্রজন্মের ঈদ আনন্দ
ঈদ মুসলিম উম্মাহর জন্য এক অনন্য উৎসব, যা ভ্রাতৃত্ব ও সৌহার্দ্যের বার্তা নিয়ে আসে। সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে ঈদ উদযাপনেও এসেছে নতুন মাত্রা, বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের জন্য ঈদ এখন প্রযুক্তি ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আরও রঙিন হয়ে উঠেছে।
সকালের শুরুতেই ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। নতুন পোশাক পরে সেলফি তোলা ও তা ফেসবুক-ইনস্টাগ্রামে শেয়ার করা যেন ঈদের আনন্দেরই অংশ। ঈদের নামাজ শেষে পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, বিনোদন ও ভ্রমণ নতুন প্রজন্মের ঈদ উদযাপনকে আরও প্রাণবন্ত করে তোলে।
ঈদের অন্যতম আকর্ষণ হলো ঈদী পাওয়া ও দেওয়া। ছোটরা ঈদী পেয়ে উচ্ছ্বসিত হয়, আর নতুন প্রজন্ম এই অর্থ দিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটায়, উপহার কিনে ও আনন্দ ভাগ করে নেয়। তবে ঈদের আনন্দ কেবল নিজের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়—অনেকেই সুবিধাবঞ্চিতদের মাঝে পোশাক ও উপহার বিতরণ করে আনন্দ ছড়িয়ে দেয়।
নতুন প্রজন্মের কাছে ঈদ শুধু বিনোদন নয়, এটি ভালোবাসা, মানবতা ও সম্প্রীতির এক অপূর্ব সংমিশ্রণ, যা সবাইকে একসূত্রে বাঁধে।
তাবাসসুম নিশু
দর্শন বিভাগ,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ক্ষুদ্র আয়, সীমাহীন আনন্দ
ঈদ মানেই আনন্দ, আর সেই আনন্দের আসল রূপ তখনই প্রকাশ পায়, যখন তা প্রিয়জনদের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া যায়। ছোটবেলায় বাবা-মাকে দেখতাম, তারা আমাদের নতুন জামা কিনে দিতেন, কিন্তু নিজেদের জন্য কিছু কেনার কথা ভাবতেন না। বড় হয়ে বুঝেছি—ঈদের প্রকৃত আনন্দ আত্মত্যাগ আর ভালোবাসায়।
প্রথমবার নিজের উপার্জনে মা-বাবার জন্য ঈদের উপহার কিনেছিলাম। সীমিত আয় ছিল, কিন্তু মায়ের জন্য একটি শাড়ি আর বাবার জন্য একটি পাঞ্জাবি কেনার পর যে প্রশান্তি অনুভব করেছিলাম, তা ছিল অমূল্য। তাদের মুখের হাসি, চোখের আনন্দ আমার ঈদকে আরও রঙিন করেছিল।
একবার এক বন্ধুর জন্য ছোট্ট একটি উপহার কিনেছিলাম, যা আমাদের বন্ধুত্ব আরও গভীর করেছিল। ঈদের আনন্দ দামি উপহার বা ভোজনের মধ্যে নয়, বরং ভালোবাসা ও আন্তরিকতার মধ্যেই লুকিয়ে থাকে। সামান্য কিছু দিয়েও যদি প্রিয়জনদের মুখে হাসি ফোটানো যায়, সেটাই ঈদের সবচেয়ে বড় উপহার।
মো. হিমেল খান
রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
ঈদ : আনন্দ, ভ্রাতৃত্ব ও ত্যাগের উৎসব
ঈদ মুসলিম উম্মাহর প্রধান ধর্মীয় উৎসব, যা বছরে দুইবার পালিত হয়—ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা। ঈদুল ফিতর এক মাস সিয়াম সাধনার পর আত্মসংযমের পুরস্কার নিয়ে আসে, আর ঈদুল আজহা আল্লাহর প্রতি একনিষ্ঠতা ও আত্মত্যাগের মহিমা স্মরণ করিয়ে দেয়।
শাওয়াল মাসের নয়া চাঁদ মুসলিম মনে খুশির দোল এনে দেয়। ঈদের দিন শুরু হয় ফজরের নামাজ আদায়ের মাধ্যমে, এরপর গোসল সেরে পরিষ্কার পোশাক ও সুগন্ধি ব্যবহার করে সবাই ঈদগাহে সমবেত হয়। ধনী-গরিব ভেদ ভুলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আদায় করা হয় ঈদের নামাজ। পরস্পর আলিঙ্গন ও শুভেচ্ছা বিনিময়ের মধ্য দিয়ে ভ্রাতৃত্ব আরও দৃঢ় হয়।
ঈদের অন্যতম অনুষঙ্গ সাদাকাতুল ফিতর, যা দরিদ্রদের ঈদের আনন্দে শামিল হওয়ার সুযোগ দেয়। ছোটদের ঈদি দেওয়ার রীতি ঈদকে আরও আনন্দময় করে তোলে। ঈদের প্রকৃত সৌন্দর্য তখনই প্রকাশ পায়, যখন এই আনন্দ সবার মাঝে সমভাবে ছড়িয়ে দেওয়া হয়, সম্প্রীতি ও মানবতার বার্তা প্রতিষ্ঠিত হয়।
মাসুমা বিনতে মুজিব
আরবী বিভাগ,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
রক্তঝরা ঈদ
ঈদ মানেই খুশি, কিন্তু এবার সেই আনন্দ যেন ফিকে। আমরা ঈদের আনন্দের অপেক্ষায়, আর ওদিকে আমাদের ভাইদের উপর নেমে এসেছে জীবন্ত উহুদের প্রান্তর। আমরা মেনে নিয়েছি—আমাদের ঈদ, আর ওদের রক্তস্নান। তাই আজকাল আর অবাক হই না।
আমরা পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করব, অথচ আমার গাজার ভাইয়ের ঈদ শুরুর আগেই তার মা বুকে আগুন নিয়ে বিদায় নিয়েছেন। আমাদের ঘরে হাসি, ওদের ঘরে শোক।
ইতিহাস একদিন বলবে—বোমার আঘাতের সামনে গাজা একাই লড়ছিল, আর মুসলিম বিশ্ব ঈদ উদযাপন করছিল।
আমরা ঈদের নামাজে কোলাকুলি করব, সেমাই খাব, কিন্তু আমার গাজার ভাইটির বাড়ি ততক্ষণে ধুলোয় মিশে গেছে। তার ঈদ শুরু হওয়ার আগেই আকাশ থেকে ‘প্রিয় তারাবাতি’ নেমে এসেছে— বুমম!
কায়েস শেখ
ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
এমএইচএস