
স্বাধীনতা দিবস কেবল অতীতের গৌরবগাঁথা নয়, বর্তমানের সংগ্রাম এবং ভবিষ্যতের প্রত্যাশারও প্রতীক। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দৃষ্টিতে স্বাধীনতার সংজ্ঞা যেমন বহুমাত্রিক, তেমনি প্রাসঙ্গিক সমাজের নানা ক্ষেত্রে। স্বাধীনতার ৫৫তম দিবস উপলক্ষে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা তাদের চিন্তাভাবনা জানিয়েছেন বাংলাদেশের খবরের সঙ্গে—
স্বাধীন হয়েও পরাধীনতার শেকলবন্দি
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা শুধু একটি পতাকা বা ভূখণ্ডের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি সমাজের প্রতিটি স্তরে ন্যায়বিচার ও মর্যাদার লড়াই। তিনি উল্লেখ করেন, রাজনৈতিক স্বাধীনতা পেলেও সমাজে এখনো নারী নির্যাতন, মতপ্রকাশে ভীতি ও অর্থনৈতিক বৈষম্য বিদ্যমান। স্বাধীনতা তখনই পূর্ণতা পাবে, যখন একজন দিনমজুরের সন্তানও উচ্চশিক্ষা নিতে পারবে, নারীরা রাস্তায় নিরাপদে হাঁটবে এবং ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই ন্যায্য অধিকার ভোগ করবে।
মুসতারিন রহমান স্নিগ্ধা
শিক্ষার্থী, ফোকলোর বিভাগ
স্বাধীনতা মানে বিবেকেরে কারাগার থেকে মুক্তি
স্বাধীনতা শুধু শত্রু থেকে মুক্তি নয়, এটি অন্ধকার থেকে আলোর পথে যাত্রা। স্বাধীনতা মানে মানুষ হিসেবে সর্বক্ষেত্রে মৌলিকতা বজায় রাখতে পারার যোগ্যতা, বিবেকের কারাগার থেকে মুক্তি, বুদ্ধিমত্তার বিকাশ। তিনি আরও বলেন, আমার চোখে স্বাধীনতা মানে সার্বিকভাবে মনুষ্যত্বের জাগরণ, কবি নজরুলের ভাষায় উপেক্ষিত শক্তির উদ্ভব।
মাহমুদা আক্তার নাঈমা
শিক্ষার্থী, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ
নারী-পুরুষের ন্যায্যতা স্বাধীনতা দিবসের অঙ্গীকার
স্বাধীনতা মানে শুধু জাতীয় পতাকা নয়, একজন মায়ের পেটভরা খাবার, একজন কৃষকের ফসলের ন্যায্য মূল্য। তিনি প্রশ্ন তুলেন, ‘যে দেশে শতকরা বেশিভাগ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে, সেখানে স্বাধীনতার অর্থ কী?’ তার মতে, রাষ্ট্রের দায়িত্ব প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক চাহিদা পূরণ করা। ধনী-গরিবের ব্যবধান কমিয়ে, নারী-পুরুষের ন্যায্যতা এনে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গড়াই হোক স্বাধীনতা দিবসের অঙ্গীকার।
আলাওল করিম ফয়সাল
শিক্ষার্থী, মার্কেটিং বিভাগ
মতপ্রকাশের সাহস চাই
জন্ম থেকে আমরা প্রকৃতি ও সমাজের শৃঙ্খলে বাঁধা। ‘এটা কর না, সেটা কর না’—এটাই কি স্বাধীনতা? তিনি বলেন, স্বাধীনতা হলো শৃঙ্খল মেনে নিয়েও মুক্তির স্বপ্ন দেখা। মতপ্রকাশের সাহস, নিঃশ্বাস নেওয়ার অধিকার—এগুলোই আসল মুক্তি। তবে মুক্তির সাথে দায়িত্ববোধও জরুরি। অন্যের অধিকার যেন ক্ষুণ্ন না হয়, সেটি খেয়াল রাখতে হবে।
চৈতী রাণী রায়
শিক্ষার্থী, দর্শন বিভাগ
ব্যক্তিজীবনের স্বাধীনতাই জাতীয় স্বাধীনতা
জাতীয় স্বাধীনতা তখনই অর্থবহ, যখন প্রতিটি ব্যক্তি মুক্ত। তিনি উদাহরণ টানেন, একজন রিকশাচালক যদি তার সন্তানকে স্কুলে পাঠাতে না পারে, তাহলে তার জন্য স্বাধীনতা কী অর্থ বহন করে? স্বাধীনতা মানে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা। তার মতে, দুর্নীতি দূর করে সুশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ব্যক্তির সম্ভাবনা বিকাশের সুযোগ দিলেই জাতি এগিয়ে যাবে।
হৃদয় আহমেদ
শিক্ষার্থী, অর্থনীতি বিভাগ
স্বাধীনতার প্রতিশব্দ হোক অন্যায়ের প্রতিবাদ
স্বাধীনতা মানে নিজের মত প্রকাশের অধিকার, অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর সাহস। আমি যখন স্বাধীনতার কথা ভাবি, তখন আমার চোখের সামনে ভেসে ওঠে একটি মুক্ত আকাশ, যেখানে পাখিরা ডানা মেলে উড়ছে। একটি এমন সমাজ, যেখানে মানুষ নিজের ইচ্ছেমতো কথা বলতে পারে, হাসতে পারে এবং বাঁচতে পারে।
আবিদা সুলতানা চিশতী
শিক্ষার্থী,আইন ও বিচার বিভাগ
এখনো বন্দি বৈষম্যের বেড়াজালে
স্বাধীনতা মানে নির্ভয়ে বাঁচার অধিকার। এটি শুধু পরাধীনতার শৃঙ্খল ভাঙা নয়, বরং নিজের চিন্তা, বিশ্বাস ও স্বপ্নকে মুক্তভাবে প্রকাশ করার অধিকার। আমার চোখে স্বাধীনতা মানে ভয়ের বাইরে দাঁড়িয়ে নিজের মত প্রকাশ করা, অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো এবং নিজের জীবনযাত্রার পথ নিজেই নির্ধারণ করা।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, স্বাধীনতা তখনই পরিপূর্ণ হয়, যখন মানুষ জাতি, ধর্ম-বর্ণ, লিঙ্গ নির্বিশেষে সমান অধিকার ভোগ করতে পারে। এটা কেবল একটি দেশের স্বাধীনতা নয়, বরং ব্যক্তি স্বাধীনতাও। কিন্তু মনে প্রশ্ন জাগে, আজও কি আমরা প্রকৃত স্বাধীন? বৈষম্য, দুর্নীতি, অন্যায় ও দমন-পীড়নের বেড়াজালে অমরা বন্দি। স্বাধীনতা মানে শুধু একটি দিনের উৎসব নয়, বরং ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ানো, সত্যের পথে থাকা এবং অন্যের অধিকার রক্ষা করা।
আবিদ হাসান
শিক্ষার্থী, দর্শন বিভাগ