Logo

ক্যাম্পাস

জবি ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের রমজান ও ঈদ প্রত্যাশা

Icon

জান্নাতুন নাইম, জবি

প্রকাশ: ২৭ মার্চ ২০২৫, ২০:২২

জবি ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের রমজান ও ঈদ প্রত্যাশা

পবিত্র মাহে রমজানের পর মুমিনগণের কাছে খুশির জোয়ার নিয়ে হাজির হয় ঈদুল ফিতর। রমজান কাটিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শিক্ষার্থীদের মধ্যে চলে বাড়ি ফেরার তাড়া। রমজান ও ঈদের খুশি কাটাবেন পরিবারের সঙ্গে। 

অনলাইন ক্লাসের জন্য অনেকেই ফিরে গেছেন বাড়ি। তবে রমজানের দ্বিতীয় দশকের শেষ দিকে এসেও ক্যাম্পাসে রয়েছেন সাংবাদিকরা। আন্তর্জাতিক ও দেশের নানা ঘটনায় উত্তাল থাকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ক্যাম্পাস। পেশাগত দায়িত্ব পালনে তাই দেরিতে ফিরতে হয় ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের।

এ বছর ক্যাম্পাসে ইফতার মাহফিলে নেই কোনো নিষেধাজ্ঞা। গতবছর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাসে ইফতার করতে বাধা দেয়। ঘটে হামলার ঘটনাও। প্রশাসন থেকে দেওয়া হয় নিষেধাজ্ঞা।

তবে এ বছর ক্যাম্পাসের চিত্র ভিন্ন। সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ববোধের জায়গা থেকে রমজানের আমেজ ও ইফতার মাহফিলমুখর ক্যাম্পাস। বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন, বিভাগ এবং জেলা ছাত্র কল্যাণের ইফতার মাহফিলে ব্যস্ত ছিল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

‘সম্প্রীতির রমজান, স্বল্প কর্মবিরতিতে ঈদ’
দৈনিক সময়ের আলোর জবি প্রতিনিধি মুশফিকুর রহিম ইমন বলেন, ‘জবি ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের রমজান মাস ছিল বিশেষভাবে প্রশান্তির ও সম্প্রীতির এক মিশ্রণ। সংগঠনের সকলে মিলে একসাথে ইফতার গোছানো, ইফতার করা- যা সুন্দর অনুভূতির জন্ম দিয়েছে। ঈদে ছুটির সময়টা সকলেই নিজ বাড়িতে কাটাতে চায়। এ সময় পরিচিতজনদের সাথে দেখা হয়। আমারও দেখা হবে। যদিও নানাবিধ কারণে হয়তো বড় ছুটি মেলা কঠিন, তবে ইদের সময়ে একটু বিরতি ও পরিচিতজনদের সাথে সময় কাটানোর পরিকল্পনা নিশ্চয়ই থাকবে। আশা করি, সবমিলিয়ে এবারের ঈদ ভালোই কাটবে।’

‘ক্যাম্পাস সাংবাদিকরা অধিকাংশই বেতন পায় না’
দৈনিক কালের কণ্ঠের জবি প্রতিনিধি জুনায়েদ শেখ বলেন, ‘ক্যাম্পাসে সাংবাদিকদের রমজান কিছুটা ব্যতিক্রম ও রোমাঞ্চকর। কারণ প্রথম দিকে সাংবাদিক সমিতির ছোট-বড় ভাই-ব্রাদার মিলে ইফতার করার আনন্দ বাড়িয়ে দেয়। 

তিনি বলেন, ‘সকলে যখন ইফতারে ব্যস্ত, তখন একজন সাংবাদিক পর্যবেক্ষণ করতে থাকে। কে কে বক্তব্য দিল, কী বক্তব্য দিল। গুরুত্বপূর্ণ অংশ রেকর্ড, ছবি অথবা ভিডিও করতে মোটেও ভুলে যায় না সে। আর ঈদ কাটবে কোনোরকম। ক্যাম্পাস সাংবাদিকরা অধিকাংশই বেতন পায় না। যারা পায়, তাও ‘নুন আনতে পান্তা ফুরায়’ এর মতো অবস্থা।’

তিনি আরও বলেন, ‘পরিবারের সকলের জন্য উপহার নিয়ে যেতে পারলে ঈদ হয় আনন্দের। মা-বাবা ভাই-বোনদের মুখে ফোটে হাসি। কিন্তু সেই হাসি ফুটবে না অনেকের পরিবারের। যাহোক, দিনশেষে কয়েকমাস পর পরিবারের সঙ্গে দেখা হলে বেশ প্রশান্তি অনুভূত হবে। এটুকুই পাওয়া।’

‘আগে রমজানকেন্দ্রিক অনুষ্ঠানে হামলা হতো, এবার স্বস্তি’
দৈনিক যুগান্তরের জবি প্রতিনিধি সাকেরুল ইসলাম বলেন, ‘সাংবাদিকদের বলা হয় জাতির দর্পণ। তাই পুরো জাতি যদি ভালো থাকে, তাহলে সাংবাদিকরা ভালো থাকতে পারে। সে দিক দিয়ে এবারের ক্যাম্পাসে রমজানটি আমার কাছে অনেক স্বস্তিদায়ক মনে হয়েছে। বিগত বছরগুলোতে রমজান কেন্দ্রিক বিভিন্ন প্রোগ্রামে নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী ছাত্রলীগের হামলার ঘটনা ঘটেছিল। এই বছর এ ধরনের কোনে ঘটনা ঘটেনি।’

তিনি বলেন, ‘সবাই ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য নিয়ে তাদের রোজা পালন করেছে। প্রতিবছরের ন্যায়, এইবারও ঈদ গ্রামে উদযাপন করা হবে। তবে আমি ঈদ উদযাপন করতে পারলেও পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের মজলুম মুসলিমদের কাছে সেই ঈদ এখনো আসেনি। ফিলিস্তিন, কাশ্মীর, উইঘুরসহ পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে মুসলিমরা নির্যাতিত হচ্ছে। যেদিন মুসলিমরা স্বতস্ফূর্তভাবে ঈদ উদযাপন করতে পারবে, সেদিনই আমার জীবনে প্রকৃত ঈদের আমেজ আসবে, তার আগে নয়।’

‘এবারের রমজান সবচেয়ে বেশি প্রাণবন্ত’
দৈনিক আমাদের সময়ের জবি প্রতিনিধি রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) সাত একরের ছোট্ট ক্যাম্পাস। আর এই ছোট্ট ক্যাম্পাসের প্রাণ হচ্ছে অবকাশ ভবন। অবকাশ ভবনের বিভিন্ন সংগঠনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি একটিভ এবং ক্যাম্পাসে সেরা সংগঠন হচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (জবিসাস)। জবিসাসের একজন সদস্য ও সাংবাদিক হিসেবে এবারের রমজান সবচেয়ে বেশি প্রাণবন্ত সজীবতায় কেটেছে আমার। নিয়মিত সমিতিতে ইফতার করা ছিল সবচেয়ে বেশি আনন্দের। এবারের ঈদ অন্যবারের মতোই পরিবারের সাথে কাটাব বলে আশা করছি।’

‘অনেকদিন বাসায় যাওয়া হয় না, আমিও বাসায় যাব’
দ্য ডেইলি সানের জবি প্রতিনিধি তানভীর আনজুম বিশ্বাস বলেন, ‘রমজানে রোজা রাখছি, পাশাপাশি চলছে অনলাইন ক্লাস। তবে ক্যাম্পাস আমার প্রিয় জায়গা হওয়ায় ইফতারটা সব সময় ক্যাম্পাসেই করি। আমাদের সাংবাদিক সমিতির সদস্যদের সাথে। সমিতিটা যেন আরেকটি পরিবার।’

তিনি আরও বলেন, ‘নিউজকেন্দ্রিক কিছুটা ব্যাস্ততা ছিল, তবে সময়টা ভালোই পার করছি। আর রমজান মানেই ঈদের আগমনী গান। ফেসবুকে ঢুকলেই স্বপ্ন যাবে বাড়ি গানটি শুনতে পাচ্ছি। অনেকদিন বাসায় যাওয়া হয় না, আমিও বাসায় যাব।’

‘সেহরিতে মায়ের ডাকাডাকি মিস করি, ঈদ সেই শূন্যতা পূরণ করে’
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা পোস্টের জবি প্রতিনিধি মাহতাব লিমন বলেন, ‘রমজানের পর পরিবারের সঙ্গেই ঈদ পালনের প্রত্যাশা। পড়াশোনার সুবাদে মেসে থেকে রমজানে সেহরিতে মায়ের ডাকাডাকি, পরিবারের সকলের সঙ্গে ইফতার অনেক বেশি মিস করি। ঈদ সেই শূন্য অনুভূতিগুলো পূরণ করে দেয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিগত যেকোনো বছরের ন্যায় এবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিকদের রমজান ব্যতিক্রম কেটেছে। ক্যাম্পাসে প্রতিদিন ইফতারকেন্দ্রিক একাধিক দাওয়াত থাকায় দ্বিধার মধ্যে পড়ে যেত কোন ইফতারে যুক্ত হবে। এ ছাড়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিতে প্রতিদিনই বিভিন্ন রকমের ইফতারের আয়োজন থাকত। যা ইফতারের আমেজের মাত্রা দ্বিগুণ বৃদ্ধি করেছে। নিজেদের মধ্যে ভালোবাসার সম্প্রীতি বৃদ্ধি ও সৌহার্দপূর্ণ আচরণ সৃষ্টির নেপথ্যে ইফতার মাহফিল গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।’

‘রাজনৈতিক সহবস্থানে রমজান’
দৈনিক সমকালের রিপোর্টার ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি ইমরান হুসাইন বলেন, ‘এবারের রমজানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ক্যাম্পাসের চিত্র অন্যবারের তুলনায় একেবারে ভিন্ন। বিভিন্ন রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠন, জেলা ছাত্র কল্যাণ, শিক্ষকসহ সকলের অংশগ্রহণে ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। যা বিগত বছরগুলোতে দেখা যায়নি।’

তিনি বলেন, ‘এই দৃশ্য ক্যাম্পাস সাংবাদিকতায় ঐতিহাসিক চিত্র হয়ে থাকবে। ক্যাম্পাসে কর্মব্যস্ততায় দিন পার করে ছোট-বড় ভাইদের সঙ্গে ইফতারে প্রশান্তি মিলে। তবে পেশাগত দায়বোধ থেকে বাড়ি ফেরা হয় দেরিতে। চাতক পাখির মতো চেয়ে থাকে বাবা-মা। পরিবার ছাড়া রমজান ঈদের আমেজ পুরোপুরি অনুভব করা যায় না। তাই পুরো রমজান ক্যাম্পাসে কাটালেও ঈদ পরিবারের সঙ্গেই কাটাব।’

তিনি আরও বলেন, ‘অনলাইন ক্লাসের জন্য অনেকেই বাড়ি চলে গেছে। শুধু ক্যাম্পাস সাংবাদিকরাই রয়েছে। সাংবাদিকতা পেশায় আসলে ছুটি বলতে খবর না থাকলেই ছুটি। সেক্ষেত্রে বিভিন্ন ঘটনায় ক্যাম্পাস উত্তাল হচ্ছে। ফলে বাড়ি যাওয়ার সময়ও পেছাচ্ছে।’

  • জেএন/এমজে
Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর