গুচ্ছ ভর্তি পদ্ধতি নিয়ে ইবি শিক্ষার্থীদের ভাবনা
ক্যাম্পাস ডেস্ক
প্রকাশ: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:০৭
ছবি : বাংলাদেশের খবর
দেশের ২০ টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয় ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ থেকে। সর্বশেষ ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে অনুষ্ঠিত গুচ্ছ পদ্ধতিতে ২৪ টি বিশ্ববিদ্যালয় অংশগ্রহণ করেছিল।
তবে ২০২৪-২৫ নতুন শিক্ষাবর্ষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এই পদ্ধতি থেকে বের হয়ে নিজস্ব ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। এ অবস্থায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ পদ্ধতি থেকে বের হয়ে নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার দাবিতে আন্দোলন করা হচ্ছে।
এবার গুচ্ছ ভর্তি পদ্ধতি নিয়ে নিজেদের ভাবনা জানিয়েছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীরা। তাদের কথা তুলে ধরেছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মাসুম শাহরিয়ার—
সেশনজটের প্রাথমিক ও অন্যতম বড় সূত্রই হলো গুচ্ছ পদ্ধতি
আপাত দৃষ্টিতে গুচ্ছ পদ্ধতি কার্যকরী মনে হলেও ইতোমধ্যে বেশকিছু জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। এখানে ভর্তি প্রক্রিয়াটি দীর্ঘসূত্রিতা। এ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়ে ক্লাস শুরু হতে সময় লাগে প্রায় ৬-৭ মাস। সেশনজটের প্রাথমিক ও অন্যতম বড় সূত্রই হলো এই গুচ্ছ পদ্ধতি। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি আসনের জন্য রীতিমতো যুদ্ধাবস্থার সৃষ্টি হয়, সেখানে গুচ্ছ পদ্ধতির কারণে ভর্তিচ্ছু সংকটে গণবিজ্ঞপ্তি পর্যন্ত প্রকাশ করতে হয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন ফাঁকা রেখেই তাদের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে দেখা গেছে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের গুণগত মান নিয়েও অভিযোগ উঠেছে। যদিও মানসম্মত শিক্ষার্থী পাওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অ্যাকাডেমিক মানোন্নয়ন জরুরি। আবার, গুচ্ছ পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের যাতায়াত ভোগান্তি কমেছে। নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা অনেকটাই নিশ্চিত করা গেছে। অর্থের অপব্যয় কিছুটা হলেও কমেছে। কিন্তু এসব উপকারিতার বিরুদ্ধে যুক্তিগুলো আরও বেশি শক্তিশালী।
ইসতিয়াক আহমেদ হিমেল
শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
গুচ্ছ পদ্ধতি ভোগান্তি কমানোর পরিবর্তে আরও বাড়িয়েছে
শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি নিরসনের জন্য গুচ্ছ পদ্ধতি চালু করা হলেও পক্ষান্তরে তা ভোগান্তি আরও বাড়িয়েছে। এতে শিক্ষার্থীরা ভর্তি জটিলতায় পড়ছেন। এ পদ্ধতিতে পরীক্ষা হওয়ার পরও একজন শিক্ষার্থীকে আলাদা আলাদা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে ভাইভা দিতে হয়। এতে আর্থিক চাপ ও ভোগান্তি বাড়ছে। গুচ্ছ পদ্ধতিতে ‘গুচ্ছ’ উদ্দেশ্যই যদি বাস্তবায়ন না হয়, তাহলে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বকীয়তা নষ্ট করা ঠিক বলে মনে হয় না। নিজস্ব পদ্ধতিতে পরীক্ষা হলে অনেক শিক্ষার্থীদের আগমন হয় ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে। নতুন নতুন পরীক্ষার্থীদের আগমনে ক্যাম্পাসে উৎসবের আমেজ বিরাজ করে। ভ্রাতৃত্বের বন্ধন দৃঢ় হয়। তাই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে চাওয়া, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় যেন গুচ্ছ ছেড়ে নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করে।
লুবাবা আনজুম ঐশী
শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
গুচ্ছ পদ্ধতির ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্বকীয়তা হারাচ্ছে
গুচ্ছ পদ্ধতির মাধ্যমে ভর্তি পরীক্ষা একটি সমন্বয় সাধন করলেও মূলত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্বকীয়তা হারাচ্ছে। প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব শিক্ষা পদ্ধতি, সংস্কৃতি ও বিশেষত্ব ছিল। কিন্তু গুচ্ছ পরীক্ষার ফলে সেগুলো মুছে যাচ্ছে। এতে কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের সীট ফাঁকা থাকছে এবং শিক্ষার্থীরা বাড়ির কাছের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। ফলে আঞ্চলিকতার সমস্যা তৈরি হচ্ছে। তাই গুচ্ছ পদ্ধতি বন্ধ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে স্বতন্ত্র ভর্তি পরীক্ষা চালিয়ে তাদের স্বকীয়তা রক্ষা করা উচিত। এতে শিক্ষার মান ও বৈচিত্র্য বজায় থাকবে এবং শিক্ষার্থীরা তাদের পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবেন।
মো. হাসিব আহমেদ
শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
স্বতন্ত্র ভর্তি পদ্ধতির প্রয়োজন
গুচ্ছ পদ্ধতি বর্তমানে উচ্চশিক্ষায় ভর্তি প্রক্রিয়ার একটি পরিচিত মাধ্যম। তবে এর মধ্যে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো পরীক্ষার অস্বাভাবিক চাপ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্থক্য সম্পর্কে যথাযথ ধারণার অভাব। অনেক শিক্ষার্থী তাদের পছন্দের বিষয়ে ভর্তি হতে চায়, কিন্তু গুচ্ছ পদ্ধতির কারণে সবাই এই সুযোগ পায় না। যার ফলে তাদের মনের ইচ্ছার সঙ্গে বাস্তবতার অমিল তৈরি হয়। এছাড়া গুচ্ছ পদ্ধতিতে বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিষয় নির্বাচন করার ক্ষেত্রে স্বাধীনতা কমে যায়। এটি শিক্ষার্থীদের জন্য একটি সীমাবদ্ধতা সৃষ্টি করে, যেখানে তারা তাদের নিজস্ব আগ্রহ ও দক্ষতা অনুযায়ী প্রতিষ্ঠান বা বিষয় নির্বাচন করতে পারেন না। এসব সীমাবদ্ধতা শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ বাড়িয়ে দেয় এবং তাদের জন্য একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় ও বিষয় পর্যালোচনা করা আরও কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
মিজানুর রহমান মিজান
শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
এটিআর/