Logo
Logo

ক্যাম্পাস

জবির বাসে হামলায় জরিমানা দেড় লাখ, শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ

Icon

জবি প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৭:৩৮

জবির বাসে হামলায় জরিমানা দেড় লাখ, শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী, বাসচালক ও বাসে হামলার ঘটনায় প্রায় ১ লাখ ৬৩ হাজার টাকা জরিমানা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এতে প্রতিবাদী প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে। 

জরিমানার বিষয়টি সামনে এলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আমরা জকসু চাই (জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ) নামক একটি গ্রুপ এবং ব্যাকবেঞ্চার সাউট ফ্রম জেএনইউ নামক পেজে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন পোস্টের মাধ্যমে নিজেদের একাধিক প্রতিবাদী মন্তব্য প্রকাশ করে।

রোববার (২৯ ডিসেম্বর) মহাখালী বাস টার্মিনালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে একতা পরিবহনের কর্মচারীবৃন্দ সংঘবদ্ধ ও পরিকল্পিতভাবে অতর্কিত হামলা চালায়। এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছে একতা পরিবহন মালিক কর্তৃপক্ষ। হামলার ক্ষয়ক্ষতিতে গাড়ি মেরামত বাবদ ১২ হাজার ৯০০ টাকা, আহত ড্রাইভারের চিকিৎসা বাবদ ১ লাখ টাকা, হেল্পার ও শিক্ষার্থীদের চিকিৎসায়  ৩০ হাজার টাকাসহ আরও ২০ হাজার টাকা জরিমানা দেবে বলে জানায় একতা পরিবহন মালিক কর্তৃপক্ষ।

তবে আমরা জকসু চাই ফেসবুক গ্রুপে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তুলে ধরেন নিজেদের মন্তব্য। তারা মনে করেন, জরিমানার মাধ্যমে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসচালক ও আহত শিক্ষার্থীদের অসম্মান করা হয়েছে। এতে জগন্নাথের শিক্ষার্থীদের যেকোনো লোকাল বাসের কর্মচারীরা মারবে এবং শুধু ক্ষতিপূরণ দিয়ে সমোঝোতা করবে। তারা মনে করেন, এই জরিমানায় জগন্নাথের শিক্ষার্থীদের রক্ত দেড় লাখে বিক্রি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

আজকের ক্ষতিপূরণের টাকা চালক বা শিক্ষার্থীরা পাবে কি না, সেটা আমার প্রশ্ন নয় উল্লেখ করে ভোরের কাগজের রিপোর্টার রকি আহমেদ লেখেন, আগেও শিক্ষার্থীরা মার খেলে মীমাংসা হয়ে যেত। এতে লাভও হতো। কখনো লাখ, কখনো অর্ধলাখ টাকা ক্ষতিপূরণ পেলেও চিকিৎসার কিছু ব্যয় করা হতো। বাকি টাকার হিসাব থাকত না। কিন্তু এসব ঘটনার আইনি ব্যবস্থা প্রয়োজন। মহাখালীতে এ বছরেই আরও একবার জবি শিক্ষার্থীরা বাস শ্রমিকদের দ্বারা রক্তাক্ত হয়েছিল। সেটার বিচার না হওয়ায় আজকেরটা পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। এ ঘটনার বিচার না হলে মহাখালি জবি শিক্ষার্থীদের জন্য ভীতিকরই হয়ে থাকবে।

ব্যাকবেঞ্চার সাউট ফ্রম জেএনইউ নামক একটি ফেসবুক পেজ থেকে ‘শিরাদাঁড়ার তো মারাত্মক অবস্থা’ ক্যাপশনে একটি প্রতীকী চিত্র পোস্ট করা হয়। যেখানে দেখানো হয়, উল্কা-৪ বাস ও চালকের ছবির নিচে একজনকে জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে, ‘তুমি এটা কত টাকার বিনিময়ে করেছ?’ উত্তরে বলা হচ্ছে, ‘দেড় লাখ।’

এছাড়া আমরা জকসু চাই গ্রুপে ওমর ফারুক জিলন লেখেন, ‘এই টাকা দিয়ে বাস মেরামত করাবেন, না কি আহতদের চিকিৎসা করাবেন, না কি ছাত্রদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন?’

মো. তানভীর হোসাইন লেখেন, ‘আচ্ছা চিকিৎসা খরচ দিলে কি যে কাউকেও সুযোগ দিবে প্রশাসন?’

মো. শাহিন মিয়া লেখেন, ‘জবিয়ানদের রক্তের মূল্য টাকা হতে পারে না। আমাদের গায়ে হাত দিয়েছে। এর প্রতিশোধ আমাদেরই নিতে হবে। না হয় এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে। এক হও জবিয়ানস।’

মো. তৌহিদুল ইসলাম লেখেন, ‘জবিয়ানদের রক্তের দাম টাকা দিয়ে কেনা যাবে না।’

মো. সোহাগ মন্ডল তুহিন লেখেন, ‘ধন্যবাদ প্রশাসনকে টাকার মাধ্যমে জগন্নাথের রক্ত এবং সম্মানের সুষ্ঠু সমাধান করার জন্য। আচ্ছা জগন্নাথের বিষয়গুলো এমন, যে কেউ এসে মারবে আমরা বিচার নিয়ে যাবো বা তারা আসবে। কিছু ক্ষতিপূরণ দিয়ে যাবে। আর সবাই চুপচাপ মেনে নেবে ভদ্র ছেলের মতো।’

এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মামলা করবে কি না, হামলাকারীদের শাস্তি এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিষয়ে পরিবহন পরিচালক অধ্যাপক ড. ওমর ফারুক বলেন, এখন যদি মামলা করা হয়, তাহলে আইন অনুযায়ী ভুক্তভোগী তিন বছর পর ১০ হাজার টাকা পাবে। তাই আমরা পুলিশি ঝামেলায় যাইনি। তবে জগদীশ মামলা করলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাকে পুরোপুরি সহযোগিতা করবে। 

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রতিক্রিয়া নিয়ে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা যা চাচ্ছে তাতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। আহতদের চিকিৎসার জন্য ৭০-৮০ হাজার টাকা খরচ হবে। এটা কে দেবে? আর বাস মালিক কর্তৃপক্ষ লাখ লাখ টাকার গাড়ির নিরাপত্তা চিন্তা করেই নিজে থেকে আমাদের কাছে এসেছে। কারণ এ ঘটনার আসামি বাসচালক ও হেল্পার পলাতক রয়েছে। পরবর্তীতে এমন ঘটনা ঘটবে না জানিয়ে মুচলেকা দিয়েছেন। হামলায় যুক্তরা পরিবহনের গাড়ি চালাতে পারবে না এটাও নিশ্চিত করেছেন তারা।

তিনি আরও বলেন, প্রথমত জরিমানা করা হয়েছে আহতদের চিকিৎসা যাতে দ্রুত হয়। এক্ষেত্রে মামলা করলে বিষয়টি অনেকদূর গড়াবে, চিকিৎসায় বিলম্ব হতে পারে। ফলে প্রাথমিকভাবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয়ত যারা হামলার সঙ্গে যুক্ত আছে তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হবে। এক্ষেত্রে বিআরটিএ অফিসে আমরা চিঠি দিবো। তৃতীয়ত আমরা ১লা জানুয়ারি মহাখালী যাবো এবং সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে যথাযথ পদক্ষেপ নেবো। 

জেএন/এমএইচএস

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর