বাম-ডানপন্থি সবাই একত্রে সংগ্রাম করতে হবে : শিশির মনির

জবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ২১:০৪
-678e6607c4073.jpg)
বাম ও ডানপন্থি সবাই একত্রে সংগ্রাম করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির।
সোমবার (২০ জানুয়ারি) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারডিসিপ্লিনারি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কনসোর্টিয়ামের (আইআরডিসি) আয়োজনে ‘নাগরিক দায়িত্ব ও আইনের শাসন’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ মন্তব্য করেন।
অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, ‘বামপন্থী-ডানপন্থী সবাইকে একত্রে সংগ্রাম করতে হবে। একসময় তারাই বলবে আমরা দেশের জন্য লড়েছিলাম।‘
তিনি বলেন, ‘দেশের অর্থনীতি ও নির্বাচন কমিশন ঠিক করতে হবে। অর্থপাচার হয়েছে, দুর্নীতি দমন কমিশন কাজ করে না, এমনকি সচিবালয় ফাংশন করে না, প্রকৃত গণতন্ত্র নেই। এগুলোই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এই সংকটে কাঠামোগত পরিবর্তন করে, যোগ্য ব্যক্তিকে যোগ্য স্থানে বসাতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আসা সংস্কার প্রস্তাবনা কার্যকরের মাধ্যমে নিউ মডেলের বাংলাদেশ গঠন করা সম্ভব হবে। যেকোনো দেশের জন্য আইনের শাসন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হলে গণতন্ত্রের গতি বৃদ্ধি পায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আইনের শাসনে বিশ্বাস করলে রাষ্ট্রে অনৈতিক কর্মকাণ্ড রোধ করা সম্ভব। ‘জনগণের ক্ষমতাই সবচেয়ে বড়'- আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য এ সত্য মেনে নিতে হবে।’
শিশির মনির আরও বলেন, ‘সরকারকে আইনের শাসনে পরিচালিত করতে হলে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন প্রয়োজন। জনগণ সচেতন না হলে আবারও অনৈতিক সরকারের অভ্যুত্থান ঘটতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘একজন শিক্ষককে যাচাই করবে ছাত্ররা। শিক্ষকদের চ্যালেঞ্জ করার মতো ছাত্র যেখানে থাকবে, সেখানে শিক্ষকরা অধিকতর সচেতন হবে। শিক্ষক-ছাত্র, আইনজীবী সবাই সবাইকে প্রশ্ন করতে হবে। আইনের ঊর্ধ্বে কেউ না।’
আইনজীবী শিশির মনির বলেন, ‘কর্তৃত্ববাদী সরকারের বিপক্ষে যদি ছাত্ররা না দাঁড়াতেন, তাহলে আমরা এখন যা করছি, কেউ তা করতে পারতাম না। তাহলে বোঝেন, সিটিজেনে ক্ষমতা টা কোথায়?’
প্যানেল আলোচনায় ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. রইছ উদ্দীন বলেন, ‘নাগরিকের মধ্যে নৈতিকতা না থাকায় আইনের প্রতিফলন সমাজে আসেনি। আল্লাহ আমাদের সর্বোত্তম জাতি হিসেব তৈরি করেছেন, কিন্তু আমাদের যে দায়িত্ব সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ সেটা আমরা করতে পারিনি, সে জন্যই সমাজে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘দীর্ঘ ১৫/১৬ বছর ফ্যাসিবাদকে প্রতিরোধ করা সম্ভব হতো, যদি আমরা সঠিকভাবে প্রতিবাদ করতাম। আইনের বাস্তব প্রয়োগ না হওয়ার কারণে আমাদের নাগরিক দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারিনি।’
আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. আসাদুজ্জামান সাদী বলেন, ‘এত বছর আইন প্রয়োগ করা হলেও মূলত দেশে সঠিক আইন ছিল না। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন মানবাধিকার ক্ষুণ্ন করেছে, যা রাষ্ট্রের আইনি কাঠামোকে দুর্বল করেছে।’
সাদী বলেন, ‘প্রতিটি দেশের আইন হবে সেদেশের কালচার অনুযায়ী, আমাদের দেশ গণতান্ত্রিক হলেও সঠিক নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার জরুরি। আর এ জন্য সংবিধান সংশোধন করা আবশ্যক। নাগরিক হিসেবে আমাদের দায়িত্ব বর্তমান সরকারকে সংস্কারে সহযোগিতা করে দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করা।’
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মেজবাহ উল আজম সওদাগর বলেন, ‘আইনের শাসন না থাকলে ব্যক্তিগত যোগ্যতা ও অযোগ্যতার ওপর সবকিছু নির্ভর করে। আমাদেরকে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো শক্তিশালী করতে হবে, ব্যক্তি ক্ষমতা কমাতে হবে। তাহলেই আমরা এগিয়ে যেতে পারব।’
জান্নাতুন নাইম/এমজে