বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজে শিক্ষক সমিতির কাউকেত সম্পৃক্ত না করার দাবি
![Icon](https://www.bangladesherkhabor.net/uploads/settings/ezgif-7-c58f72a6c2icon-2-1730277221.png)
ঢাবি প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৫:০০
![বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজে শিক্ষক সমিতির কাউকেত সম্পৃক্ত না করার দাবি](https://www.bangladesherkhabor.net/uploads/news_photos/2025/02/02/Misbah-Jamil--(42)-679f342916456.jpg)
অমর একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের আয়োজনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো কার্যক্রমে শিক্ষক সমিতির কাউকে সম্পৃক্ত না করার দাবি জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বিএনপি-জামাত সমর্থিত শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল।
রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) সংগঠনের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান, যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. আব্দুস সালাম ও অধ্যাপক ড. মো. আবুল কালাম সরকার স্বাক্ষরিত ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খানকে দেওয়া এক স্মারকলিপিতে এ দাবি জানান।
স্মারকলিপিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের বিরোধিতা এবং ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের অনুগত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন শিক্ষক সমিতি এখনো নিজেদের বৈধ সমিতি হিসেবে দাবি করে গত ২৫ জানুয়ারি আপনার বরাবরে প্রেরিত পত্রের প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। আমরা শিক্ষক সমিতির নামে দেওয়া এই পত্রের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করছি।’
তারা বলেন, ‘২০২৪ সালের শিক্ষক সমিতি নির্বাচনে নীল দল ছাড়া অন্য কোনো দল ও প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করায় নীল দলের প্যানেলকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। গত ২০২৪-এর জুলাই-আগস্টে পরিচালিত ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের সময় বিরোধী অবস্থান ও স্বৈরশাসকের পক্ষে নির্লজ্জ ভূমিকা পালনের জন্য গত আগস্ট মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাদা দল সমর্থক শিক্ষকবৃন্দ বিনাভোটে নির্বাচিত তৎকালীন শিক্ষক সমিতিকে প্রত্যাখ্যান করে।’
তারা আরও বলেন, ‘স্বৈরশাসক খুনি শেখ হাসিনার সরকারের পতন ও দেশ ছেড়ে পলায়নের ঠিক দুদিন আগে গণভবনে উপস্থিত হয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সমর্থন এবং ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় সাদা দল তৎকালীন শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দের বিচার দাবি করে। শিক্ষক সমিতির এই গণবিরোধী ভূমিকার জন্য ইতোমধ্যেই সংগঠনটি একটি গণধিকৃত সংগঠনে পরিণত হয়েছে। দেশের বিবেকবান অনেক ব্যক্তিও ইতোমধ্যে তাদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করছে।’
নেতারা বলেন, আমরা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় উল্লেখ করতে চাই যে, শিক্ষক সমিতির নামে দেওয়া পত্রে ২০০৭ সালের যে দৃষ্টান্ত উল্লেখ করা হয়েছে তা দেখিয়ে ফ্যাসিস্টের দোসর এই শিক্ষক সমতিকে বৈধ শিক্ষক সমিতি হিসেবে দাবি করার কোনো সুযোগ নেই। কারণ সেই সময় শিক্ষক সমিতির দায়িত্ব চলমান রাখা হয়েছিল শিক্ষকদের সর্বসম্মত সমর্থনের ভিত্তিতে। তা ছাড়া সে সময়কার শিক্ষক সমিতির অগণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে বীরোচিত ভূমিকা কেবল শিক্ষক সমাজের কাছেই নয়, গোটা জাতির কাছে ছিল প্রশংসনীয়। কিন্তু বৈধ শিক্ষক সমিতি হিসেবে দাবিদার তথাকথিত এই শিক্ষক সমিতি ইতোমধ্যেই শিক্ষকগণ কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত ও দেশবাসী কর্তৃক নিন্দিত হয়েছে।
শিক্ষক সমিতির শাস্তি ও অমর একুশের আয়োজনে শিক্ষক সমিতিকে সম্পৃক্ত না করার দাবি করে তারা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমাজের মর্যাদাহানি এবং ঐতিহ্যকে ভুলণ্ঠনকারী ফ্যাসিস্টের দোসর এই শিক্ষক সমিতির নেতৃত্বের দাবিকে আমরা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি। একই সাথে শিক্ষক সমিতির পরিচয় ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকার জোর দাবী জানাচ্ছি।
তারা বলেন, তাদের (শিক্ষক সমিতি) গণবিরোধী ভূমিকা ও গণহত্যাকারী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার প্রতি অব্যাহত সমর্থনের জন্য তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আপনার নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি। একই সাথে অমর একুশের আয়োজন উদযাপনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো কার্যক্রমে শিক্ষক সমিতির নামে কাউকে সম্পৃক্ত না করার দাবি পূণর্ব্যক্ত করছি।’
এর আগে, গত ২৫ জানুয়ারি অমর একুশের কাযর্ক্রমে শিক্ষক সমিতিকে সম্পৃক্ত করার দাবি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খানকে স্মারকলিপি প্রদান করে ঢাবি শিক্ষক সমিতি। সেখানে শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ বলেন, মহান একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের ক্ষেত্রে ঐতিহ্যগতভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রধান সমন্বয়ক এবং শিক্ষক সমিতির সহসভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক যুগ্ম সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করে আসছে।
‘কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, মহান ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ পালনের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে আপনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিকে বাদ দিয়ে আপনার কার্যক্রম শুরু করেছেন। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের চুয়ান্ন বছরের ইতিহাসে এ ধরনের ঘটনা কখনই ঘটেনি। আমরা এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাথে সমন্বয় সাধন করে মহান মাতৃভাষা দিবস পালনের কর্মসূচি গ্রহণের জোর দাবি জানাচ্ছি।’
মোহাইমিনুল ইসলাম/এমজে