উত্তরার আমির কমপ্লেক্স
সমিতির দ্বন্দ্বে ঈদের বেচা-বিক্রি নিয়ে শঙ্কায় ব্যবসায়ীরা

বাংলাদেশের প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১ মার্চ ২০২৫, ১৫:১৭

রাজধানীর উত্তরার আজমপুরে অবস্থিত আমির কমপ্লেক্সে ব্যবসায়ীদের সংগঠন ‘আমির কমপ্লেক্স বণিক সমিতি’ নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে সাধারণ ব্যবসায়ীদের মধ্যে চরম অস্বস্তি বিরাজ করছে। ঈদকে সামনে রেখে ব্যবসায়িক পরিবেশ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কাও করছেন দোকানিরা।
জানা যায়, মার্কেট বণিক সমিতির ২০২৩-২৪ কার্যনির্বাহী কমিটির মেয়াদ গত বছরের জুনে শেষ হলেও, উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টর ইউনিট আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুস সোবহান দলীয় প্রভাব খাটিয়ে সভাপতির পদ ধরে রাখেন। তবে, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর উত্তরায় ছাত্র-জনতার উপর হামলার ঘটনায় দায়ের হওয়া হত্যা মামলায় (মামলা নং-২৬/৩৩০) নাম আসায় গত ডিসেম্বরে তিনি পিছু হটেন।
এরপর, গোলাম মাওলাকে আহ্বায়ক ও হাবিবুর রহমানকে সদস্য সচিব করে ৯ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে যান তিনি। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, এটি সাধারণ সদস্যদের না জানিয়ে গোপনে গঠিত হয়।
অন্যদিকে, জানুয়ারি মাসে কণ্ঠভোটে মো. ওয়াহিদুজ্জামান সুজনকে সভাপতি ও সুলতান আহমেদকে সাধারণ সম্পাদক করে ২১ সদস্যের নতুন কমিটি নির্বাচিত হয়। ফলে মার্কেট পরিচালনা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব আরও তীব্র হয়।
মার্কেটের ব্যবসায়ীরা জানান, আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব তোসাদ্দেক আহম্মেদ খান কিরণ আওয়ামী লীগের সক্রিয় কর্মী ও আব্দুস সোবহানের ঘনিষ্ঠ অনুসারী। অতীতে তারা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে ব্যবসায়ীদের জোরপূর্বক অংশগ্রহণ করিয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
একজন স্বর্ণ ব্যবসায়ী শাহ আলম বলেন, আমরা সাধারণ ব্যবসায়ী। সামনে ঈদ, এই সময় যদি কমিটির লোকেরা দ্বন্দ্বে জড়ায়, তাহলে আমাদের ব্যবসার ক্ষতি হবে।
তৃতীয় তলার এক কাপড় ব্যবসায়ী বলেন, ২৫ জানুয়ারি কণ্ঠভোটে নির্বাচিত কমিটিকে না মেনে একটা পক্ষ অপপ্রচার চালাচ্ছে। এতে ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হচ্ছে।
মার্কেট বণিক সমিতির সাবেক নির্বাচন কমিশনার আনোয়ার হোসেন ওটু বলেন, আগের কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও তারা নির্বাচন না দিয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আহ্বায়ক কমিটি রেখে দিয়েছে। এখন একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনই পারে সমস্যার সমাধান করতে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আব্দুস সোবহান বলেন, আমাকে সামাজিকভাবে হেয় করার জন্য এসব করা হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা আমাকে মানছিল না, তাই আমি পদত্যাগ করেছি।
তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় থাকার বিষয়টি অস্বীকার করলেও, শেখ মুজিবের মাজার জিয়ারত ও ছাত্র হত্যা মামলার আসামিদের সঙ্গে সখ্যতার বিষয়ে প্রশ্ন করলে কোনো জবাব দেননি।
এদিকে, আহ্বায়ক কমিটির বৈধতা নিয়ে মার্কেটের প্রশাসনিক পরিচালক নজরুল ইসলাম বলেন, গঠনতন্ত্রে এডহক কমিটির কোনো বিধান নেই। আগের কমিটি জটিলতা সৃষ্টি করে গেছে, সমাধান না হলে ব্যবসায়ীদেরই ক্ষতি হবে।
মার্কেটের বর্তমান অস্থিরতার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশ উত্তরা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার আহাম্মদ আলী বলেন, বিষয়টি আমরা জানি। তবে কেউ হত্যা মামলার আসামি কিনা, তা যাচাই করে দেখব। যদি কেউ আসামি হয়, তাকে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ব্যবসায়ীদের দাবি, যথাযথ কর্তৃপক্ষ দ্রুত নির্বাচন ঘোষণা করলেই এই অস্থিরতার সমাপ্তি হবে। অন্যথায় ঈদের বাজারের মধ্যে এই দ্বন্দ্ব আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।
এমএএস/ওএফ