‘চোর সরদারের’ দুই চোখ উপড়ে ফেললেন গ্রামবাসী

মাল্টিমিডিয়া করেসপন্ডেন্ট, চরফ্যাশন (ভোলা)
প্রকাশ: ০৩ মার্চ ২০২৫, ১২:৫৬

ভোলার চরফ্যাশনে নজরুল নগর ইউনিয়নের শাহাজাহান মিন্টিজ (৪০) নামের এক চোর সরদারের দুই চোখ উপড়ে ফেলেছে গ্রামবাসী। তবে চোরচক্রের সরদার মিন্টিজের স্ত্রী ফাতেমা বেগম দাবি করেন, সন্দেহজনকভাবে স্বামীকে তুলে নিয়ে মারধরের করে হাত-পা ভেঙে দুই চোখ তুলে দেন মাঝের চর ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা লোকমান হোসেনের ছেলে মো. সাকিবসহ তার দলবল।
রোববার (২ মার্চ) সকালে দক্ষিণ আইচা থানার নজরুল নগর ইউনিয়নের চর আর কলমী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। পরে আহত অবস্থায় স্থানীয় গ্রামপুলিশরা তাকে উদ্ধার করে দুপুরে চরফ্যাশন হাসপাতালে ভর্তি করেন। আহত চোর সরদার শাহাজাহান মিন্টিজ ওই ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ‘ছিডু চোরের’ ছেলে। কয়েক বছর আগে জেলে থাকা অবস্থায় তার বাবা ছিডু মারা যান।
স্থানীয়রা জানান, চোরচক্রের সরদার মিন্টিজের পুর্বপুরুষ থেকে সবাই চুরি-ডাকাতিতে জড়িত ছিলেন। তার বাবা ছিডুও একজন পেশাদার চোর ছিলেন। মিন্টিজ ভোলা জেলার গোটা দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের মতো অপরাধে জড়িত। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় অসংখ্য চুরি, ডাকাতি ও খুনের অসংখ্য মামলা রয়েছে।
স্থানীয়রা আরও জানান, সম্প্রতি উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের একাধিক বাড়িতে চুরি সংঘটিত হয়। রোববার সকালে মিন্টিজকে চর আরকলমী গ্রামের নিজের বাড়িতে স্থানীয়রা দেখতে পেয়ে ধাওয়া করেন। পরে জাহাঙ্গীর ফরাজির বাড়ি থেকে আটক করেন। পরে ওই গ্রামের বারেক ফরাজীর বাড়ির পুকুর পাড়ে নিয়ে পিটিয়ে হাত-পা ভেঙে দেয় এবং দু’টি চোখ তুলে দিয়ে পুকুরের পাড়ে ফেলে রেখে যায়। পরে খবর পেয়ে ওই গ্রামপুলিশ মো. সোরহাব হোসেনসহ তাকে উদ্ধার করে তাকে চরফ্যাশন হাসপাতালে পাঠান।
চরফ্যাশন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মিন্টিজের পাশে অবস্থান করছেন তার স্ত্রী ফাতেমা বেগম। রোববার দুপুরে ফাতেমা বেগম জানান, স্থানীয় একটি মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা লোকমান হোসেনের ছেলে সাকিবের নেতৃত্বে লোকজন বাড়ি থেকে ধাওয়া করে। ধাওয়ার মুখে ঘর ছেড়ে পালিয়ে যান মিন্টিজ। সাথে সাথে তিনিও যান। লোকজন ধাওয়া করে মিন্টিজকে জাহাঙ্গীর ফরাজির বাড়ি থেকে আটক করেন। পরে বারেক ফরাজির বাড়ির পুকুর পাড়ে নিয়ে পিটিয়ে হাত-পা ভেঙে দেন। চাকু দিয়ে খুটিয়ে চোখ তুলে দেন। ঘটনাস্থলে তিনি উপস্থিত থাকলেও ভয়ে নিজের পরিচয় দিতে পারেননি।
স্থানীয়রা অভিযোগ, মিন্টিজ চুরি ডাকাতি ছিনতাইসহ নানান অপরাধে জড়িত। তার বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা থাকলেও সে কোনোকিছুকেই কেয়ার করেনি। গ্রামের মানুষ ভয়ে আতঙ্কে কখনোই তার সামনে যাওয়ার সাহস পায়নি।
ছাত্রদল নেতা মো. সাকিব তার নেতৃত্বে চোখ তুলে দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘মিন্টিজ পেশাদার চোর। চোরচক্রের সরদার। স্থানীয়রা তাকে দেখতে পেয়ে ধাওয়া করে গণধোলাই দিয়ে চোখ তুলে দিয়েছেন বলে শুনেছি।’
চরফ্যাশন হাসপাতালে জরুরি বিভাগে উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার মো. রিয়াজ উদ্দিন জানান, মিন্টিজ নামের ওই ব্যাক্তিকে হাত-পা ভেঙে চোখ তুলে ফেলা হয়েছে। তার চরফ্যাশন হাসপাতালে নিয়ে এলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা পাঠানো হয়েছে।
দক্ষিণ আইচা থানার অফিসার ইন-চার্জ এরশাদুল হক ভুইয়া বলেন, স্থানীয়রা মিন্টিজকে আটক করে গণধোলাই দিয়ে দুই চোখ তুলে দিয়েছেন বলে শুনেছি। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। তাকে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এমজে