গড়াই নদীতে ভাসছে ৪ কুমির, আতঙ্কে নদীপাড়ের মানুষ

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৫ মার্চ ২০২৫, ১২:০৮

ছবি : বাংলাদেশের খবর
ঝিনাইদহ, রাজবাড়ি, কুষ্টিয়া ও মাগুরা জেলার সীমান্ত দিয়ে বয়ে যাওয়া গড়াই নদীতে গত দেড় মাস ধরে একাধিক কুমিরের বিচরণ দেখা যাচ্ছে। যার ফলে স্থানীয় জেলে ও নদীপাড়ের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসী জানাচ্ছে, নদীতে গোসল বা অন্যান্য কাজ করতে কেউ সাহস পাচ্ছেন না। কারণ কুমিরের উপস্থিতি দেখে সবাই ভীত।
ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার হাকিমপুর ইউনিয়নের খুলুমবাড়িয়া ও রাজবাড়ি জেলার পাংশা উপজেলার কেসবামাজাইল ইউনিয়নের কেওয়াগ্রাম ঘাট এলাকায় প্রায় দেড় মাস ধরে কুমিরের উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, গড়াই নদীতে একটি বড় আকারের কুমির ও তার সঙ্গে তিনটি বাচ্চা কুমিরের উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে। বড় কুমিরটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৭-৮ হাত। যার ফলে নদীপাড়ের মানুষ ও জেলেরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। কুমিরের উপস্থিতিতে গোসল, মাছ ধরা বা নদীতে কোনো কাজ করা যেন অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় তরুণরা জানান, রোববার তারা ড্রোন উড়িয়ে বড় একটি কুমিরের ছবি ধারণ করেছেন, যা এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গেছে। নদী পাড়ে প্রতিদিন শত শত মানুষ কুমির দেখতে ভিড় জমাচ্ছে। অনেকেই নদীর দিকে তাকিয়ে বসে থাকেন, যেন কুমির আবার ভেসে উঠে।
খুলুমবাড়ি ঘাট এলাকার আদিবাসী সম্প্রদায়ের জিতেন বিশ্বাস জানান, পানি স্তর নিচে নেমে যাওয়ার কারণে গড়াই নদীই তাদের প্রধান পানির উৎস। কিন্তু কুমিরের চলাচল তাদের জন্য উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কেওয়াগ্রাম এলাকার ষাটোর্ধ্ব বাসিন্দা রমজান মন্ডল বলেন, ৪০ বছর আগে গড়াই নদীতে অনেক কুমির দেখা যেত। কিন্তু এরমাঝে একদম দেখা মেলেনি। তবে গত দেড় মাস ধরে নদীতে নতুন কুমির দেখা যাচ্ছে।
খেয়াঘাটের মাঝি চম্বক কুমার দাস জানান, স্থানীয় প্রশাসন যদি কুমিরগুলো উদ্ধার করতে না পারে, তবে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
ঝিনাইদহ বন বিভাগের জোনাল অফিসার খোন্দকার গিয়াস উদ্দীন মুকুল জানান, গড়াই নদীতে কুমির দেখার খবরটি তাদের কাছে পৌঁছেছে। এটি পরিবেশের জন্য একটি ইতিবাচক খবর। কুমির থাকার মানে হলো নদীতে মাছ ও জীববৈচিত্র্য বৃদ্ধি পাবে, যা আগে ছিল। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, নদী তার পুরনো রূপে ফিরে আসবে।
শৈলকুপা উপজেলা নির্বাহী অফিসার স্নিগ্ধা দাস জানান, কুমির দেখা যাওয়ার খবর পাওয়ার পর ইউনিয়ন পর্যায়ে সতর্কতা মূলক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের গভীর পানিতে না যাওয়ার জন্য সতর্ক করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, যতদিন কুমির দেখা যাবে, ততদিন সবার সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কুমিরগুলোকে সরিয়ে দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই। তবে প্রয়োজন হলে নদী পাড় এলাকায় গ্রাম পুলিশ মোতায়েন করা হবে।
এম বুরহান উদ্দীন/এমবি