
ছবি : বাংলাদেশের খবর
মানিকগঞ্জ জেলার সাতটি উপজেলাতেই রাতের আঁধারে চলছে অবৈধ মাটি ব্যবসা। দুই ফসলি কিংবা তিন ফসলি কোনো শ্রেণির মাটিই বাদ যাচ্ছে না উত্তোলন ও বিক্রিতে। এতে আশেপাশের ফসলি জমি, রাস্তাঘাট ও জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
জেলা সদরসহ ঘিওর, শিবালয়, সাটুরিয়া, হরিরামপুর ও সিংগাইর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে চলছে অবৈধ মাটি উত্তোলন। বিশেষ করে বেতিলা-মিতরা, পুটাইল, ভাড়ারিয়া, হাটিপাড়া, কৃষ্ণপুর ও আটিগ্রাম ইউনিয়নগুলোর ফসলি জমি থেকে রাতের আঁধারে মাটি কেটে তা বিক্রি করা হচ্ছে।
এ ছাড়া ঘিওর উপজেলার বানিয়াজুরী, সিংজুরী, বালিয়াখোড়া, শিবালয় উপজেলার মহাদেবপুর, শিমুলিয়া, সাটুরিয়া উপজেলার বরাইদ, হরগজ, সাটুরিয়া এবং সিংগাইর উপজেলার চান্দহর, শায়েস্তা, চারিগ্রাম, বলধারা, বায়রা ও তালেবপুরসহ বিভিন্ন এলাকার মাটি উত্তোলন চলছে।
এভাবে অবৈধভাবে মাটি উত্তোলন করায় আশপাশের ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষকরাও। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মাটি উত্তোলনের কারণে রাস্তার অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে। বৃষ্টির সময় রাস্তায় মাটির স্তুপ পড়ে দুর্ঘটনা ঘটছে। তাছাড়া, ধুলাবালির কারণে এলাকাবাসী নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সদর উপজেলার আটিগ্রাম ইউনিয়নের ভগবানপুর, মালুটিয়া এলাকায় তিন ফসলি জমিতে ভেকু দিয়ে মাটি কেটে কেটিসি এবং হাজী ব্রিকসে মাটি সরবরাহ চলছে। এই মাটি ব্যবসা কেন্দ্র করে এলাকায় মারামারির ঘটনাও ঘটছে। অপরদিকে ঘিওর উপজেলার স্ট্রোন ব্রিকসেও চলছে পুরোদমে মাটি সরবরাহ।
সচেতন মহল বলছেন, জেলার প্রায় সব জায়গাতেই এমন মাটি কাটার নজির দেখা মিলছে, যা রাতের আঁধারেই হরিলুট করা হয়।
শাকিল নামের এক পথচারী বলেন, এসব মাটি পরিবহনের কারণে রাস্তাঘাটে অসংখ্য মাটি পড়ে থাকে। তারজন্য দেখা যায় একটু বৃষ্টি হলেই দুর্ঘটনা ঘটে। আবার ধুলোবালির তো বিষয় আছেই।
শিবালয় উপজেলার বৈলতা চকে রিপন নামে এক মাটি ব্যবসায়ী বলেন, আমরা নিজেদের জমিতে মাটি কাটি, কারো কোনো ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে না। মাটি কাটার অনুমতির বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, আপনাকে একটু পর একজন সাংবাদিক ফোন দেবে বলে ফোন কেটে দেন। একইভাবে বেতিলা-মিতরা গ্রামের মাটি ব্যবসায়ী মনির বলেন, ‘আমরা সম্পূর্ণ অবৈধভাবে মাটি কাটছি, আমাদের কোনো অনুমতি লাগে না।’
মাটি হরিলুটের ঘটনায় স্থানীয় বিএনপি নেতাদের নামও সামনে আসছে। সিংগাইর উপজেলার স্থানীয়রা জানান, এসব অবৈধ মাটি উত্তোলন ও বিক্রির সাথে জড়িত রয়েছেন বিএনপি নেতারা। তবে অভিযুক্ত বিএনপি নেতা জালাল বলেছেন, ‘আমি কোনো মাটি কাটছি না, কেউ আমার নাম ভাঙিয়ে এসব করছে।’
এ বিষয়ে মানিকগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আলী জানান, জেলা প্রশাসন নিয়মিতভাবে অবৈধ মাটি উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছে। তিনি আরও জানান, ‘রাতের আঁধারে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে এবং ভবিষ্যতেও এটি চলতে থাকবে।’
আফ্রিদি আহাম্মেদ/এটিআর