চাঁদার জন্য যুবককে আটকে রেখে যুবদল নেতার মারধর

কুমিল্লা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৬ মার্চ ২০২৫, ১৫:৪৩

কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার মৌকরা ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক আব্দুর রহিমের চাঁদার জন্য এক ব্যক্তিকে আটকে রেখে মারধরের ভিডিও সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর রহিম ক্ষিপ্ত হয়ে গোমকোট বাজারে একটি ফার্নিচার দোকানের ব্যবসায়ী জসীমকে বেধড়ক মারধর করেন।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত যুবদল নেতা রহিমকে আটক করেছে নাঙ্গলকোট থানা পুলিশ। রহিমের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও মারধরের অভিযোগে পুলিশ বুধবার রাতে অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে।
বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নাঙ্গলকোট থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম ফজলুল হক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আটককৃত যুবদল নেতা আব্দুর রহিম নাঙ্গলকোট উপজেলার মোড্ডা গ্রামের মৃত ইয়াকুব আলীর ছেলে। তিনি মৌকরা ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সভাপতি ছিলেন। তিনি নাঙ্গলকোটের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল গফুর ভূঁইয়ার অনুসারী বলে জানা গেছে।
জানা যায়, এর আগে চাঁদার জন্য জনৈক ব্যক্তিকে একটি দোকানে আটকে রেখে তার মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে ব্যাপক মারধর করেন ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সভাপতি রহিম। এমন ঘটনার ২ মিনিট ৩৫ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে বিষয়টি সবার নজরে আসে। তবে মারধরের শিকার ওই ব্যক্তির পরিচয় সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি।
ভাইরাল ওই ভিডিওতে যুবদল নেতা আব্দুর রহিমকে একজনের সঙ্গে লাউডস্পিকারে মোবাইলে কথা বলতে শোনা যায়। মোবাইলের অপর পাশের ব্যক্তিকে রহিম বলছেন, ‘আপনি ২০ হাজার টাকা দিবেন।’ এ সময় মোবাইলের অপর প্রান্তে থাকা ব্যক্তি বলে ওঠেন, ‘আপনি তো আমার সঙ্গে চাঁদাবাজি করছেন।’ এর উত্তরে যুবদল নেতা রহিম বলছেন, ‘আপনার সঙ্গে চাঁদাবাজি করল কে? চাঁদাবাজি করলে আপনি কবেই এ এলাকা থেকে আউট হয়ে যেতেন।’ অপর পাশের ব্যক্তি বলেন, ‘চাঁদাবাজি না করলে আমি আমার তরফ থেকে যেটা দেব, আপনাকে সেটা নিতে হবে। আমি কী করি, আপনি চিটাগং (চট্টগ্রাম) শহরে গিয়ে খবর নেন।’
এ সময় যুবদল নেতা রহিম বলেন, ‘আপনি চিটাগং শহরের অনেক বড় নেতা। আমি আপনার কাছে চাঁদা চাইছি? আপনি ৫ হাজার টাকা দিচ্ছেন, আমার এখানে প্রোগ্রামে খরচ করলাম আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা।’ এরপর যুবদল নেতা রহিম অপর ব্যক্তিকে অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন। একপর্যায়ে মোবাইল ফোন রেখে মোবাইলের অপর পাশের ব্যক্তির প্রতিনিধি এক যুবককে ধাক্কাতে ধাক্কাতে একটি দোকানে ঢোকান। সঙ্গের একজনকে বেঁধে রাখতে নির্দেশ দেন এবং পরে তার মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে তাকে বেদম প্রহার করা হয়।
এ ঘটনার দৃশ্য ঘটনাস্থলে থাকা কেউ একজন তার মোবাইল ফোনে রেকর্ড করে রাখেন। পরে তা ফেসবুকে পোস্ট করলে মুহূর্তেই ভিডিওটি ভাইরাল হয়ে যায়।
ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পেছনে গোমকোট বাজারের ফার্নিচার ব্যবসায়ী জসীমের হাত রয়েছে বলে ধারণা করেন যুবদলের নেতা রহিম। বুধবার রাত ৮টার দিকে জসীমের ফার্নিচার দোকানে গিয়ে হামলা করেন রহিম। এ সময় জসীমকে মারধর করেন তিনি। ভাঙচুর চালানো হয় তার ফার্নিচার দোকানে। পরে নাঙ্গলকোট থানায় গিয়ে মারধরের শিকার জসীম বাদী হয়ে লিখিত অভিযোগ দেন। রাতের মধ্যে পুলিশ অভিযান চালিয়ে যুবদল নেতা রহিমকে তার নিজ বাড়ির সামনে থেকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি মৌকরা ইউনিয়ন বিএনপির সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল গফুর ভূঁইয়া। ওই অনুষ্ঠানের নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন ব্যবসায়ী, ঠিকাদারদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করে আসছিলেন যুবদলের নেতা আব্দুর রহিম। ঘটনার অভিযুক্ত যুবদলের নেতা আব্দুর রহিম পুলিশ হেফাজতে থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
নাঙ্গলকোট উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক মনির হোসেন বলেন, রহিমের ভাইরাল ভিডিওটি যুবদলের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে এসেছে। বুধবার রাতে রহিমকে যুবদলের সাধারণ সদস্য পদ থেকেও বহিষ্কার করা হয়েছে।
সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল গফুর ভূঁইয়াকে বেশ কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
নাঙ্গলকোট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম ফজলুল হক বলেন, জসীম উদ্দিন নামের একজনের লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে আটক করা হয়েছে। তাকে আদালতে তোলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
সোহাইবুল ইসলাম সোহাগ/এমবি