চিত্রা নদীতে জরাজীর্ণ কাঠের পুল, ঝুঁকি নিয়ে পারাপার

বাগেরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৭ মার্চ ২০২৫, ১৭:৫২

ব্রিজ না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে কাঠের পুল দিয়েই যাতায়াত করছেন অন্তত ১০ গ্রামের মানুষ | ছবি : বাংলাদেশের খবর
বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার মূলঘর ইউনিয়নের চিত্রা নদীর ওপর নির্মিত কলকলিয়া-মায়েরখালী কাঠের পুলটি দীর্ঘদিন ধরে জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। প্রতিদিন গোয়ালখালী, কাঠালবাড়ি, বানিয়াখালীসহ অন্তত ১০ গ্রামের কয়েক শত মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই পুল দিয়ে পারাপার করছেন। শিক্ষার্থী, বৃদ্ধ,পথচারী—সবার জন্যই এটি যেন এক আতঙ্কের নাম।
স্থানীয়রা জানান, পুলটির পিলারগুলো মরিচা ধরা এবং পাটাতন ফাঁকা-ফোঁকরা হয়ে গেছে। একটু অসাবধান হলেই নদীতে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। বছরের পর বছর প্রতিশ্রুতি মিললেও কাঙ্ক্ষিত সেতু বাস্তবায়ন হয়নি। স্থানীয়রা নিজেদের উদ্যোগে চাঁদা তুলে বারবার সাময়িক সংস্কার করলেও এটি এখন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাইমা আফরিন বলেন, ‘১০ বছর ধরে এই পুল ব্যবহার করছি। আমাদের কাছে এটি এক অভিশাপ। পুলটি একদম কঙ্কালসার হয়ে গেছে। স্কুলে যেতে গিয়ে কয়েকবার নদীতে পড়েছি। সংস্কারের কথা অনেক বছর ধরে শুনছি, কিন্তু বাস্তবে কিছুই হয়নি।’
চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী দিয়া জানায়, ‘একদিন ব্রিজ পার হতে গিয়ে পড়ে গিয়েছিলাম, খুব ব্যথা পেয়েছিলাম। সরকার যেন তাড়াতাড়ি আমাদের ব্রিজটা ঠিক করে দেয়।’
শুধু শিক্ষার্থীরা নয়, অভিভাবকরাও রয়েছেন আতঙ্কে। শিক্ষার্থী নীলিমার মা সুবর্ণা সরকার বলেন, ‘বাচ্চাদের একা স্কুলে পাঠাতে ভয় পাই। বাধ্য হয়ে প্রতিদিন সঙ্গে যেতে হয়। এই ব্রিজ পার হতে নিজেকেই ভয় লাগে, ওরা তো এখনো ছোট। সরকার যেন দ্রুত সেতু নির্মাণ করে আমাদের আতঙ্ক দূর করে।’
বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক গোলকিপার শেখ জিয়া বলেন, ‘ফকিরহাট ও মোল্লাহাট উপজেলার মধ্যে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম এই ব্রিজ। এটি দীর্ঘদিন এভাবে পড়ে থাকায় এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্যও পিছিয়ে পড়েছে। সরকার যেন দ্রুত একটি স্থায়ী সেতুর ব্যবস্থা করে।’
ষাটোর্ধ্ব মৃণাল কান্তি বলেন, ‘এই ব্রিজের জন্য কত শিশুর বাবা-মা তাদের স্কুলে যেতে দেয় না, সেটা দেখার কেউ নেই। অনেক দপ্তরে ঘুরেও এখনো কাঙ্ক্ষিত সেতু পেলাম না। সরকার যেন দ্রুত এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়।’
কলকলিয়া গুরুচরণ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রজীত মজুমদার বলেন, ‘প্রতিদিন শিক্ষার্থীরা ঝুঁকি নিয়ে এই ব্রিজ পার হচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে সেতু পুনর্নির্মাণ না হলে বড় ধরনের প্রাণহানি ঘটতে পারে।’
এ বিষয়ে বাগেরহাট স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শরিফুজ্জামান বলেন, ‘কাঠের পুলের স্থানে ৫৫ মিটার দীর্ঘ আরসিসি সেতু নির্মাণের জন্য নকশা তৈরির কাজ চলছে। প্রয়োজনীয় দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষ হলেই দরপত্র আহ্বান করা হবে।’
শেখ আবু তালেব/এটিআর