Logo

সারাদেশ

নারী দিবস

হাসির হাত ধরেই স্বাবলম্বী উপকূলের ১০ লাখ নারী

Icon

জেলা প্রতিনিধি, বরগুনা

প্রকাশ: ০৯ মার্চ ২০২৫, ০০:১৭

হাসির হাত ধরেই স্বাবলম্বী উপকূলের ১০ লাখ নারী

বরগুনাসহ দেশের উপকূলীয় জনপদের বঞ্চিত, নির্যাতিত নারীদের ভরসার আশ্রয়স্থল হোসনে আরা হাসি। যৌতুক বাল্যবিয়ে কিংবা যৌন হয়রানিসহ নারীর প্রতি যেকোনো সহিংসতার বিরুদ্ধে এবং নারী অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। ব্যক্তিজীবনেও হোসনে আরা হাসি প্রমাণ করেছেন, পরিশ্রম, অধ্যবসায় আর আত্মবিশ্বাস থাকলে যেকোনো নারী দারিদ্র্যের শৃঙ্খল ভেঙে সামনে এগিয়ে যেতে পারে, পৌঁছাতে পারে তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে।

বরগুনার নারী জাগরণের অগ্রদূত হোসনে আরা হাসির জন্ম ১৯৬৪ সালে জেলার এক অজপাড়াগাঁয়। বাল্যবিয়ে-নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে লড়াই করা হাসি নিজেই অপ্রাপ্ত বয়সে বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছিলেন। বাল্যবিয়ের নির্মম পরিণতি হিসেবে একসময় বিবাহ বিচ্ছেদেরও শিকার হতে হয়েছে তাকে। জীবনের সিংহভাগ সময় তাকে কাটাতে হয়েছে একাকী ও অসহায়ত্বের মধ্য দিয়ে। সেই একাকিত্ব আর অসহায়ত্বকে জয় করেছেন তিনি। সবকিছু পেছনে ফেলে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন তিনি।

সমাজে বঞ্চিত অসহায় নারীদের মাঝে হাসির উৎস হয়েই থাকতে ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠা করেন উন্নয়ন সংস্থা ’জাগোনারী’। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই উপকূলীয় অঞ্চলের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে কাজ শুরু করে সংস্থাটি। শিশু অধিকার রক্ষা এবং নারীদের সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে স্বাধীন করার উদ্দেশ্য থেকেই প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। উপকূলীয় সম্প্রদায়ের মৌলিক চাহিদা মেটাতে এবং দুর্যোগ মোকাবিলা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও খাদ্য নিরাপত্তার মাধ্যমে একটি সুসংহত ও উন্নত সমাজ গঠনে অবদান রাখাই জাগোনারীর মূল লক্ষ্য।

জাগোনারীর কার্যক্রম

নারী ক্ষমতায়ন
নারীদের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে জাগোনারী নানা প্রশিক্ষণ, ঋণ ও উপকরণ সহায়তা প্রদান করে। এই কার্যক্রমের ফলে প্রায় ১০ লাখ নারী আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠেছেন।

দুর্যোগ মোকাবিলা
প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় জরুরি সহায়তা, পুনর্গঠন ও পুনরুদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর জীবিকা রক্ষায় প্রতিষ্ঠানটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

নারী স্বাস্থ্য ও শিক্ষা
স্বাস্থ্য সেবা, সচেতনতা বৃদ্ধি এবং শিক্ষা প্রকল্পের মাধ্যমে নারীদের জীবনমান উন্নয়ন ও তাদের অধিকারের ব্যাপারে সমাজকে সচেতন করা হচ্ছে।

খাদ্য নিরাপত্তা
উপকূলীয় অঞ্চলের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং সঠিক পুষ্টি ও খাদ্যের ব্যবস্থা করতে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হচ্ছে।

স্থানীয় সাংস্কৃতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন দুর্বার এর কর্মী মরিয়ম আক্তার বলেন, জাগোনারী ১৯৯৮ সাল থেকে উপকূলীয় অঞ্চলে শিশু অধিকার ও নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে নিবিড় কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। প্রথমদিকে নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও প্রতিষ্ঠানটি ধীরে ধীরে উপকূলের নারীদের জন্য এক বিশ্বস্ত আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছে, যা আজকের দিনে প্রায় ১০ লাখ নারীর ক্ষমতায়ন ও আর্থিক সক্ষমতা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। কিছুদিন আগে জেলার ৩০০ জন স্বেচ্ছাসেবককে চরম সঙ্কটে টিকে থাকতে কমান্ডো ট্রেইনিং দিয়েছে হাসি ম্যামের জাগোনারী। এতে আমিও অংশ নেই। হোসনে আরা হাসি ম্যাম উপকূলের নিপীড়িত নারীদের শেষ ঠিকানা। 

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন দুর্বারের সভাপতি আরিফ হোসেন ফসল বলেন, সংস্থাটির নাম জাগোনারী হলেও তার কর্মকাণ্ড সার্বজনীন। উপকূলের হাজারো শিক্ষিত বেকারদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে হোসনে আরা হাসি আপার সংস্থা জাগোনারী। বিষয়টি আমাদের জন্য ইতিবাচক। জাগোনারীর উন্নয়নমূলক কার্যক্রম উপকূলীয় সম্প্রদায়ের উন্নয়নে এক অনন্য ও যুগান্তকারী প্রভাব ফেলেছে, যা আগামী দিনে আরও ব্যাপক ও টেকসই উন্নয়নের সূচক হিসেবে কাজ করবে। সবার অংশগ্রহণে জাগোনারীর এই জয়যাত্রা অব্যাহত থাকবে বলে আশাকরি।

হোসনে আরা হাসি জাগোনারী প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির দিকনির্দেশনা প্রদান করছেন। তার নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠানটি ক্রমাগত উন্নতি ও সম্প্রসারণের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। প্রথমে বরগুনার জেলার মধ্যে কার্যক্রম শুরু হলেও, আজকের দিনে জাগোনারীর কার্যক্রম ৮ জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। এর ফলে উপকূলীয় অঞ্চলের আরো বিস্তৃত জনগোষ্ঠী এই উদ্যোগের সুফলভোগ করছে।

উপকূলীয় নারী জাগরণের অগ্রদূত ও জাগোনারীর নির্বাহী পরিচালক হোসনে আরা হাসির সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, জাগোনারীর কার্যক্রম শুধুমাত্র নারীদের ক্ষমতায়নের মধ্যেই সীমাবদ্ধ না থেকে, উপকূলীয় সম্প্রদায়ের সামগ্রিক আর্থসামাজিক উন্নয়নে এক অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। প্রতিটি উদ্যোগ ও কর্মসূচির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি সমাজে ন্যায়বিচার ও মানবাধিকারের মূল্যবোধকে প্রবর্তন করছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় কার্যকর প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলছে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করে একটি সমৃদ্ধ ও সুস্থ সমাজ নির্মাণে অবদান রাখছে। সবার সহযোগিতায় আমরা এগিয়ে যেতে চাই আরো বহুদূর।

খান নাঈম/ওএফ

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর