হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী মাটির ঘর

আত্রাই (নওগাঁ) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৯ মার্চ ২০২৫, ১৭:৩৪

নওগাঁর আত্রাইয়ে আধুনিকতার ছোঁয়ায় বিলুপ্তির পথে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী মাটির ঘর। এক সময় গরিবের এসি হিসেবে পরিচিত এসব মাটির ঘর এখন হারিয়ে যেতে বসেছে।
সরেজমিনে আত্রাই উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, পূর্বে যেসব এলাকায় প্রায় শতভাগ মাটির ঘর ছিল, আধুনিককালে এসে তা আর চোখে পড়ছে না।
উপজেলার পতিসর, মনিয়ারী, কয়েড়া, বাঁকা, পালশা, কচুয়া, কাশিয়াবাড়ী, পাঁচুপুর, জয়সাড়া, পৈঁসাওতা, শিমুলকুচি, ইসলামগাঁথী, জগদাশ, মালিপুকুর, শিকারপুর, ভূপাড়া, মহাদীঘি, বেওলা, সাহাগোলা, মির্জাপুর, দীঘা, সিংসাড়া, ব্রজপুর, রসুলপুর, পাইকাড়া, মারিয়া, বান্দাইখাড়া, দমদমা, নওদাপাড়া, মিরাপুর, কালিকাপুর, দাঁড়িয়াগাথী ও ঘোষপাড়াসহ বিভিন্ন গ্রামের অধিকাংশ মাটির ঘর ভেঙে পাকা ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, মাটির ঘরে বসবাসে এক ধরনের শান্তি ছিল। শীত ও গরম উভয় মৌসুমে এই ঘরগুলো ছিল আরামদায়ক। কিন্তু দিন দিন তা হারিয়ে যাচ্ছে।
প্রাচীনকাল থেকে গ্রাম বাংলায় মাটির ঘরের প্রচলন ছিল। এঁটেল মাটি দিয়ে কাদা তৈরি করে দেয়াল গড়ে তোলা হতো, যা শীত-গরমে সুষম তাপমাত্রা ধরে রাখতে সহায়ক ছিল। এসব ঘর তৈরিতে দেড় থেকে দুই মাস পর্যন্ত সময় লাগত, তবে এর স্থায়িত্ব ছিল অনেক বেশি। বন্যা বা ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়া একশত বছরও টিকে যেত এই ঘরগুলো।
বর্তমানে এসব ঘরের স্থান দখল করেছে ইট, সিমেন্ট, বালু ও রডের তৈরি পাকা ঘর। গ্রামবাসীরা মাটির ঘর নির্মাণের পরিবর্তে এখন এককালীন বেশি খরচে পাকা ঘর বানাচ্ছেন। বিশেষত প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি এড়িয়ে যেতে এবং আধুনিক জীবনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে মানুষ পাকা ঘর নির্মাণে আগ্রহী হচ্ছে। ফলে, এখন আর আগের মতো মাটির ঘর দেখা যায় না বললেই চলে।
এদিকে, কিছু পরিবার এখনো তাদের বাপ-দাদার স্মৃতি ধরে রাখতে দু-একটি মাটির ঘর টিকিয়ে রেখেছে। তবে, এমন ঘরগুলোর সংখ্যাও প্রায় শূন্যের কাছাকাছি। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আগামী প্রজন্মের কাছে মাটির ঘর একটি রূপকথার গল্পের মতো হয়ে যেতে পারে।
এমরান মাহমুদ প্রত্যয়/এটিআর