Logo

সারাদেশ

‘বিষ্ঠার খামার’ সরাতে বলায় ব্যবসায়ী বললেন, ‘আমার বউ ভূমি অফিসে আছে’

Icon

কুমিল্লা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১১ মার্চ ২০২৫, ১৪:২৬

‘বিষ্ঠার খামার’ সরাতে বলায় ব্যবসায়ী বললেন, ‘আমার বউ ভূমি অফিসে আছে’

সড়কের পাশে গোবর ও বিষ্ঠা প্রক্রিয়াজাত এবং সংরক্ষণ করছেন কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী। এসব বিষ্ঠার তীব্র দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন মানুষজন। জনবহুল গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার পাশে মুরগির বিষ্ঠা স্তূপ করে পরিবেশ নষ্ট করছেন। সেসব স্থানে দুর্গন্ধযুক্ত মুরগির বিষ্ঠা ও গরুর গোবর দিনের পর দিন পড়ে থাকছে। মুরগির বিষ্ঠার উদ্ভট গন্ধে নাকে-মুখে কাপড় চেপে থাকতে হচ্ছে। এলাকার অনেকে এই দুর্গন্ধের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। তারা প্রশাসনের সহযোগিতা আশা করেছেন।

সোমবার (১০ মার্চ) কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার বারপাড়া ইউনিয়নের রতনপুর বাজার মহাসড়ক ঘেঁষা পিপুলিয়া প্রবেশপথে সড়কের পাশে দেখা যায়, বিষ্ঠাভর্তি বস্তাগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে।

অভিযোগ আছে, সকল নীতিমালা উপেক্ষা করে এলাকার প্রভাবশালী বাবুল নামে এক ব্যক্তি বসতিপূর্ণ এলাকায় বিষ্ঠার ওই ফার্মটি গড়েছেন। এলাকাবাসী দ্রুত দুর্গন্ধযুক্ত বিষ্ঠার খামারটি অপসারণ করে অন্যত্র নেওয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন প্রশাসনের কাছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দুই বছর আগে ইকবাল নামে এক প্রভাবশালী লোক মুরগি বিষ্ঠা ও গরুর গোবরের খামার স্থাপন করেন। বর্তমানে এ খামারে প্রায় আড়াই হাজারের বেশি বস্তা বিষ্ঠা ভর্তি রয়েছে। এসব বিষ্ঠার কারণে এলাকার পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। বিষ্ঠার দুর্গন্ধে খামারের চারদিকে মানুষের বসবাস করা দায় হয়ে পড়েছে। অথচ নীতিমালা অনুযায়ী, একটি মুরগির খামার স্থাপনের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ও প্রাণিসম্পদ কার্যালয় থেকে রেজিস্ট্রেশনভুক্ত হতে হবে। বসতিপূর্ণ এলাকা ও জনগণের ক্ষতি হয়- এমন স্থানে এসব খামার স্থাপন করা যাবে না।

গ্রামের বাসিন্দা আবদুল কুদ্দুস বলেন, আমার বাড়ির পাশেই এ বিষ্ঠার খামার। বিষ্ঠা থেকে সব সময় দুর্গন্ধ ছড়ায়। আশপাশে বসবাস করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।

কলেজ ছাত্র সাইদ আহমেদ বলেন, ‘বসতিপূর্ণ এলাকা থেকে খামারটি সরানোর জন্য গত বছর ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ দিয়েছিল গ্রামবাসী। তিনি ব্যবস্থা নেননি। এখন ইউএনও’র কাছে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। এখন তারা কি পদক্ষেপ নেবে জানি না।

পথচারী সোহেল বলেন, ‘বাবুল মিয়া আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নির্বেগ্নে পরিবেশের ক্ষতি করে খামারের ব্যবসা করছেন। তার খামারের নেই কোনো নিবন্ধন, নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতিপত্রও।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত বাবুল মিয়া বলেন, ‘আরে গুতাইয়া কি পাবেন, আর পাছার কাছেও আসতে পারতেন না। আমার কাছে আইতে হইলে তেরোঘাট পারওইয়া আইতে হইবো! আর বউ লালমাই ভূমি অফিসে চাকুরে। কারও হেডম নাই আর এডি সরাইতে পারব।’

সদর দক্ষিণ প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা. ফারহানা নাসরিন বলেন, ‘আমি বিষয়টি জেনিছি। ভিজিট করে পদক্ষেপ নিচ্ছি। নীতিমালা উপেক্ষা করে খামার স্থাপন করা হলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সদর দক্ষিণ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন বলেন, ‘এসব বিষ্ঠার দুর্গন্ধের কারণে স্বাস্থ্যের ঝুঁকি রয়েছে। আশপাশের মানুষ অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’

এ বিষয়ে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার নির্বাহী অফিসার রুবাইয়া খানম বলেন, ‘জনগণের ক্ষতিকারক কাজ করলে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

কুমিল্লা জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোসাব্বের হোসেন মোহাম্মদ রাজিব বলেন, ‘আগেও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। এটা সরাতে বলা হয়েছিল। যেহেতু তারা এখনো সরায়নি, অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

  • সোহাইবুল ইসলাম সোহাগ/এমজে

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

বিষ্ঠার খামার দুর্গন্ধ পরিবেশ দূষণ

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর