নারায়ণগঞ্জে ৭ বছরের শিশুকে ধর্ষণ, ৫ হাজার টাকায় ধামাচাপার চেষ্টা

রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৪ মার্চ ২০২৫, ১২:১৮
-67d3ca248278b.jpg)
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে চকলেট কিনে দেওয়ার কথা বলে ইব্রাহিম (৫৫) নামে এক কাঁচামাল ব্যবসায়ী ৭ বছরের শিশুকে ধর্ষণ করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) দুপুরে উপজেলার তারাব পৌরসভার রূপসী বাঘবাড়ি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
এরপর রাতে শিশুটির বাবা-মাকে হুমকি দিয়ে পাঁচ হাজার টাকায় বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চালায় একটি পক্ষ। রাত ১১টার দিকে বিষয়টি জানাজানি হলে ইব্রাহিমের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ করে এলাকাবাসী।
অভিযুক্ত ইব্রাহিম সুনামগঞ্জ জেলার বিশ্বম্ভরপুর এলাকার আব্দুল মিয়ার ছেলে। বর্তমানে তারাবো পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান বাবেলের বড় ভাই রুবেলের বাড়িতে ভাড়া থাকেন।
স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, শিশুটির পরিবার রূপসী এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকে। ইব্রাহিম বাঘবাড়ি সেতু এলাকায় কাঁচামালের ব্যবসা করে। দুপুরে শিশুটিকে চকলেট কিনে দেওয়ার কথা বলে তার দোকানে নিয়ে ধর্ষণ করে। এ সময় প্রতিবেশী এক ব্যক্তির স্ত্রী ইব্রাহিমের দোকানে শুঁটকি কিনতে গিয়ে ধর্ষণের বিষয়টি দেখে স্থানীয়দের খবর দেন।
পরে শিশুটি বাবা-মাকে বিষয়টি জানায়। ঘটনা জানাজানি হলে স্থানীয় প্রভাবশালী তানসেন ও তারাব পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসানের বড় ভাই রুবেল হোসেন ও পলিনসহ কয়েকজন মিলে ধর্ষণের ক্ষতিপূরণ বাবদ পাঁচ হাজার টাকা শিশুর পরিবারকে দেবেন বলে আশ্বাস দেন।
রাত ৯টার দিকে এলাকাবাসী বিষয়টি জানতে পেরে রুবেলের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ করে ঘিরে রাখেন। উত্তেজনা বাড়তে দেখে রুবেল ও তানসেন মিলে ইব্রাহিমকে বাড়ি থেকে পালাতে সহযোগিতা করেন। এরপর ইব্রাহিমের বাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ শুরু হয়।
রাত ১১টার দিকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ সার্কেল) মেহেদী ইসলাম, রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লিয়াকত আলী, উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইফুল ইসলাম, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি পূর্বাচল রাজস্ব সার্কেল) ওবায়দুর রহমান সাহেলসহ পুলিশের সদস্যরা ঘটনাস্থলে আসেন।
শিশুটির বাবা বলেন, ‘আমার মেয়ের সাত বছর বয়স। আমি দিনমজুরের কাজ করি। বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে আমি কাজ থেকে এসে শুনতে পারি আমার মেয়েকে ইব্রাহিম ধর্ষণ করেছে। আমি এখানে ভাড়া থাকি। বাড়িওয়ালা তানসেন ও রুবেলসহ কয়েকজন মিলে আমাকে চাপ দিয়ে ৫ হাজার টাকার দিবে বলে বিষয়টি ধামাচাপা দিতে বলেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি মেয়ের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনার বিচার চাই। ইব্রাহিম আমার মেয়েকে এর আগেও বেশ কয়েকবার ধর্ষণ করেছে। বলেছে যদি কাউকে এ কথা বলে তাহলে তাকে হত্যা করবে। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।’
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ সার্কেল) মেহেদী ইসলাম বলেন, ‘ভিকটিমের পরিবারের সাথে কথা বলা হয়েছে। আমরা ঘটনাটা তদন্ত করছি। ফৌজদারি অপরাধের কিছু বিষয় আছে যা কখনোই মীমাংসাযোগ্য না, তার মধ্যে ধর্ষণ বা ধর্ষণের চেষ্টার ঘটনা অন্যতম। যারা মীমাংসার চেষ্টা করেছে তারাও এই অপরাধের সমানভাবে অপরাধী।’
উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘মেয়েটি এখনো সুস্থ রয়েছে। ডাক্তার যেটা বলেছে, পরীক্ষা করার পরে মূলত বলা যাবে শিশুর কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঘটনাটি শোনামাত্রই উপজেলার পুলিশ ম্যাজিস্ট্রেটসহ আমরা অভিযান পরিচালনা করেছি। কিন্তু এখনো পর্যন্ত আমরা কাউকে ধরতে পারিনি। আমরা আশা করছি আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপরাধীদেরকে ধরতে পারব।’
- এন বি আকাশ/এমজে