Logo

সারাদেশ

অভিযোগে চরম অসন্তোষ

বিএডিসির ২ হাজার টন ধান আওয়ামী সিন্ডিকেটের কব্জায়

Icon

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৭ মার্চ ২০২৫, ১৬:৪৩

বিএডিসির ২ হাজার টন ধান আওয়ামী সিন্ডিকেটের কব্জায়

বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি)-এর বিপুল পরিমাণ ধান বীজ এখন আওয়ামী লীগের সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের সিন্ডিকেটের হাতে। অভিযোগ উঠেছে, ফরহাদ হোসেনের পরিবার এবং তার সহযোগীরা বিএডিসির মজুদকৃত দুই হাজার মেট্রিকটন বোরো ধান বীজ কালোবাজারে বিক্রি করেছে, যা সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত করেছে কৃষকদের। 

কুষ্টিয়া ও খুলনা অঞ্চলের বিএডিসি ডিলাররা অভিযোগ করেছেন, তারা নির্ধারিত দরের ধান বীজ উত্তোলন করতে পারছেন না এবং সিন্ডিকেটের চাপে পড়েছেন।

বিএডিসির ডিলারদের মতে, সাবেক মন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের পরিবার, বিশেষত তার স্ত্রী সৈয়দা মোনালিসা এবং ভাই সরফরাজ হোসেন মৃদুল, বর্তমানে বিএডিসির গুদাম এবং বীজ বিতরণ প্রক্রিয়ার ওপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত করেছেন। সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রী এবং তার পরিবার কারাগারে থাকলেও, তাদের সিন্ডিকেটের কার্যক্রম থেমে নেই। এই সিন্ডিকেটের সাথে যোগ দিয়েছেন বিএডিসির কিছু আওয়ামীপন্থী কর্মকর্তা, যারা তাদের অবৈধ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এর ফলে সাধারণ ডিলাররা অসহায় হয়ে পড়েছেন।

সর্বোপরি চুয়াডাঙ্গা গুদাম থেকে ধান বীজ উত্তোলনের বিষয়টি বেশ জটিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, বিএডিসি-র গুদাম থেকে কৃষকদের জন্য নির্ধারিত বীজ উত্তোলন করতে গিয়ে, অনেক ডিলারকে বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। 

চুয়াডাঙ্গার মিল মালিকরা জানিয়েছেন, তারা সিন্ডিকেটের কাছে বিপুল পরিমাণ ধান বিক্রি করেছেন, যা পরবর্তীতে কালোবাজারে চলে গেছে। তাদের অভিযোগ, শামসুর রশিদ দীপু, যাকে সিন্ডিকেটের মূল হোতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, চুয়াডাঙ্গা এলাকায় সমস্ত ধান বীজ সংগ্রহ করেছে এবং তার নিয়ন্ত্রণে রেখেছে।

কুষ্টিয়া জেলা বিএডিসির বীজ ডিলার এসোসিয়েশনের সদস্যরা অভিযোগ করেছেন, তারা ৫ আগস্টের পর থেকে কোনো বীজ উত্তোলন করতে পারেননি। তাদের দাবি, বিএডিসির কিছু কর্মকর্তা এবং ফরহাদ হোসেনের সিন্ডিকেট এই বীজ সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করছে। 

তারা আরও জানিয়েছেন, ঢাকা কৃষি ভবনের কর্মকর্তারা মৌখিকভাবে তাদের এ ব্যাপারে নির্দেশনা দিয়েছেন। ফলে স্থানীয় ডিলাররা নির্ধারিত দরের বীজ পাচ্ছেন না।

ডিলারদের একাংশ জানিয়েছেন, তারা বিএডিসি থেকে বীজ সরবরাহের জন্য মেমো পেয়েও তা উত্তোলন করতে পারেননি। বিশেষত, খুলনা ও কুষ্টিয়া অঞ্চলের ডিলারদের মধ্যে এই অভিযোগটি সবচেয়ে বেশি রয়েছে। তাদের মতে, বিএডিসির কর্মকর্তাদের যোগসাজশে, প্রায় দুই হাজার মেট্রিক টন ধান বীজ কালোবাজারে চলে গেছে, যা কৃষক পর্যায়ে সরবরাহ হওয়া উচিত ছিল।

এই সিন্ডিকেটের প্রভাব বিস্তৃত হয়েছে দেশের বিভিন্ন কৃষি প্রকল্পে। চুয়াডাঙ্গা জেলার কৃষি উন্নয়ন প্রকল্প, বিএডিসির মুজিবনগর সমন্বিত কৃষি প্রকল্প এবং অন্যান্য এলাকার প্রকল্পগুলোতে সিন্ডিকেটের আঙ্গুল রয়েছে। চুক্তিবদ্ধ চাষীরা সরকারের মাধ্যমে নির্ধারিত বীজ পেলেও, প্রকৃত বীজ উৎপাদনকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। 

সূত্র থেকে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গায় বিএডিসির বীজ উৎপাদন কেন্দ্রের অধিকাংশ বীজ সরবরাহ এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চলে গিয়েছে।

বিএডিসির কর্মকর্তারা এই অভিযোগগুলো অস্বীকার করেছেন। তারা দাবি করেছেন, সকল প্রক্রিয়া যথাযথভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে। 

বিএডিসির খুলনা অঞ্চলের উপপরিচালক দীপঙ্কর জানিয়েছেন, তারা সঠিকভাবে ডিলারদের মেমো প্রদান করেছেন এবং এটি তাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। তবে স্থানীয় ডিলাররা জানিয়েছেন, তারা বীজ উত্তোলনে বাধা পাচ্ছেন। এ বিষয়ে তাদের অভিযোগের কোনো সুরাহা মিলছে না।

এদিকে, ঢাকা কৃষি ভবনের অতিরিক্ত মহাব্যবস্থাপক (বীজ বিতরণ) সেলিম হায়দারও মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তবেচ বিষয়টি তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন।

এই সিন্ডিকেটের কার্যক্রম একদিকে যেমন কৃষি খাতের মধ্যে বিপুল প্রভাব ফেলছে, তেমনি স্থানীয় অর্থনীতি এবং কৃষকসমাজের জন্য মারাত্মক পরিণতি বয়ে আনছে। বিএডিসির কর্মকর্তাদের অব্যাহত অসহযোগিতার ফলে কৃষকের স্বার্থ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সরকারের কৃষি উন্নয়ন কার্যক্রমে দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি হতে পারে।

  • আকরামুজ্জামান আরিফ/এমজে

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

বিএনডিসি ধান বীজ আওয়ামী সিন্ডিকেট

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর